তোর হাতে এটা কী রে
এটা এটা চরকি। কাগজের। বাবা বানিয়ে দিয়েছে। দেখ আমি দৌড় দিলে এটা বাতাসে ঘুরবে।
দারুণ তো। আমাকে একটু দিবি।
দিতে পারি। কিন্তু
কিন্তু কী রে।
যদি নষ্ট হয়ে যায়।
তাহলে।
আমি বাবাকে বলব কীভাবে কাগজ দিয়ে এরকম চরকি আমাকে বানিয়ে দিয়েছে সেটা শেখাতে। তাহলে নষ্ট হয়ে গেলেও আমি বানাতে পারব। তারপর সবাইকে বানিয়ে দেব। অনেক মজা হবে।
রাতে বাবা বাসায় আসলে ঝুমঝুমি বাবাকে জিজ্ঞেস করল বাবা চরকি কীভাবে বানায়।
চরকি বানানো সহজ। আমরা রাতে খাওয়া শেষ করে বানাতে বসব। তখন তুমিও শিখে যাবে কীভাবে এটা বানাতে হয়।
ঝুমঝুমি রাতের খাবার শেষ করে অপেক্ষা করছে কখন বাবা বাসাতে বসবে।
কিছুক্ষণ পর বাবা ঘরে ঢুকলেন একটা কাগজ, কাঁচি, আঠা, একটি ছোট লাঠি নিয়ে। বাবা বললেন এগুলো দিয়েই তৈরি হবে আমাদের চরকি।
ঝুমঝুমি খুব ভালো করে খেয়াল করতে লাগল বাবাকে।
বাবা প্রথমে কাগজটি বর্গাকারে কেটে নিল। এরপর কোনাকুনি করে ভাঁজ করে নিল। এরপর দুই পাশ থেকে কোনাকুনি করে ভাঁজ করে নেওয়া শেষ কাগজের কোনাগুলোকে কেটে নিল। এরপর কাটা মাথাগুলো মাঝে এনে ভাঁজ করে নিল। এমনভাবে ভাঁজ করল যাতে ফুলের মতো দেখতে হলো। এরপর মাঝখানে আঠা লাগিয়ে কোনগুলো জোড়া দিয়ে দিল। এরপর একটি লম্বা কাগজ নিয়ে কাগজটিকে গোল করে লাঠির মতো বানিয়ে নিল। আর একটা ছোট কাগজ কেটে ফুলের মতো বানিয়ে নিল। ফুলটা আঠা দিয়ে মাঝখানে বসিয়ে দিল। এরপর লম্বা কাগজটিকে ঘূর্ণিটির সাথে একটি আলপিন দিয়ে লাগিয়ে দিল। আর ব্যাস এভাবেই তৈরি হয়ে গেল কাগজ দিয়ে চরকি তৈরি।
অল্প সময়ের মধ্যেই ঝুমঝুমির চরকি তৈরি হয়ে গেল। বাবা বাইরে নিয়ে গিয়ে বাতাসে ঘুরতে দিল ওহ! ঘুরছে! ঝুমঝুমি আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
দেখেছ, বাবা বলল, যদি নষ্ট হয়ে যায়, তুমি আবার বানাতে পারবে।
ঝুমঝুমি খুশিতে বলল, হ্যাঁ বাবা, এবার আমি একাই বানাতে পারব!
পরদিন ঝুমঝুমি তার বন্ধুদের দেখাল বাবার বানানো চরকিটা।
এবার তারা সব বন্ধু মিলেই বানাবে। সে এক মহা আয়োজন। কেউ রঙ্গিন পাতা জোগাড় করল, কেউ কাঁচি, কেউ আঠা।
ঝুমঝুমি বাবা যেভাবে বানিয়েছিল, সেভাবে বানানো শুরু করল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যতবারই সে কাগজ কেটে ভাঁজ করে ফুল বানাতে চাচ্ছে সেটা ঠিকমতো হচ্ছে না।
এখন উপায়। সবার মন খারাপ। রাতুল তো আর একটু হলে কেঁদেই ফেলবে। মুখ ফুলিয়ে সে বলল- কত্তগুলো কাগজ নষ্ট হয়ে গেল। আমি আর কাগজ আনতে পারব না।
রাতুলের কথায় সবাই পড়ে গেল মহাচিন্তায়, কাগজ ছাড়া তো চরকি হবে না। এখন...
মিতালি পকেট থেকে একটা কিটক্যাট বের করে রাতুলকে বলল- এবার এর মতো নিয়ে এসো। এবার ঝুমঝুমি ঠিক বানাতে পারবে।
যেমন কথা তেমন কাজ, আবার সব কিছু জোগাড় করা হলো, সবার মনোযোগ ঝুমঝুমির দিকে।
কাগজ কাটছে, ভাঁজ করছে, আঠা লাগাচ্ছে। হয়ে যাচ্ছে, এবার হয়ে যাচ্ছে। লাঠিটা বানিয়ে ঠিকমতো আলপিন দিয়ে লাগালেই...
রাতুল, মিতালি, ময়না অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ঝুমঝুমির হাতের দিকে। বাতাসে ঘুরছে তাদের বানানো চরকি।
বাতাস জোর হলে চরকিও জোরে ঘোরে।
ঝুমঝুমির পেছন পেছন সবাই দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে আমাদের চরকি হাওয়ায় ঘুরছে... ঘুরছে।