সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

পারস্য ও রোম বিজয়ের প্রভাব

পারস্য ও রোম বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল। পারস্যের ওপর মুসলিম বিজয় আর্য জাতির ওপর সেমেটিক জাতির বিজয়ের সমার্থক ছিল। এ দুটি প্রবল প্রভাবশালী জাতির শক্তি যখন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেল, তখন মুসলিম শক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল। রোমান সাম্রাজ্য বিজয় মুসলমানদের ভূমধ্যসাগরের সংস্পর্শে আনয়ন করল। তারা এবার নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজনবোধ করলেন। সুতরাং বলা যায় যে, রোমান শক্তির ওপর বিজয় অর্জনই মুসলিম নৌশক্তি সংগঠনের প্রধান কারণ।

পারস্য ও রোম বিজয়ের ফলে মুসলমানরা এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হলেন। এ দুটি সমৃদ্ধশালী দেশের ওপর আধিপত্য লাভ করে তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হলেন। আর্থিক অসুবিধা হতে মুক্ত হওয়ার ফলে তারা তাহযীব-তমদ্দুনের প্রসার ও জনকল্যাণমূলক কার্যকলাপের দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ পেলেন। এ দুটি দেশের বিপুল ঐশ্বর্য সিন্ধু তীর পর্যন্ত তাদের আধিপত্য বিস্তারেও উৎসাহিত করেছিল।

বিজিত জাতির সংস্পর্শে এসে মুসলমানরা তাদের সামরিক নৈপুণ্য অনুসরণ করেছিলেন। কালক্রমে মুসলমানরা তাদের সামরিক আদর্শকে নিজস্ব করে নিয়েছিলেন। ফলে মুসলিম শক্তি প্রবল ও দুর্বার হয়ে উঠতে পেরেছিল।

পারস্য ও রোমের অধিবাসীরা তখনকার দিনে গৌরব ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতিতে তারা ছিল সর্বাধিক অগ্রসরমান জাতি। এ দুই দেশ জয় করে মুসলমানরা পারসিক ও হেলেনীয় সভ্যতার ঘনিষ্ঠ সংযোগ লাভ করল। মুসলমানরা এ দুই সাম্রাজ্যের শিল্প-সাহিত্য, দর্শন ও স্থাপত্য-ভাস্কর্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। এ অহরিত জ্ঞান মুসলমানদের তাহ্যীব-তমদ্দুন বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। পারস্যের প্রচলিত আচার-ব্যবহার ও সামাজিক পদ্ধতি, আদব-কায়দা ও রীতিনীতি আরব সমাজে অনুপ্রবেশ করল। এভাবে আদান-প্রদানের মাধ্যমে এক নতুন ইসলামী সভ্যতা জন্ম লাভ করেছিল—বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে যার অবদান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সর্বশেষ খবর