রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বরগুনার বিষমুক্ত শুঁটকি যাচ্ছে সারা দেশে

হাসানুর রহমান, বরগুনা

বরগুনার বিষমুক্ত শুঁটকি যাচ্ছে সারা দেশে

বরগুনায় প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে শুঁটকি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দক্ষিণ উপকূলীয় সাগর বেষ্টিত জেলা বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছে পরিবেশবান্ধব ও বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন। বরগুনার পাথরঘাটার খেয়াঘাট সংলগ্ন উত্তর পাড়ে, পদ্মা, রুহিতা এবং চরদুয়ানী আর তালতলী উপজেলার লাউপাড়া, আশারচর এলাকায় সম্মিলিতভাবে পরিবেশ বান্ধব, বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুঁটকি উৎপাদন চলছে। বছরে ৭ মাস সাধারণত শুঁটকি উৎপাদন করা যাবে (নভেম্বর -মে)।

পল্লী কর্মী সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বে-সরকারি উন্নয়ন সংগঠন, সংগঠিত গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচি (সংগ্রাম) দুবছর মেয়াদী শুঁটকি উৎপাদনে উদ্যাক্তা তৈরি ও প্রসারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের শুরুতে বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় ২৯৩ জন ক্ষুদ্র উদ্যাক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সময় আধুনিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি, সংরক্ষণ, ফিস ড্রয়ার ব্যবহার, প্যাকেটজাতকরণ, বিপণন কেন্দ্র স্থাপন, শুঁটকি বাজারজাত করণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তরা শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। এছাড়া বর্জ্যে ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ এবং শুঁটকি উৎপাদনের জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য বিবেচনার মাধ্যমে ক্ষুদ্র এ সকল উদ্যাক্তাদের সহায়তা প্রদান দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাগর থেকে আহরিত সামুদ্রিক মাছ, লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, লাক্ষা, কাঁচকি, গাবের আটি, মধু ফালিসা, কাবিলা, রূপচাঁদা, সাদাপোয়া, কামট, হাঙ্গর, মরমা, বৈরাগী, কোরাল ইত্যাদি তাজা মাছের আঁশ ফেলে, নাড়ি-ভূড়ি ফেলে আংশিক কেটে ড্রেসিং করে বিশুদ্ধ পানিতে ধূয়ে পানি ঝরানোর পর ঝুলিয়ে রাখা হয়। পানি ঝরে যাবার পরে হলুদ এবং মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। পরে পলিথিনে ভরে শুকানোর জন্য বাঁশ দিয়ে ৩-৪ ফুট মাচা তৈরি করে মশারির জ্বাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, যাতে মাছি বা পোকা পড়তে না পারে। এভাবে সনাতন পদ্ধতিতে সূর্যের আলো ও বাতাসের সাহায্যে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। যারা শুঁটকি তৈরিতে সার্বক্ষণিক কাজ করেন, তাদের হাতে গ্লাভস ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে শুঁটকি উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য। শুঁটকি সংরক্ষণে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বা কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে না। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, বিশ্বজিৎ কুমার দে বলেন, খাদ্য তালিকায় শুঁটকি মাছ আমিষের চাহিদা পূরণ করে আসছে। বরগুনা শুঁটকি উৎপাদনে সম্ভবনাময় এলাকা। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বে-সরকারি এই উদ্যোগ সফল করতে মৎস্য বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বে-সরকারি সংগঠন সংগ্রামের সিনিয়র পরিচালক (কর্মসূচি) ইউসুফ হোসেন বলেন, শুঁটকির যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসম্মত আর বিষমুক্ত শুঁটকি বাজারে পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কীটনাশকসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশানো হওয়ায় গুণগত মান যেমন থাকে না, তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থেকে যায়।

সর্বশেষ খবর