শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসুন ইসলামে পুরোপুরি দাখিল হই

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আসুন ইসলামে পুরোপুরি দাখিল হই

ইমান কী? ইমান হলো বিশ্বাস। কী বিশ্বাস? আমাদের স্রষ্টা আল্লাহ এবং তাঁর প্রেরিত দূত হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে জীবনের প্রতিটি দিক পরিচালনা করতে বলেছেন, সেভাবে পরিচালনা করাই হলো ইমানের প্রথম ও প্রধান দাবি। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা জীবনের কিছু বাঁকে আল্লাহর নির্দেশ, নবীর সুন্নাত অনুসরণ করলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোরআন-সুন্নাহকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে শয়তানের অনুকরণ-অনুসরণ করছি। আমরা একই সঙ্গে নামাজও পড়ছি আবার সুদ-ঘুষ, হারাম-মিথ্যা, অন্যায়-জুলুম, মানুষ ঠকানো-ওজনে কম দেওয়াসহ হাজারো কোরআনবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি আবার পরিবার-প্রতিবেশী-আত্মীয়দের ন্যূনতম অধিকারও রক্ষা করি না। আমরা হজ করি কিন্তু আমাদের ওপর যাদের অর্থায়ন ফরজ, দরিদ্র মানুষকে টেনে তোলার যে নির্দেশ কোরআন ধনীদের দিয়েছে, ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার যে কর্মসূচি নবী উম্মতকে দিয়েছেন, কোরআন মুসলমানদের ওপর যেসব অর্থনৈতিক বিধান ফরজ করেছে সে নির্দেশগুলো আমরা এমনভাবে এড়িয়ে চলি যে বোধহয় কোরআনে অর্থনীতি ও দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।

আমরা ধর্মালোচনার আসরে বসি, মোনাজাতে কাঁদি, আবার আমরাই বাস্তব জীবনে এমন সব কাজ করি, যা দেখে শয়তানও লজ্জা পায়। খাদ্যে ভেজাল মেশাই, কাজে দুর্নীতি করি, ঘুষ ছাড়া কাজ করি না, সুদ ছাড়া লেনদেন চলে না, আমাদের সমাজে খুন-খারাবি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে, চরমতম অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ এমন কোনো অনাচার নেই যার আমরা প্রতিযোগিতা করে করছি না।

অথচ ধর্মকর্মেও আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের সম্পর্কেই আল কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ করবে অস্বীকার? তাহলে জেনে রেখো এর শাস্তি হলো পৃথিবীতে তোমরা হবে চরম লাঞ্ছিত আর কিয়ামতের দিন তোমাদের তাড়িয়ে নেওয়া হবে আজাবের দিকে। তোমরা যা করছ আল্লাহ তা খুব ভালো করেই জানেন।’ সূরা বাকারা, আয়াত ৮৫। আল্লাহর কালাম  মিথ্যা নয়। বর্তমান পরিস্থিতিই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। একদিন পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলমান। আর আজ পৃথিবীর মানুষ গোলামের চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করছে সেই মুসলমানের সঙ্গেই। মুসলমানের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে, নাগরিকতা হরণ করছে, মুসলমান ভূখ- দখল করে জালিমরা অবৈধ রাষ্ট্র গঠন করে বুক ফুলিয়ে হায়েনার হাসি হাসছে। আর মুসলমানরা সব নির্যাতন, অত্যাচার মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর কিতাবকে অমান্য করে চললে কপালে যে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয় মুসলমানরাই এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কোরআন না মেনে মুসলমানদের কপাল এমন পোড়াই পুড়েছে যে, তাদের ওপর জুলুম হওয়া সত্ত্বেও কোনো মুসলমান রাষ্ট্রও তাদের পক্ষে টুঁশব্দটি পর্যন্ত করছে না। কোথাও কোথাও তো এমন হচ্ছে যে, এক মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস করে দিচ্ছে আরেক মুসলিম রাষ্ট্রকে। আফসোস! তবু ঘুম ভাঙছে না মুসলমানের। আল কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা ইসলামে পুরোপুরি প্রবেশ কর আর শয়তানকে মেনে চোলো না।’ আমরা আধা ইসলাম মানছি। আর শয়তানের আধা গোলামি করছি। ফলে আজ আমাদের কপালে এমন দুর্দশা। এই লাঞ্ছনাময় জীবন থেকে মুসলিম বিশ্বকে বেরিয়ে আসতে, আবার ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিয়ে যেতে অবশ্যই কোরআনের পুরোপুরি অনুসরণের বিকল্প নেই। আরেকটি কথা। আমরা যারা এই আধা ধর্ম আধা শয়তানি পালন করছি, তাদের জন্য সওয়াব তো দূরের কথা জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন আল্লাহ। সূরা মাউনে আল্লাহ বলছেন, ‘জাহান্নামের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক স্থান তাদের জন্য, যারা তাদের ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন জীবনযাপন করে।’ আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সহি ধর্ম সম্পর্কে বোঝার তাওফিক দিন। ধর্ম বুঝে পুরোটুকু মেনে চলার ইচ্ছাশক্তি দান করুন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন

চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

 

সর্বশেষ খবর