সমুদ্রের অনেক নিচে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেখানে এই মজার প্রাণীর বাস। গভীর, অনেক গভীর নীল সমুদ্রের তলদেশে থাকে ছোট্ট, গোলগাল প্রাণীটি-নাম ডাম্বো অক্টোপাস! জানো কেন তার এমন নাম? ঠিক যেন ডাম্বো হাতিটার মতো, এই অক্টোপাসের মাথার দুই পাশে দুটো বড় বড় কান আছে! অবশ্য এগুলো আসলে কান নয়, পাখনা। এই পাখনাগুলো ব্যবহার করেই সে জলের মধ্যে ভেসে বেড়ায়, অনেকটা উড়ন্ত হাতির মতো!
ডাম্বো অক্টোপাসরা কিন্তু খুব শান্ত এবং মিষ্টি। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর জলের প্রাণী, প্রায় ১৩,০০০ ফুট নিচে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। সেখানে তারা একা একা সাঁতার কাটে এবং ছোট ছোট চিংড়ি ও পোকামাকড় ধরে খায়। এরা গভীর সমুদ্রের প্রায় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মিটার নিচে থাকে। এদের শরীরটা হয় বেশ নরম আর জেলির মতো। ওদের আটটি শুঁড় আছে, তবে অন্যান্য অক্টোপাসের মতো এরা খুব দ্রুত সাঁতার কাটে না। বরং ধীরে ধীরে জলের স্রোতে ভেসে চলে আর তাদের বড় কান বা পাখনাগুলো নাড়িয়ে খেলা করে।
এই গভীর সমুদ্রে খাবার পাওয়া খুব কঠিন। তাই ডাম্বো অক্টোপাস ছোট মাছ, কেঁচো বা চিংড়ির মতো প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। খাবার ধরতে এরা তাদের লম্বা হাত ব্যবহার করে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ডাম্বো অক্টোপাস খুব শান্ত স্বভাবের প্রাণী। অন্য অক্টোপাসের মতো এরা কালি ছিটিয়ে আত্মরক্ষা করে না। বরং এরা রং বদলে চারপাশের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে শিকারি প্রাণীরা সহজে খুঁজে পায় না। গভীর সমুদ্রের অন্ধকারে ভেসে বেড়ানো এই প্রাণীটিকে দেখলে মনে হয়, যেন কোনো রূপকথার চরিত্র জীবন্ত হয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞানীরাও ডাম্বো অক্টোপাসকে বলেন ‘সমুদ্রের কার্টুন নায়ক’। ডাম্বো অক্টোপাসদের সাধারণত দেখা যায় কমলা, লাল বা গোলাপি রঙের। অন্ধকারে তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন, কিন্তু যখন তারা তাদের মিষ্টি কানগুলো নাড়িয়ে ভেসে ওঠে, তখন তাদের দেখতে খুব ভালো লাগে। এই অদ্ভুত আর সুন্দর প্রাণীটি সমুদ্রের নিচের রাজ্যের দারুণ বাসিন্দা! এরা প্রমাণ করে, প্রকৃতির সৃজনশীলতা সত্যিই সীমাহীন!