বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মন্ত্রীদের মুখে কুলুপ দিয়ে শেখ হাসিনাই অভয় বাণী শোনাবেন

পীর হাবিবুর রহমান

মন্ত্রীদের মুখে কুলুপ দিয়ে শেখ হাসিনাই অভয় বাণী শোনাবেন

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ভয়াবহ যন্ত্রণায় আজ তামাম পৃথিবীর মানুষ এক মোহনায় মিলিত। তাবৎ রাষ্ট্রনায়কদের চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, পদক্ষেপ অভিন্ন। পৃথিবীর সব চিকিৎসকের ভাষা এক। গোটা মানবজাতির বেদনা, দীর্ঘশ্বাস, আবেগ, অনুভূতি, অসহায়ত্ব, স্বজন হারানোর কান্না এবং বাঁচার আকুতিও এক হয়ে গেছে। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্য, পরাক্রমশালী আর দুর্বল, ধনাঢ্য আর গরিব সব ব্যবধান এক মুহূর্তে মিলিয়ে গেছে। মানবজাতিকেই এক করে দিয়েছে ছোট্ট জীবাণুর আক্রমণ বা নভেল করোনাভাইরাস। এক কথায়, পৃথিবীজুড়ে এখন উচ্চারিত একটিই শব্দÑ করোনা; যার বিরুদ্ধে পৃথিবী বেঁচে থাকার মরণ লড়াইয়ে নেমেছে। মহাশক্তিধর পৃথিবীর সব গবেষণাগার, সব বিজ্ঞানী, সব বাণিজ্যিক সাফল্যে শীর্ষে থাকা ওষুধ কোম্পানি রীতিমতো যুদ্ধে নেমেও এখনো এ করোনাভাইরাসের ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারেনি। দুনিয়ার তাবৎ ক্ষমতাধর ও প্রতাপশালীদের সামনে প্রমাণিত হয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা যায়, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চালানো যায়, যে কোনো সময় যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়া যায়; এমনকি পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলো চাইলেই যে কোনো দুর্বল রাষ্ট্র দখল করে নিতে পারে। যে কোনো সময় উগ্রপন্থিরা পৃথিবীর শান্তি মুহূর্তে বিনষ্ট করে দিতে পারে। ধর্মান্ধরা চাইলেই সাম্প্রদায়িকতার বিষের আগুন ছড়িয়ে মানুষের জীবনহরণই নয়, সমাজকে অশান্ত, অস্থির, সংঘাতময়, সহিংসতায় রক্তাক্ত করে দিতে পারেন। কিন্তু আজ একটি করোনার জীবাণুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সব শক্তিমানই অসহায়। করোনার মৃত্যু এতটাই হৃদয়বিদারক যে, একজন মানুষ মৃত্যুর সময় যেমন তার প্রিয়জনদের কাছে পাচ্ছে না তেমনি তার শেষকৃত্যেও আপনজনরা থাকতে পারছেন না। সারা জীবন আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে বা অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করার পর করোনায় মৃত্যুবরণ করলে শেষ বিদায়টুকু তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে হচ্ছে না। ভয়াবহ ছোঁয়াচে ভাইরাসে মৃত মানবদেহ মানুষের জন্য বিপজ্জনক, বিষাক্ত হয়ে উঠছে। পৃথিবীজুড়ে সব চিকিৎসক এক কথাই বলছেন, কোথাও কোনো জনসমাগম নয়, রাষ্ট্রনায়করাও সেই পথে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। সবাই আক্রান্ত না হওয়ার জন্য যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গৃহবন্দী জীবনযাপনের তাগিদ দিচ্ছেন, তেমনি করোনায় আক্রান্ত হলে আইসোলেশন সেন্টারে নিঃসঙ্গ জীবনে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পণের কথাই বলছেন। গভীর বেদনার সঙ্গে উন্নত দেশ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টি মৃত্যুকূপের ওপর দাঁড়িয়ে দেশবাসীর ক্রন্দন আর হাহাকার হৃদয়ে ধারণ করে বলেছেন, মহামারী নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। অর্থাৎ স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করছেন। দেশে দেশে জরুরি অবস্থা, লকডাউন, কারফিউ, সাধারণ ছুটিসহ প্রায় ২০০ রাষ্ট্রের পদক্ষেপ পৃথিবীকে নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ, নিঝুম পল্লী বানিয়ে দিয়েছে। স্তব্ধ পৃথিবীতে এখন কেবল বাঁচার আকুতি। গবেষণাগার লড়াই করছে ভ্যাকসিন ও প্রতিষেধক আবিষ্কারের। আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই। মানুষ শত বছর পরপর একেকটি ভয়াবহ মহামারীতে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্য দিয়ে যেভাবে চিকিৎসা বা ওষুধ আবিষ্কার করেছে সেই ধারায় এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন করোনার কার্যকর ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। কিন্তু তার আগে প্রকৃতির অমোঘ বিধানে বিপুলসংখ্যক মানুষকে মর্মান্তিক মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতেই হবে। উন্নত খাবার, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের গাড়ি, পোশাক, বিলাসপণ্য থেকে হীরক শোভিত অলঙ্কার আজ বিষাদগ্রস্ত মানুষ ভুলে গেছে। মর্মে মর্মে দেখছে মৃত্যুভয়! অসহায় মানুষ দেখছে জীবন কত তুচ্ছ, বাকি সব অর্থহীন। বেঁচে থাকা ছাড়া এখন আর কোনো চাওয়া নেই।

