বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকটে পড়েছেন গোপালগঞ্জ পৌর বাসিন্দারা। পানি শোধনাগারের (প্ল্যান্ট) সক্ষমতা হ্রাস, প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব ও নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন না করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে যে পরিমাণ পানি শোধন করা হচ্ছে তা দিয়ে চাহিদার শতকরা ২৫ ভাগ পূরণ হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা।
গোপালগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এখানে জনসংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪৫০। বর্তমানে পৌর এলাকায় ৯ হাজার ৯০০ পরিবারে পানির সংযোগ আছে। পৌরবাসীর প্রতিদিন পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। চারটি প্ল্যান্টে পানি শোধন করে প্রতিদিন ১৩-১৪ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি : মিলিয়ন লিটার পার ডে) পানি গ্রাহকদের সরবরাহ করতে পারে কর্তৃপক্ষ। যা পৌরসভার গ্রাহকদের চাহিদার শতকরা ২৫ ভাগ। পৌরসভার শিশুবন এলাকায় প্রধান দুটি পানি শোধনাগার রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ২০০০-২০০১ সালে, অন্যটি ২০১৯-২০২০ সালে স্থাপন করে। শুরুতে প্রথম প্ল্যান্টের ঘণ্টায় পানি শোধনের সক্ষমতা ছিল ৫৪০ ঘনমিটার। বর্তমানে পানি শোধনের সক্ষমতা কমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ ঘনমিটার নেমে এসেছে। এ ছাড়া পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি আয়রন রিমুভাল প্ল্যান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতী নদী থেকে ভূপৃষ্ঠের পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এসব প্ল্যান্ট থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি শোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভা সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২৪ সালে প্রধান পানি সরবরাহ প্ল্যান্টের সংস্কারে গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেওয়া হয়। যা পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন লাভ করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া দুই বছর আগে একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ার বর্ণির বাঁওড়ে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে ২০২৪ সালে পৌরসভার এলাকা সম্প্রসারণ করা হয়। আগে পৌর এলাকার সীমানা ছিল ১৩ দশমিক ৮২ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার। শহরের হেমাঙ্গন এলাকার বাসিন্দা মাসুম শেখ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাহিদামতো পানি পান না তারা। মাত্র এক-দুই ঘণ্টার জন্য তারা পানি পান। এই সামান্য পানি দিয়ে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটে না। শহরের সাধন বিশ^াস বলেন, পৌরসভা বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ করতে পারছে না। গোহাটা বটতলা থেকে টিউবওয়েলের পানি এনে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে। নবীনবাগ এলাকার মাহবুবা বেগম বলেন, পৌরসভার পানি না পেলেও প্রতি মাসে পানির বিল দিতে হচ্ছে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পানি) স্বরূপ বোস বলেন, পুরোনো প্ল্যান্টটি ২৪ ঘণ্টা বিরামহীনভাবে পরিচালনা করে পৌর এলাকায় পানির চাহিদার শতকরা ২৫ ভাগ পূরণ সম্ভব হচ্ছে। সংস্কার না করে এভাবে চললে এ প্ল্যান্টও যে কোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘প্রতিদিন নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করা হচ্ছে। এর আগে প্ল্যান্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বর্ধিত এলাকায় নতুন পাইপলাইন সংযোগের লক্ষ্যে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। ডিপিপিটি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’