‘করোনা উপসর্গে মৃত্যুর লাশ দাফন করেনি পরিবার’, ‘করোনার ভয়ে ঢামেকের সামনে মাকে ফেলে চলে গেলো সন্তান’ ‘সিঁড়িতে পড়ে রয়েছে সংখ্যা লঘুর লাশ দাফন করছে মুসলমান যুবক’। করোনা ভাইরাস, পাল্টে দিয়েছে আমাদের মানবিকতা বোধ, করোনা দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কেউ কারোর নয়। গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে এমন সংবাদ শিরোনাম।
ঠিক এমন বিপর্যয়ের মুহূর্তে ফেনীর পরশুরামে দেখা দিয়েছে ভিন্ন চিত্র। সে চিত্র মানবিকতার। আর এই মানবিকতার সৈনিক ফেনীর পরশুরামের ইয়াসিন শরীফ মজুমদার। স্বজনরা যেখানে মৃতদেহ রেখে পালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে সে ও তার দল জীবনের কথা চিন্তা না করে চেনা পরিচয়হীন মানুষগুলোর লাশ দাফন করে চলেছেন। হয়ে উঠেছেন করোনাকালীন মৃতদেহের স্বজন।
মহামারী করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের ভয়, শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা যেন পিছু ছাড়ছে না। প্রিয়জনের শেষ বিদায়ের দৃশ্য যে কারও হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করে। অসময়ে চলে যাওয়ার ক্ষণে যখন আপন মানুষজন দূরে থাকছেন তখন মৃতদেহের গোসল করানো, কাফন পরানো, জানাজা এবং দাফন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে এক ভয় ডরহীন সৈনিক ইয়াসিন শরীফ ও তার দল।
ইয়াসিন শরীফ মজুমদার আর কেউ নয় সে পরশুরাম উপজেলা যুববলীগের সভাপতি। রাজনীতি করলেও করোনাকালে রাজনীতির পরিচয় ছাপিয়ে স্বেচ্ছাসেবকের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ইতোমধ্যেই।
গত ২০ এপ্রিল তিনি গঠন করেন ‘পরশুরাম উপজেলা করোনা স্বেচ্ছাসেবক টিম’। এক মাস ২০ দিনে দাফন করেছেন ১১টি মৃতদেহ। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ছিলেন পাঁচজন।
ছাত্র-শিক্ষক-ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ও চাকরীজীবী মিলিয়ে ইয়াসিন শরীফের দাফন টিমের সদস্য ৭ জন। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- মুহাম্মাদ আলা উদ্দিন, মনছুর আহাম্মদ, জহিরুল ইসলাম হৃদয়, নাহিদ হায়দার, এনামুল করিম আজাদ, আবুল কালাম।
সকাল-সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাতেও থেমে নেই তারা। ইয়াছিন শরীফ জানান, এই মৃত ব্যক্তিদের দাফনে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন যুগ্ম-সচিবকে দাফন করতে গিয়ে এলাকার মানুষের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে এবং কি গোসল দিতে গিয়ে একটা বালতি পাইনি। এরকম আরও হৃদয় বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ অসহায় অবস্থায় আছে, করোনা রোগীর পাশে কেউই থাকে না, সে মুহূর্তে আমার উপজেলায় করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে কোন ব্যক্তি যাতে গোসল জানাজা দাফনে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা দাফন টিম গঠন করি। এ দুর্যোগকালে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ইয়াসিন শরীফ মজুমদারের দাফন টিমটি ইতোমধ্যেই সারা উপজেলাব্যাপী প্রশংসা যুগিয়েছে। করোনারোগী ও উপসর্গ নিয়ে মৃতব্যক্তিদের দাফনে এ টিমটি উপজেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।
পরশুরাম পৌর মেয়র সাজেল চৌধুরী বলেন, উপজেলায় করোনায় কিংবা করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না। লাশের স্বজন না থাকলেও ইয়াসিন শরীফের দাফন টিম রয়েছে। যারা সব ধরনের নিয়ম মেনে মৃতদেহকে কবরস্থ করছেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত