কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ আবাসন প্রকল্পসহ জনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই বরগুনার আমতলী উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামে চলছে একটি ইটভাটা। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, বিবর্ণ হয়ে পড়েছে প্রকৃতি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন গ্রামবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করে জিমি ব্রিক্সস নামের একটি ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ইটভাটাটি স্থাপনের সময় এলাকাবাসী বাধা প্রদান করলেও রাজনৈতিক প্রভাব ও টাকার কাছে হার মানতে হয় তাদের। মামলা হামলা করে হয়রানি করা হয় সাধারণ গ্রামবাসীকে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে কোন আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করিতে পারিবে না। কিন্তু এখানেই ইটভাটার পাশে রয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। রয়েছে একটি আবাসন প্রকল্প। কমিউিনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভাটা স্থাপন করেছেন আবুল বাশার নয়ন মৃধা। এদিকে ভাটার ধোঁয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার নারী ও শিশুরা ভুগছেন শ্বাসকষ্টে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইটভাটাটির লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে ইট ভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় জমির ফসল থেকে শুরু করে ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। মরে গেছে পুকুরের মাছ, শাক সবজিসহ মাঠের ফসল। ইটভাটার পাশে সরকারি ভাবে নির্মিত একটি আবাসন প্রকল্প থাকলেও সেটি দখল করে বানিয়েছেন গরুর খামার। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা বজলু হাওলাদার বলেন, ইটের ভাটা স্থাপন করার সময় প্রতিবাদ করায় ইটভাটার মালিক নয়ন মৃধা আমার বিরুদ্ধে ১১টি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। যারাই প্রতিবাদ করছে তাদেরকেই বিভিন্ন মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। নয়নের ভয়ে এলাকার অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পায় না।
একই অভিযোগ করেন স্থানীয় তৈয়ব আলী, তপন হাওলাদার, রিপন, মোস্তফা, মোতালেব, জামান, খলিল, মুসাসহ গ্রামবাসী। তাদের দাবি ইটের ভাটা বন্ধ না হলে আগামী ২ বছরের মধ্যে সেকান্দারখালী গ্রামটি মরুভ‚মিতে পরিনত হবে। সেই সাথে কোমলমতি শিশু-কিশোর ও নারীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি নষ্ট হয়ে যাবে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
ইট ভাটার মালিক আবুল বাশার নয়ন মৃধা বলেন, আমি সরকারি নিয়ম নীতি যথাযথভাবে মেনেই ইটভাটা স্থাপন করেছি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমার ইটভাটা বন্ধ করতে চাইছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় পরিবেশ বিপর্যায় হচ্ছে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বজ্রপাতের কারণে ফসল ও গাছের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার যদি মনে করে এলাকার পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে লাইসেন্স বাতিল করে দিবে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনার আমতলী উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামে জিমি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। জনসাধারণের ক্ষতি হয় এমন কোন ঘটনা থাকলে সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল