পঞ্চগড়ের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের অধিবাসীরা কুকুরের আতংকে ভুগছেন। কুকুরের অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। প্রতিদিনই এসব কুকুর দল বেঁধে আক্রমণ করছে গৃহপালিত পশুদের উপর। হাস, মুরগী, ছাগল, ভেরা, গরুর-বাছুরসহ অন্যান্য প্রাণীরাও নিরাপদ নয় তাদের কাছে । জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় গত কয়েক মাস ধরে এসব ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, কুকুরের অত্যাচারে অনেক কৃষকের গোয়াল ঘর শুন্য হয়ে পড়েছে । অনেকেই গরু ছাগল বিক্রী করে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন অবিভাবকহীন এসব কুকুর কোথা থেকে আসে কেউ জানেনা।
গ্রামীণ রাস্তা বা অনাবাদী ক্ষেতে গরু ছাগল ঘাস খাওয়ানোর জন্য বেঁধে রাখে কৃষক । এসময় কুকুরের দল সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করে বসে এসব প্রাণীদের উপর। কামড়ে আহত অথবা নিহত করে চলে যায় তারা । বাড়িতে ঢুকে হাস মুরগীর উপর আক্রমনের ঘটনাও ঘটছে।
বেশকয়েকটি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুকুরের আক্রমনে অন্তত এক হাজার প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এসব গ্রামের ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কেবল সকাল দুপুর এবং সন্ধের আগে আগে কুকুরেরা সংঘবদ্ধভাবে এসব আক্রমন করে। সকাল বেলাতেই বেশী ঘটে এসব আক্রমণ । তবে কুকুরগুলো কোথা থেকে আসে কোথায় চলে যায় এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকেই বলছেন বিভিন্ন মুরগীর ফার্মগুলোর আশে পাশে এসব কুকুরের বাস। ফার্মের ফেলে দেয়া মুরগী খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। ফার্মের মুরগী না পেলে এরা গ্রাম গঞ্জের গৃহপালিত পশুদের উপর আক্রমন করে ।
গত এপ্রিলের শেষ দিকে ভজনপুর ইউনিয়নের গীতালগজ গ্রামের গ্রাম্য ডাক্তার আব্দুল জব্বারের পাঁচটি ছাগলকে কামড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় একদল ককুর। পরে তিনি সব ছাগলগুলোকেই মেরে ফেলেন ।
চলতি মাসের ১০ দিনসহ গত দুই মাসে এই গ্রামটি ও আশে পাশের চারটি গ্রামের ৩০ পরিবারের প্রায় ৫০ টি গৃহপালিত পশুর উপর আক্রমণ করে এসব কুকুর।
আবদুল জব্বার বলেন,‘ এমন ভাবে কুকুরগুলো পশুদের উপর আক্রমণ করছে মনে হয় যেন তারা প্রশিক্ষিত কুকুর।কম করে তিন থেকে পাঁচটি কুকুর প্রাণীটিকে ঘিরে ধরে মুহুর্তেই মেরে ফেলে । লোকজন আসতে না আসতেই তারা চলে যায়।’
চান্দিয়াগছ গ্রামের পাশা মোহাম্মদ জানান, ‘দুই দিন আগত মোর গরুটার বাছুর হইল । সকালে ক্ষেতত বাধে দিছু। দুইপহরত যায়দেখেচু বাছুরটা পড়ে আছে । কাতরাছে । দেখেচু কুকুরের কামড় । বাছুরটাক মারে ফেলানু। মোর ৩ বছরে ছুয়াডা এলাও কান্দেছে বাছুর টার তানে।
৩ নং তেতুঁলিয়া ইউনিয়নের আজিজ নগর গ্রামের তায়েজ আলী জানান, ‘এখন শুধু গ্রামেই নয় শহরের অলি গলি হাইওয়ে রাস্তাতেও কুকুরের আক্রমণ বেড়ে গেছে। গৃহ পালিত পশুদের উপর এরা আক্রমণ করছে। আমার চোখের সামনে মুহুর্তেই কয়েকটি ছাগলকে কামড়ে পালিয়েছে কুকুর । কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা পালিয়ে যায়।’
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের জানানো হলেও কেউ কোন পদক্ষেপ নেননি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, ‘এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ বা তথ্য পাইনি। তবে কার্যকর ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হবে’ ।
বিডি প্রতিদিন/ ১৫ মে, ২০১৬/ হিমেল-১৬