বাংলাদেশ আজ করোনার ছোবল থেকেও বিচ্ছিন্ন নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সব রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে পরাস্ত করে দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করে দেশজুড়ে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ চলছে তখন একটি চক্র ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে শেয়ারবাজারকে শেষ করে দিয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতির সীমাহীন উল্লাসে দেশের সব উন্নয়ন বরাদ্দে হরিলুট চালিয়েছে। তার পরও আজকের বাংলাদেশ যখন মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তখনো মানুষের শেষ ভরসার জায়গায় জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া তার সরকারের আর কাউকে আস্থায় নিচ্ছে না। আর লুটেরা দুর্নীতিবাজও এখন বাঁচার লড়াইয়ে কোয়ারেন্টাইনে।

ভয়াবহ করোনার আগমনী দুঃসংবাদ শুনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের কোনো পর্যায়ে কার্যকর আগাম প্রস্তুতিই গ্রহণ করেনি। করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগে-পরে একেকজন মন্ত্রীর লাগামহীন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তায় ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সবখানে এই কয়েকজন রাজনৈতিক অনভিজ্ঞ ও মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও মনের ভাষা পড়তে না জানা মন্ত্রীর মুখ শাটডাউনের দাবি তুলেছে। একদিকে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ডাক্তারসহ সবার পার্সোনাল প্রটেকটেড ইকুইপমেন্ট যেমন দিতে পারেনি তেমনি প্রয়োজনীয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলেনি। বিমানবন্দর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই করোনা আক্রান্ত দেশ ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের ৬ লাখ প্রবাসীকে বিনা বাধায় দেশে প্রবেশ করিয়েছে। প্রবাসীরা দেশে অবশ্যই আসবেন কিন্তু বিমানবন্দরে কেন পরীক্ষা হলো না? কেন কোয়ারেন্টাইন রাখা হলো না তৈরি করে? এখন ভাইরাস প্রবাসীদের মধ্যে নয়, সবার মাঝেই ছড়িয়ে গেছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হৃদয়ের অশ্রুতে চোখ ভিজিয়েছেন। বিশ্ববিবেককে স্পর্শ করেছেন। তার স্ত্রীকে আইসোলেশনে রেখে নিজে কোয়ারেন্টাইন থেকেই জনগণের দায়িত্ব নিয়েছেন। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জনতার কারফিউ ঘোষণা করে জনগণকে গৃহে প্রবেশ করাতে গিয়ে, সচেতন করতে গিয়ে অনেকটা সফল হলেও সবাইকে পারেননি। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য বিভাগের নজিরবিহীন ব্যর্থতা, অসচেতনতা ও বাগাড়ম্বর আচরণ দৃশ্যমান তেমনি মানুষের মধ্যেও ইতালির মতো পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে আমলে না নেওয়ার, নিজেদের সচেতন, সতর্ক না করার চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেকে বলছেন, তিন সপ্তাহ আগে ইতালিতে যে অবস্থা ছিল এখন বাংলাদেশে সে অবস্থা বিরাজ করছে। ভয়াবহতা তিন সপ্তাহ পরই দেখা যাবে। আক্রান্তও মৃতের সংবাদ সরকারি হিসাবের বাইরে যাবে। ইতালির মিলানের কবরস্থানে এখন লাশের জায়গা হচ্ছে না। যুক্তরাজ্যসহ সেখানেও মৃতকে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কাবাঘর যেখানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সুরম্য মসজিদে যেখানে জামাতে নামাজ বন্ধ, সেখানে আমাদের দেশে মসজিদ ছাপিয়ে রাজপথে জুমার নামাজ গিজগিজ করে আদায় করা হয়েছে। ঘরে নামাজ না পড়ে মসজিদে নামাজ পড়ার খেসারত হিসেবে মিরপুরের টোলারবাগে আল্লাহভীরু দুই মুমিন মুসলমানের