অভাবের তাড়নায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পেশা শিলপাটা তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন শত শত মানুষ। দীর্ঘ সময় এ কাজ করে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন শতাধিক মানুষ। ফুসফুসে সমস্যাসহ অনেকের শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। আক্রান্ত অনেকেই কাজকর্ম ও চিকিৎসা করাতে না পেরে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মৃতের পরিবার, অসুস্থ ব্যক্তি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় বর্তমানে এ পেশা বন্ধ আছে। আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ আদনান জানান, হাতুড়ি পিটিয়ে শিলপাটার কাজ করে ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে অনেকেই এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পেশায় জড়িত অনেকে মারা গেছেন। তিনি বলেন, হাতুড়ি দিয়ে কাজ করার সময় নাক-মুখ দিয়ে পাথরের কণা ও ধুলা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। যা ফুসফুসের ক্ষতি করে। এই রোগকে ডাক্তারি ভাষায় সিলিকোসিস বলা হয়। পাথরের কণা হচ্ছে এক ধরনের কঠিন পদার্থ। যা দীর্ঘ সময় ফুসফুসে জমে থেকে ক্ষতি করে। এক সময় ফুসফুস নষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায়। বেঁচে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তি একটু চলাফেরা করতেই হাঁপিয়ে ওঠা, কাশিসহ তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগেন। আক্কেলপুরের ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, ‘উপজেলার ৩৫টির মতো পরিবার শিলপাটা তৈরির কাজ করতেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় ও পরিবেশ দূষণ হওয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের বুঝিয়ে এই কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ভবিষ্যতে কেউ এ পেশায় জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানা যায়, ১৯৯৫ সালে আক্কেলপুর পৌর এলাকার চক্রপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি করে শিলপাটা তৈরি শুরু করেন। এ শিলপাটা সারা দেশে সরবরাহ করা হতো। বেশি টাকার আশায় এ কাজে যুক্ত হন অসহায় শত শত মানুষ। তাদের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে ব্যবসায়ীরা কাজের জন্য আগেই মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন। ফলে চাইলেও তাদের ফিরে আসার উপায় থাকত না। চক্রপাড়ার সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিন-চার বছর হাতুড়ি-ছেনি দিয়ে শিলপাটার কাজ করেছি। ধুলা নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে ফুসফুস ও কিডনিতে সমস্যা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। উঠতে পারি না। চার বছর ধরে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।’
একই গ্রামের আমেছা বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলে শিলপাটার কাজ করে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। ছেলের শোকে অসুস্থ স্বামীরও মৃত্যু হয়েছে। আমি একা হয়ে গেছি।’ বিথি আক্তার বলেন, ‘এই কাজ করে আমার দুই দেবর ও শ্বশুর মারা গেছে। আমার স্বামী অসুস্থ। অনেক কষ্টে সংসার চলে।’