রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার একমাত্র আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাঙাঘর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানি সংকটসহ স্যানিটারি সমস্যা প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে ভূমিহীন ও অসহায় মানুষের বাসস্থান কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বারুগ্রাম এলাকায় সাড়ে ৮ একর খাস জমির ওপর আবাসন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির কাজ করে সেনাবাহিনী। ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর আবাসনের ১৮টি ব্যারাক ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে ১০ জন করে ১৮০টি পরিবারের ঠাঁই হয় আবাসনে।
প্রকল্পের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে দেড় একর আয়তনের একটি পুকুর খনন করা হয়। সেখানের বাসিন্দাদের জন্য ১৬টি টিউবওয়েল ও ১৮টি টয়লেট নির্মাণ করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো ভেঙে গিয়েছে। অনেক ঘরের টিনের ছাদ নষ্ট হয়ে গেছে। চাল দিয়ে পানি পড়ে। আবাসনের ঘরের সামনের রাস্তা বৃষ্টির পানিতে কাদা। ঘরের সঙ্গে লাগানো সিঁড়িগুলো নিচ থেকে সরে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘরের সিঁড়ি ভেঙে রয়েছে। ১৬টি নলকূপের মধ্যে ১২টি নষ্ট। অনেক ঘরে রাখা হয়েছে গরু-ছাগল। টয়লেটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি শিশুদের জন্য প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ঘর ফাঁকা রয়েছে।
আশ্রয়ণের নারী বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘরগুলোতে পরিবার নিয়ে বসবাস করার কোনো উপায় নেই। সব ঘর দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। ঘরগুলোর সামনে সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা হয়ে যায়। একটি মাত্র প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। বিদ্যালয়টি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে যারা বসবাস করছেন তারা বাধ্য হয়েই বসবাস করছেন। আবাসনের বাসিন্দা জোরিনা ও জোৎনা বেগম বলেন, অনেক আগে তাদের স্বামী মারা গিয়েছে। অন্য জায়গায় জমি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিধবা ভাতা দিলেও তাদের ভাগ্যে সেই ভাতা জোটেনি। অনেকবার মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে গিয়েছি। তারা ভাতা না দিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা এখানে আসেনি।
আবাসন প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক সুজন শেখ বলেন, এখানে ১৮০টি পরিবারের মধ্যে ৭০টি পরিবার চলে গিয়েছে। বর্তমানে ১১০টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সব ঘর বসবাসের অনুপযোগী রয়েছে। বছরের পর বছর পার হলেও ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। অনেকেই বাধ্য হয়ে এখানে বসবাস করছেন। সব ঘর দিয়ে বৃষ্টির সময় জল পড়ে। বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। অনেকবার সমস্যাগুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, ডিসির কাছে গিয়েছি। কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আবাসন প্রকল্পের আওতায় থাকা ঘরগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করতে হবে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।