দুই দিনের ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ মৃত্যু এতই মর্মান্তিক আল্লাহর বান্দা এই বেদনাবহ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কতজনকে ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন সে হিসাব পরে আসবে। কিন্তু দুঃখজনক যে, মৃত্যুর সময় সন্তানরা যেমন পিতার মুখে পানি দিতে পারেনি, কলমা পাঠ করার সুযোগ পায়নি, তেমনি তাদের গোসল করিয়ে জানাজা পড়ে দাফন করা যায়নি। করোনা আক্রান্ত হলে হাত ধরাধরি করে জীবন কাটানো স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের কাছে যেমন যেতে পারছেন না তেমনি পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তান মিলিত হতে পারছে না। প্রেমিকের কাছ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে প্রেমিকা বহুদূর বাস করছেন। মহব্বতের পৃথিবীতে এমন দৃশ্য কখনো কেউ কল্পনা করেননি। নির্দয় অসামাজিক স্বার্থপরতাই বাঁচার পথ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব শিক্ষাঙ্গন বন্ধ ঘোষণা করে সভা-সমাবেশ, লোকসমাগম, তীর্থ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব বন্ধ করেছিলেন। অনেকে সমুদ্রদর্শনে গেছেন! বয়স্ক অসুস্থদের মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়তে বলেছিলেন। যারা শোনেননি নিজের মৃত্যু ডেকেছেন, অন্যদের বিপদে ফেলে গেছেন। ভারতে যেমন আরেকদল উগ্রপন্থি হিন্দু করোনা থেকে বাঁচতে গোমূত্র পান করছেন তেমনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার পর হবিগঞ্জের হিন্দুধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক সমাগম ঘটিয়ে তীর্থ বা পুণ্যস্নান করেছেন! আমরা জানি না ই বিপর্যয় দেশের মানুষকে কোথায় নিয়ে যাবে? পৃথিবীতে যার চিকিৎসা নেই সেখানে নিজেদের একঘরে করে রাখা বা স্বেচ্ছা গৃহবন্দী হয়ে সব সামাজিকতা, পারিবারিক মিলন, বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডা সবকিছু ত্যাগ করে নিজেদের গৃহবন্দীই শেষ কথা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোকসমাগম বন্ধে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনী সারা দেশে মোতায়েনসহ ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। পৃথিবীর সঙ্গে আকাশ যোগাযোগও এর আগে প্রায় বিচ্ছিন্ন করিয়েছেন। সাধারণ ছুটিতে যেভাবে গ্রামের পথে ছুটেছে যেন ঈদ! কত বেকুব। এখন রেল, সড়ক, নৌ যোগাযোগ বন্ধ করেছেন। কার্যত বাংলাদেশ এখন লকডাউনে। জনগণকে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোতে অনুরোধ করেছেন। অফিস-আদালতে প্রয়োজনীয় কাজ অনলাইনে করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। দোকানপাট বন্ধ করেছেন তবে সীমিত আকারে ওষুধ, কাঁচাবাজার, খাবার ও জরুরি সেবা চালু রেখেছেন। গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দিয়ে এটি সীমিত আকারে চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকিং ব্যবস্থাও সীমিত আকারে চালু। সামাজিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন অনুযায়ী তলব করবেন। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ঘরে ফেরা কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামে অথবা ভাসানচরে চলে যেতে বলেছেন। তাদের খাওয়া-দাওয়া জেলা প্রশাসন দেখভাল করবে। আজহারীসহ যেসব মোল্লা ওয়াজে বলেছিলেন, করোনা আল্লাহর গজব, চীনের পর ইরানসহ পৃথিবীর মানুষের মৃত্যুর মুখে নিজেরাই কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। করোনা কাউকেই করুণা করে না। ভয়াবহ তার রূপ। মানবতা, প্রযুক্তি, গণতন্ত্র ও শিল্পকলার ইউরোপ থেকে সব পথে এখন মৃত্যুর বিভীষিকা!

