চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাগলা নদী তীরবর্তী তক্তিপুরে গঙ্গাশ্রম ঘাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের গঙ্গাস্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল থেকে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মালম্বীরা এ গঙ্গাস্নান উৎসবে যোগ দিয়েছেন। উৎসব চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এখানে হিন্দু ধর্মালম্বীরা পাপমোচন ও পূর্ণ লাভের আশায় মাক্রি সপ্তমী তিথিতে গঙ্গাস্নানে আসেন।
জনশ্রুতি রয়েছে ধর্মসাধক জাহ্নুমণি এই গঙ্গা নদীতে আত্মবলীদান দিয়েছিলেন। আর সেই থেকে এখানে প্রতিবছর এদিনে পূণ্য গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিন্দুদের মতে, বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র দিন ছিল আজ শুক্রবার। চন্দ্র মাসের তারিখ হিসাবে প্রতি বছর রাজশাহী অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই শিবগঞ্জ উপজেলার তক্তিপুর নামক স্থানে পৌরণিক জাহ্নমুনির আশ্রমের কাছে গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকেন।
বয়বৃদ্ধদের নিকট থেকে জানা যায়, এই গঙ্গাস্নান অধিকাংশ বছরই মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত হয় বলে একে মাঘী বান্নী স্নান বলে। কিন্তু চাঁদের উপর নির্ভর করে কোন কোন বছর ফাল্গুন মাসেও গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরুষ-মহিলারা বাস, মিনিবাস, মাইক্রো, মিশুক, রিক্সাসহ বিভিন্ন প্রকার যানবহন যোগে দূরদূরান্ত থেকে গঙ্গা স্নান অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য পূর্বদিন থেকেই পৌরণিক জাহ্নুমুনির আশ্রমে আসতে শুরু করে।
আজ দুপুর পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের আসা অব্যহত ছিল। সকলে স্থানীয় গঙ্গায়স্নান পর্ব শেষ করে বিভিন্ন ধরণের ভুরি ভোজ করে থাকে। এই ভুরি ভোজের মধ্যে স্থান পায়- মুলত: শিবগঞ্জের বিখ্যাত চমচমসহ অন্যান্য মিষ্টান্ন দ্রব্য, রাজারামপুর ও নসিপুরের দই, রহনপুরের মুড়ি ও চিড়া এবং ভোলাহাটের সাগর কলা। প্রায় মহিলারাই বাড়ি ফেরার সময় নানা ধরনের মাটির পাত্রে সযত্নে গঙ্গার পবিত্র জল নিয়ে যান।
অনুষ্ঠানে আগত ৮২ বছর বয়স্কা কিরণবালা নামে এক বৃদ্ধার কাছ থেকে জানা যায়, সংগৃহীত এ পবিত্র জল সমগ্র বছর বাড়িতে রেখে বিভিন্ন পূজা পার্বনে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলিতে ভোর ৬টা থেকে গঙ্গাস্নান শুরু হলেও এবার ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে গঙ্গাস্নান শুরু হয় সকাল ৮টার পর থেকে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের সমাগম অনেক বেশী। এবারের তত্তিপুরের গঙ্গাস্নানের স্থানটির কিছু অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইরি- বোরো ধান রোপন করায় গঙ্গাস্নানের স্থানটি সংকুচিত হয়েছে। এদিকে গঙ্গাস্নানকে ঘিরে গোটা তক্তিপুর এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
বিডি প্রতিদিন/০৩ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল