বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ধান সংগ্রহ নীতি

কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে

কৃষকের কল্যাণে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ধান কিনলেও তা তাদের কোনো উপকারে আসছে না। ধান কেনার সিদ্ধান্তে লাভবান হচ্ছেন চালকল মালিক ও আড়তদাররা; যারা মৌসুমের শুরুতেই সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে আকাশছোঁয়া মজুদ গড়ে তুলেছেন। অধিকাংশ কৃষকের ঘরে বেচার মতো ধান না থাকায় চালকল মালিক ও আড়তদাররা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। স্মর্তব্য, গত ২৮ মার্চ খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে চলতি বোরো মৌসুমে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ১ লাখ ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহমূল্য ২৬, প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের দাম ৩৬ ও প্রতি কেজি আতপ চালের দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা শুরু হতে দেরি হওয়ায় ফড়িয়ারা সেই সুযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করলে ধান নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন কৃষক। এ পরিস্থিতিতে কৃষককে বাঁচাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মন্ত্রণালয়কে বেশি ধান কেনার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পাশাপাশি চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হয়। কিন্তু কৃষকের ধান ততক্ষণে আড়তদার ও চালকল মালিকের গুদামে পৌঁছে যাওয়ায় সরকারের ধান-চাল কেনার সুফল থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। গত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে উঠেছে যে, কৃষক ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ধান চাষ করে তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তাতে ধান চাষের দিক থেকে মুখ ফেরালে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি হবে। এ অবস্থার পরিবর্তনে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে খাদ্যগুদাম স্থাপন করে ধান ওঠার মৌসুমে ধান সংরক্ষণ ও মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থেই কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। এটি সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর