ছাত্রীর অশ্লীল ছবি ফেসবুকে প্রচারের দায়ে ঠাকুরগাঁওয়ে পইদুল ইসলাম নামের এক শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জামালপুর ভগদ গাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন তারা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে একাধিক ব্যানার, পোষ্টার ও ফেস্টুন লাগিয়েছে এলাকাবাসী।
একাধিক স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধারণ করা নগ্ন ভিডিও চিত্র ও ছবির মাধ্যমে পইদুল নিজেই তৈরী করতেন পর্ণগ্রাফী। এরপর তা ছড়িয়ে দিতেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি এলাকাবাসী ও ঐ স্কুলের অভিভাবকদের নজরে আসলে ফুঁসে ওঠেন তারা।
ঐ শিক্ষকের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে সোমবার বিকালে জামালপুর ভগদগাজী এলাকার অভিভাবক ও প্রাপ্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধরা।
এসময় তারা শিক্ষক পইদুলের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে পইদুলসহ ঐ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য লম্পটদের গ্রেফতার করা না হলে আগামীতে একই ব্যানারে সমাবেশসহ বৃহত্তর কর্মসূচীর ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া বক্তারা ঐ শিক্ষককে স্কুল থেকে অব্যাহতিসহ সামাজিকভাবে বয়কটের আহবান জানান। একই সাথে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করেন।
এদিকে সরেজমিনে শিক্ষক পইদুলের নিজ গ্রাম রায়পুর ইউনিয়নের মটরা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ ঘটনায় ঐ গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে এই শিক্ষকের আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে। তারা শিক্ষক পইদুল সহ তার দোসরদের সামাজিকভাবে বয়কট করার এবং তাদের দেখামাত্র গনধোলাই দিয়ে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট সোর্পদ করার আহবান জানান।
অভিযুক্ত শিক্ষক পইদুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৯নং রায়পুর ইউনিয়নের মটরা এলাকার ধনিবুলার ছেলে। সে ভগদগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১১ সালে গণিতের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে। যোগদানের পর থেকেই সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করেন এবং তাদের ব্লাক মেইল করে অবাধে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলে প্রাইভেট পড়ানোর নামে গণিতের ঐ শিক্ষক ঐ স্কুলের একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে এসব শিক্ষার্থীদের গোপন কক্ষে ডেকে নিয়ে অনৈতিক কাজ করেন এবং নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। পরে ঐ ভিডিও দেখিয়ে দীর্ঘদিন ঐসব ছাত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করতে বাধ্য করতেন পইদুল। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে তার সাথে পইদুল মেলামেশার চেষ্টা করলে বিষয়টি টের পায় ওই ছাত্রীর আত্মীয় স্বজন। এর জের ধরে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী পইদুল ইসলামের মোবাইল ফোন থেকে কিছু ছবি বের করে নেয়। পরে সেসব খারাপ ভিডিও এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, পইদুল মেয়েদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করার জন্য এলাকায় একটি প্রাইভেট সেন্টার দিয়ে অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য গোপন ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখতো। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া সুন্দরী ছাত্রী ছিল তার টার্গেট। এই শিক্ষক মেয়েদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে আপত্তিকর দৃশ্যের ছবি তুলে পরে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
সম্প্রতি ওই স্কুলের এক শিক্ষকের মেয়ের সাথে অবৈধ মেলামেশার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির মতামতে ওই ছাত্রীর সাথে বিয়ে দেয়া হয় তাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের জাপটে ধরা, শ্লীতাহানী করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । এদিকে ফাঁস হওয়া ছবিতে স্কুলের একাধিক ছাত্রীর সাথে ঘনিষ্ট অবস্থায় তাকে দেখা গেছে।
ভগদগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি হেমাইনুদ্দিন চৌধুরী জানান, বিষয়টি জানার পরে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারবো না।
ভগদগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত হওয়ার পরে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক পইদুল ইসলামের সাথে মুটোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। কোন অভিভাবক যদি এ ব্যাপারে অভিযোগ করে তাহলে দেশের আইনানুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু বিষয়টি র্স্পশকাতর সেহেতু অভিভাবকরা কোন অভিযোগ না করলেও জননিরাপত্তার অভিযোগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/ ২৪ মে ২০১৬/ হিমেল-১৬