প্রতিষ্ঠার ৭২ বছরে পা রেখেছে লোকমুখে প্রচলিত প্রাচ্যের কেমব্রিজখ্যাত বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ছয় যুগে প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠে অনেক জ্ঞানতাপস তৈরি হয়েছে। জরাজীর্ণতা কাটিয়ে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন নানান স্থাপনা। ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবর্তে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আধুনিক প্রজেক্টরে শুরু হয়েছে পাঠদান। তবে উচ্চশিক্ষা, গুণগত গবেষণা বরাদ্দসহ আবাসন সমস্যার মতো নানান সংকট এখনোও রয়ে গেছে। ফলে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, বাহাত্তর বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান চড়াইউতরাই পেরিয়ে এসেছে। আমরা এবার গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এতে শুধু শিক্ষক নন, ছাত্র গবেষকদেরও প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকবে। এবারও গবেষণা বরাদ্দের অপ্রতুলতা রয়েছে। তবে যেটুকু বরাদ্দ আছে তা যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫১ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজেটের মধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ রয়েছে ১৫ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে গবেষণা বরাদ্দ ছিল ১৪ কোটি টাকা। বিগত সময়গুলোতেও গবেষণায় ২ শতাংশের বেশি বরাদ্দ ছিল না। মোট বাজেদের সিংহভাগই ব্যয় হয় বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ।
রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমদ বলেন, অত্যাধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিবেচনায় এখনো এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা আছে। এগুলোর পেছনে নানান কারণও জড়িত। বিশেষ করে ৩৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার প্ল্যাটফর্ম রাকসু ও সিনেট অকার্যকর রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে গবেষণা ও নীতিনির্ধারণ অবদান রাখতে ব্যর্থতা। তবে মোটাদাগে সফলতা হলো-এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে অবহেলিত এ অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ফলে অনেক জ্ঞানীগুণীর তৈরি হয়েছে, যারা দেশ-বিদেশে অবদান রাখছেন।
বিগত কয়েক বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট অনুষদ ছাড়া চারুকলা, কলা, সামাজিকবিজ্ঞান ও ব্যবসা অনুষদে গবেষণা খুবই তুলনামূলক অনেক কম। অধিকাংশ গবেষণা প্রকাশনা সাধারণ জার্নালে প্রকাশিত এবং গবেষণাগুলো সমাজের বাস্তব সমস্যা সমাধানে খুব কম কাজে আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।