আমি বহুবার বলেছি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হচ্ছেন সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকারপ্রধান। অনেকে তাঁকে অ্যারাবিয়ান ব্ল্যাক হর্সের সঙ্গে তুলনা করেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের জায়গায় তিনি দূরদর্শী ও ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। সেখানে এবার তাঁর মন্ত্রিসভা সে তুলনায় এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে সর্বাধিক দুর্বল ও ব্যর্থ এবং কয়েকজন চরম অতিকথনে বিরক্তিকর, সেটি অনেক আগেই মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তাদের ব্যর্থতা ও অনেকের মাত্রাতিরিক্ত আজগুবি কথাবার্তা মানুষকে অতিষ্ঠ করেছে। যে কোনো বিষয়ে মানুষের ভরসার জায়গায় কেবল শেখ হাসিনাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছেন, মানুষ যখন সন্তুষ্ট হয়ে বলছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুজিবকন্যা, তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘এখনো পিপিই অতটা দরকার নেই’। বিষাদগ্রস্ত মানুষের ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি তুলেছে। আইইডিসিআরের মুখপাত্র অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ যুদ্ধে সাহসের সঙ্গে স্মার্টলি যেভাবে ব্রিফ করছেন সেখান থেকে কিছু মন্ত্রী কথা বলা শিখতে পারেন। আমরা জানি এ পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে আসবে। করোনার লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরাও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর পদক্ষেপ করোনার নিস্তব্ধতার মধ্যে আমাদের সাহস ও আশার আলো জুগিয়েছে। আজ তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ ভাষণ ঘিরে গোটা দেশের মানুষ গভীর আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে। আমাদের রাষ্ট্রনায়ক ও জাতির পিতার কন্যা কী অভয় বাণী আজ শোনাবেন? এটি জানার জন্য উদ্বিগ্ন, বিমর্ষ মানুষ অপেক্ষায়। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জনগণের নিরাপদ জীবন ও করোনা মোকাবিলায় শক্তিশালী চিকিৎসক দল সুরক্ষিত হয়ে কীভাবে পরিস্থিতি সমন্বিত মোকাবিলা করবেন সারা দেশে সেই দিকনির্দেশনা বা রূপরেখা নিশ্চয় তুলে ধরবেন। তার আগে তিনি নিশ্চয় মানুষের ভাষা উপলব্ধি করে অতিকথনে পারদর্শী মন্ত্রীদের মুখ শাটডাউন করে জনগণকে ভাষণে আশার আলো দেখাবেন। বাঁচার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে মানবিক হৃদয়ে জেগে ওঠার শক্তি জোগাবেন। দেশের বিত্তশালীদের এই মানবিক দায়বদ্ধতায় কীভাবে পাশে নেবেন এবং কীভাবে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা আমরা পাব সেই বার্তাও দেবেন।

আমরা আশাবাদী বঙ্গবন্ধুকন্যা পারবেন। জাতির উদ্দেশে এই মহাদুঃসময়ের মুখে তিনি মানবিক কারণে স্বাস্থ্যগত কারণে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনিই প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ, দূরদর্শী। সঠিক ও উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি। আইন-আদালত সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবতা। প্রধানমন্ত্রীকে সব পদক্ষেপের জন্য অভিনন্দন। এখন গোটা মিডিয়ার চোখ করোনার পথের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির পথে ক্যামেরা ঘুরিয়ে রাখবে। তিনিও নিশ্চয় মুক্ত হয়ে সবাইকে মানবতার এ লড়াইয়ে শামিল হওয়ার ডাক দেবেন।

দেশের জনগণকেও আজ পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রের মতো আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর গাইডলাইন অনুসারে মোকাবিলায় এক মোহনায় মিলিত হতে হবে। সরকারের সব নির্দেশনা, চিকিৎসকদের পরামর্শ গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে অনুসরণ করে এখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শামিল হতে হবে। দেশের সেনাবাহিনীর আগে থেকেই পুলিশ, র‌্যাব, সিভিল প্রশাসনসহ সবাই লড়ছেন। এ লড়াই ঐক্যবদ্ধ জাতির। বিজয় এখানে অনিবার্য।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর