শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কৃষক ও লোভী ইঁদুর

অমিত কুমার কুন্ডু

কৃষক ও লোভী ইঁদুর

অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে থাকত এক কৃষক পরিবার। কৃষকের সুন্দর একটা বাড়ি ছিল। বাড়িতে ছিল গরুর গোয়াল। কবুতরের খোপ। ছাগলের খোঁয়াড় আর ছিল মুরগির খাঁচা। বাড়িতে একটা বিড়াল ছিল, কিন্তু কোনো ইঁদুর ছিল না। এক দিন সেই বাড়িতে একটা নেংটি ইঁদুর এসে থাকা শুরু করল। কৃষক যে ঘরে ঘুমায়, ইঁদুর সে ঘরেই থাকতে শুরু করল। ইঁদুর এলেও বিড়াল টের পেল না। বিড়াল টের পাবে কী করে? তার তো খাওয়ার অভাব নেই। সারা দিন খায় আর লেজ দুলায়, না হয় পা ছড়িয়ে ঘুমায়।

বিড়ালের তাড়া না খেয়ে ইঁদুরটিও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে থাকল। ইঁদুরের চলাফেরায় রোজ রাতে খাটের পাশে ঠুকঠাক শব্দ হয়। এরকম শব্দে এক দিন কৃষকের ঘুম ভেঙে গেল। কৃষক ওঠে টর্র্চ মেরে দেখে একটা নেংটি ইঁদুর খাটের পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কৃষক লাঠি নিয়ে মারতে গেলে ইঁদুরটি ঘরের কোণায় পালিয়ে গেল। এরপর থেকে কৃষক আর কোনো শব্দ পায়নি। ইঁদুর ভয় পেয়ে কৃষকের ঘরে যাওয়া বন্ধ করে দিল। তার পরিবর্তে কৃষকের ছেলের ঘরে থাকতে শুরু করল। এ ঘরটি ফাঁকাই পড়ে থাকে। কৃষকের ছেলে শহরের একটা কলেজে পড়াশোনা করে। মাঝে মধ্যে ছুটিছাঁটা পেলে বাড়ি আসে। বাকি সময় ঘরটা বন্ধই থাকে। প্রতিদিন কৃষকের বউ এসে ঘরটি ঝাট দিয়ে যায়। বিছানার ধুলা ঝেরে দিয়ে যায়। সময় পেলে ঘরটি মুছেও রাখে। এ ঘরে বেশ কিছু আসবাবপত্র আছে। কাপড়ের আলমারিতে ইঁদুরটি ঢুকবার চেষ্টা করেও পারেনি। কয়েক দিন খাটের কোনায়, ড্রেসিং টেবিলের কোনায় থাকার পর হঠাৎ এক দিন বইয়ের আলমারি খোলা পায়। কেউ একজন হয়তো বই নিয়ে আলমারিটি বন্ধ করতে ভুলে গেছে। অথবা কৃষকের বউ আলমারিটি পরিষ্কার করে আলমারির কপাট বন্ধ করতে ভুলে গেছে। ইঁদুর সেই ফাঁকে একলাফে বইয়ের আলমারির মধ্যে ওঠে লুকিয়ে থাকল। সারা দিন ভয়ে ভয়ে থাকার পর রাতে বই কাটতে শুরু করল। কয়েক দিন ধরে অনেক বই কেটে ফেলল ইঁদুরটা।

কয়েক দিন পর কৃষকের ছেলে ছুটিতে বাড়ি এলো। বইয়ের আলমারিতে বই খুঁজতে গিয়ে দেখে কাটা কাগজে আলমারি ভর্তি হয়ে গেছে। সুন্দর সুন্দর বইগুলো ইঁদুরে কেটে কী অবস্থাই না করেছে। ছেলেটি খুব কষ্ট পেল। বইয়ের আলমারি পরিষ্কার করতে শুরু করল। এই ফাঁকে ইঁদুরটি আলমারি থেকে এক লাফে পালিয়ে গেল। কাটা বইয়ের মধ্যে পড়ে রইল তার বাচ্চারা। বই বাইরে এনে পরিষ্কার করার সময় কাটা বইয়ের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এল অনেক ইঁদুরের বাচ্চা।

ইঁদুর এত ক্ষতি করলেও কৃষকের ছেলের ইঁদুরের বাচ্চাগুলোকে দেখে মায়া হলো। মায়া হলে কী হবে, সে ইঁদুরের বাচ্চাগুলোকে বাঁচাতে পারল না। মা হারা হয়ে বাচ্চাগুলো কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা গেল।

বাচ্চা হারানোর পরও ইঁদুরটি কৃষকের বাড়ি ছেড়ে গেল না। কৃষক আবার ইঁদুরের ঠুকঠাক শব্দ শুনতে পেল। ইঁদুর জামা-কাপড় কেটে দিতে পারে এই ভয়ে কৃষকের বউ কৃষককে ইঁদুর মারার ওষুধ কিনে আনতে বলল।

কৃষক ওষুধ কিনে এনে ইলিশ মাছ ভাজার সঙ্গে মিশিয়ে ঘরের কোনায় রেখে দিল। রাতে ইঁদুর ইলিশ মাছের গন্ধ পেয়ে মাছের কাছে গেল। মাছ খাওয়ার লোভে মাছে মুখ দিতেই ইঁদুরটি ছটফট করতে করতে মারা গেল। মরার সময় ইঁদুরের একটি কথাই মনে হতে থাকল- নিশ্চিত খাবারের লোভে কৃষকের বাড়ি না থাকলে আজ আমি ও আমার বাচ্চারা সবাই বেঁচে থাকতাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর