ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের আলোচিত সুদ কারবারি বাকেরুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকেরুজ্জামান পৌরসভার কাজীপাড়া গ্রামের মৃত মুছা আলী সর্দ্দারের ছেলে। এ তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, যারা সুদে ব্যবস্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। একে একে সব সুদ কারবারিকে গ্রেফতার হবে। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার অভাবগ্রস্ত মানুষের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও সাদা স্ট্যাম্পের বিনিময়ে চড়া সুদে টাকা দিয়ে আসছেন . বাকেরুজ্জমান। তিনি প্রতি লাখে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ নেন।
এতে কেউ অপারগতা স্বীকার করলে তার নামে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। অনেক সময় আবার নিজেস্ব বাহিনী দিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে থাকেন। এমন ঘটনায় বাকেরুজ্জামানের ভয়ে বাড়িছাড়া রয়েছেন পৌরসভার কাজীপাড়ার সাইদুর রহমান ও তার স্ত্রী মোছা. বিউটি আক্তার, আদর্শপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন, একই এলাকার আবুল কাসেম ও আবুল খায়ের, দুর্গাপুর এলাকার সামাউল বিশ্বাস, ভোমরাডাঙ্গা বায়েজিদ খান ও মসিউর ড্রাইভারসহ অনেকে। ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান জানান, ২০১৩ সালে ব্যবসায়িক কাজের জন্য আমার স্ত্রী মোছা. বিউটি আক্তার স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্প ও তিনটি চেকের পাতা জমা রেখে সুদ কারবারি বাকেরুজ্জামানের কাছ থেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। এ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে ৩১ হাজার টাকা করে সুদ প্রদান করে আসছিলাম। এভাবে ছয় বছরে তাকে সুদের টাকাসহ মোট ২৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা পরিশোধ করি। টাকা পরিশোধ করার পরও বাকেরুজ্জামান গচ্ছিত স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত না দিয়ে আমার কাছে উল্টো আরও টাকা দাবি করে। এ টাকা দিতে আমি অপারগতা স্বীকার করলে আদালতে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর নামে দুটি চেক ডিজনার মামলা করে বাকেরুজ্জামান। হয়রানিমূলক মামলায় জামিনে আমরা মুক্তি পেলেও সুদ কারবারি এলাকার প্রভাবশালীদের দিয়ে আমাদের ওপর হুমকি-ধমকি প্রদান করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কিছুদিন আগে আমার বাবা মারা যান। খবর পেয়ে বাবার দাফনের জন্য বাড়িতে আসি। পরের দিন সন্ধ্যায় বাকেরুজ্জামান তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে ও একপর্যায়ে বলে টাকা না দিলে আমাদের তুলে নিয়ে গিয়ে খুন-জখম করবে। তখন আমাদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা চলে যায়। পরে ওই রাতেই আমরা প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি। আরেক ভুক্তভোগী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মোটরসাইকেলের শো-রুম ছিল। আমি ২০১২ সালে আমার ব্যবসায়িক কাজের জন্য বাকেরুজ্জামানের কাছ থেকে নগদ টাকা প্রয়োজন হলে ব্ল্যাঙ্ক চেকের পাতা জমা রেখে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিই। প্রতি মাসে লাখ প্রতি ৮ হাজার টাকা সুদ দিই তাকে। টাকা নেওয়ার পর থেকে ৫ বছরে আমি সুদসহ মোট ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি। টাকা পরিশোধ করার পরও বাকেরুজ্জামান আমার গচ্ছিত চেক ফেরত না দিয়ে উল্টো আরও টাকা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আমার নামে চেক ডিজঅনার মামলা দেয়। আমি জামিন নেওয়ার পর থেকে বাকেরুজ্জামান তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাকে প্রাাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে তার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসি।