সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সঞ্চয়ের ইসলামী নির্দেশনা

যুবায়ের আহমাদ

সঞ্চয়ের ইসলামী নির্দেশনা

কথাবার্তা, হাঁটাচলায় মধ্যম পন্থার  নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। উপার্জন চিন্তায় ইবাদত  বাদ দেওয়া যেমন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, তেমনি নামাজ সমাপনান্তে উপার্জনচিন্তা বাদ দিয়ে মসজিদে বসে থাকাও ঠিক নয়। সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। অপচয় এবং কৃপণতা কোনোটিই অনুমোদিত নয় ইসলামে। বরং এ দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে মধ্যম পন্থা হিসেবে মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখা ইসলামের শিক্ষা। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদের নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী’ (ফুরকান-৬৭)। হালাল-হারামের বিধিনিষেধ মেনে খরচকে সীমাবদ্ধ করে দিতে হবে। প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে হারাম খরচ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্ধৃত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হবে যেন পরবর্তীতে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়-কুণ্ঠ হইও না আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হইও না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (বনি ইসরায়েল-২৯)। অপব্যয় না করে সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি (সা.) কখনো পছন্দ করেননি। রসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাবে এটাই উত্তম’ (বোখারি ও মুসলিম)। ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে তা আরও স্পষ্ট হয় রসুলে করিম (সা.)-এর হাদিস থেকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম দান তাই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয় (বোখারি)। কারণ যদি সমুদয় সম্পত্তি দান করে দেয় তাহলে কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে তা মেটাবে কোত্থেকে? তখন অভাবে পড়ে সে ব্যক্তি নিজেই তার দানের জন্য আক্ষেপ করবে। সেই দানশীল লোকটিই উল্টো অন্যের কাছে হাত পাতবে। এ জন্য ইসলাম দান-খয়রাত ভালো কাজ হওয়া সত্ত্বেও এ ব্যাপারেও পরিমিতিবোধের নির্দেশ দিয়েছে। কৃপণ না হয়ে ইসলাম নির্দেশিত খাতে খরচে কোনো রকমের দ্বিধাবোধ না করে; হারাম পথে খরচের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে; অপচয়, অপব্যয় না করার মাধ্যমে মিতব্যয়ী হলে দারিদ্র্যমুক্ত জীবন আল্লাহ তাকে দান করবেন—এমনটিই রসুলে করিম (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলে করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না (মুসনাদে আহমাদ)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অর্থব্যয়ে পরিমিতবোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না। ইসলামের এ মহান শিক্ষাটি যথাযথ অনুসরণ না করার কারণেই আজ আমাদের অনেকে উপার্জনের যাচিত সুফল থেকে বঞ্চিত। লাখ লাখ টাকা প্রতি মাসে উপার্জন থাকলেও অভাব থেকেই যাচ্ছে।

 

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার গাজীপুর।

 

সর্বশেষ খবর