কালের পরিক্রমায় আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে হালচাষ, ডিজিটালের সু-বাতাস বইছে এবং মানুষ ডিজিটালাইজেশন সুবিধা গুলো পাচ্ছে অনেক সহজেই। সেই অগ্রযাত্রা থেমে নেই কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও। কৃষি ভিত্তিক নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা সেই গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেওয়ার দৃশ্য ১০-১৫ বছর আগেও সব এলাকায় বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেতো শত শত কৃষক লোহার ফালা দিয়ে তৈরি করা ধারালো লাঙ্গল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেধে দিয়ে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙ্গল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাই করা যেতো না। অথচ গরু-লাঙ্গলের সাথে কৃষকের সেই মিতালীর দৃশ্য এখন বিরল। যুগের পরিবর্তনে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। এখন আর কৃষক কাক ডাকা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে জমি চাষ করতে মাঠে যায় না। কৃষক এখন তার সুবিধামত দিনের যে কোন সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ‘ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে। কৃষক এখন ধান কাটা মাড়াই করার হার্ভেষ্টার মেশিন পেয়ে ধানের কোন কাজই আর কৃষকের করতে হযনা। তবে উপজেলার সীমান্ত এলাকায় এখনো গরীব কৃষক সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে কালাকুমা গ্রামের এক গরিব কৃষক মোজাম্মেল হক (৬৫) বলেন, আমার গোয়ালে এক জোড়া গরু আছে। এই গরু লাঙ্গল দিয়ে কখনও সবজি আলু আবার কখনও আবাদি জমি হাল চাষ করি।
ওই গ্রামের আরেক কৃষক হাতেম আলী (৫৫) বলেন, আমার পূর্ব পুরুষের এই লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করতেন। এবংঅর্থের বিনিময়ে চাষ আবাদ করে সংসারে খরচ করতেন। বর্তমানে এই আধুনিক যন্ত্রের কারনে গরুর হালের দিন শেষ হয়ে গেছে। এতে সংসার চালাতে গিয়ে হিম শিম খেতে হয়। তবে গরু মহিষ লাঙ্গলও জোয়াল ছিলো কৃষকের আশীর্বাদ স্বরূপ। গরু মহিষ লাঙ্গলও জোয়াল ছিল আমাদের ঐতিহ্য পরিবেশ বান্ধব কৃষি পদ্বাতি। কিন্ত বর্তমান সময়ে কৃষিতে যান্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার বেশি।আমাদের মাঝ থেকে লাঙ্গল গরু হাল চাষ ছিল আমাদের ঐতিহ্য। তবে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
বিডি প্রতিদিন/এএ