প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অভিবাসন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে অভিবাসীদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব এবং তাদের মর্যাদা সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন অভিবাসী শুধু একজন শ্রমিক নন। একজন অভিবাসী যখন তার পরিবার ও দেশত্যাগ করেন তখন তাকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। তারা নিজেদের শ্রম, উদ্ভাবনী শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে স্বাগতিক দেশের সমাজের কল্যাণে অবদান রাখেন। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়কে তারা অন্যের জন্য ব্যয় করলেও অনেক সময় তাদের মানবিক এবং ন্যূনতম মানবিক অধিকারগুলো অবজ্ঞার শিকার হয়। অভিবাসী সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাস্তবতার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা তাত্পর্যের দাবিদার। বাংলাদেশের অন্তত এক কোটি মানুষ বিদেশে অভিবাসী হিসেবে অবস্থান করছে। অভিবাসন একটি মানবিক অধিকার। একে খাটো কিংবা অবজ্ঞা করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায়, অভিবাসীদের পাঠানো আয় দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা হিসেবে বিরাজ করছে। এ আয় বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছে। এটি মুদ্রার যেমন এক পিঠ তেমন অন্য পিঠ হলো অভিবাসীরা দুনিয়ার যেসব দেশে কাজ করেছেন, সেখানকার সমাজের উন্নয়নেও রেখেছেন তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা। তাদের সস্তা শ্রম সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিকে লাভবান করেছে। সোজা কথায় অভিবাসনে রয়েছে দ্বিমুখী কল্যাণ। যা কোনো পক্ষের কাছে উপেক্ষার বিষয় হওয়া উচিত নয়। বিশ্বের যেসব দেশ অভিবাসী আয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অভিবাসী সম্মেলন এ সমস্যা নিয়ে বিশ্ব সমাজের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি করলে তা হবে এক বিরাট অর্জন। সম্মেলনে বিশ্বের ১৩০টি দেশ, জাতিসংঘের ৩০টি সংস্থাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশগ্রহণ অভিবাসন ইস্যুকে যে সবমহল থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সে বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আমরা আশা করব এ সম্মেলন অভিবাসী ও উদ্বাস্তুবিষয়ক একটি ব্যাপকভিত্তিক বৈশ্বিক চুক্তির পথ দেখাবে। যে চুক্তি অভিবাসীদের মানবিক অধিকার সুরক্ষায় ফলপ্রসূ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।