মা বুলি বেগমের কিডনি দানের মাধ্যমে পিতৃহীন জাহিদ বেঁচে থেকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছেন। বিসিএস ক্যাডার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে সংসারের হাল ধরবেন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে ঢাকার শ্যামলিতেই বোনের বাড়িতে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আরও তিন মাস জাহিদকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
জাহিদের বড় বোন নূরনাহার মুঠোফোনে বলেন, ‘জাহিদকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু জাহিদের অসুস্থতা ধরা পড়ে। তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায়। কিডনি প্রতিস্থাপন করার বিকল্প কিছু ছিল না।’
তিনি জানান, ২০০৪ সালে প্রথমে ১৮ বছর বয়সে এক বোনের ব্লাড ক্যানসারে মৃত্যু হয়। আবার একই বছরের নভেম্বর মাসে ঘুমের মধ্যে জাহিদের বাবার হঠাৎ মৃত্যু হয়। গত বছরের ১৭ অক্টোবর জাহিদ জানতে পারেন তার দুটি কিডনিই কাজ করছে না। এর আগে ২০১৯ সালেও একবার জাহিদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল। তখন রংপুরে চিকিৎসককে দেখেছিলেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে যখন জাহিদের শরীর খারাপ হয়, তখন একেবারে শেষ ধাপ, করার তেমন কিছু ছিল না। ১৫ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জাহিদ। অসুস্থতার মধ্যেই গত বছরের নভেম্বরে জাহিদের অনার্সের ফল প্রকাশ হয়।
জাহিদ কৃতিত্বের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন। স্নাতক পাস করার পর তার পরিবার নতুন করে যখন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল ঠিক তখনই জাহিদের অসুস্থতা ধরা পড়ল। তার সহপাঠীরা যখন মাস্টার্সের জন্য শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছেন তখন জাহিদ জানতে পারলেন তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। কিন্তু কিডনি কে দেবেন, এ নিয়ে পড়তে হয় মহা দুশ্চিন্তায়। প্রথমে জাহিদের মা আর বোন কিডনি দেওয়ার জন্য শরীরের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। শেষ পর্যন্ত নিজের কিডনি দিতে সিদ্ধান্ত দেন জাহিদের মা।
রংপুর ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে (সিকেডি) ভর্তি হন জাহিদ। কিডনি প্রতিস্থাপনের আইনি বিষয় সুরাহার জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ সব প্রক্রিয়া শেষে গত ২২ জানুয়ারি রাতে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের সাত দিনের মাথায় বুলি বেগম হাসপাতাল ছাড়লেও জাহিদ হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ দিনের মাথায়। আগামীকাল রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তার সেলাই কাটার কথা রয়েছে।
কিডনি দানের পর বুলি বেগম বলেন, ‘মায়ের কাছে সন্তানের জীবনই আগে। সন্তানের জীবন বাঁচানো মায়ের জন্য ফরজ।’
বড় বোন নূরনাহার আরও বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে শ্যামলির বাসায় ফেরার পর জাহিদের সঙ্গে যখন মায়ের প্রথম দেখা হলো তখন মায়ের চেহারা দেখে মনে হলো তিনি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা ও ওষুধবাবদ এ পর্যন্ত হাসপাতালে খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকার বেশি।’
নূরনাহার বলেন, ‘এসব টাকা জোগাড়ের জন্য তার ১০ শতাংশ জমি এবং আমাদের পৈতৃক ভিটা কম মূল্যে আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করতে হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘জাহিদকে চিকৎসকরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তার চিকিৎসার জন্য এখনো প্রচুর টাকার প্রয়োজন।’
এদিকে জাহিদের অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশ ও দেশের বাইরের অনেকেই জাহিদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। জাহিদ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নূরনাহার।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