রবিবার, ৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ম ও ফজিলত

খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ

তাহাজ্জুদের নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাত। নবী করিম (সা.) হরহামেশা এ নামাজ নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. কে তা নিয়মিত আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। যেহেতু উম্মতকে নবীর অনুসরণ করার হুকুম করা হয়েছে সে জন্য তাহাজ্জুদের এ তাকিদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্য করা হয়েছে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- “এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে থাক। এ নামাজ তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফজল ও করম। শিগগিরই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন [বনি ইসরাইল : ৭৯] যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে কোরআনে তাদের মুহসেন ও মুত্তাকি নামে অভিহিত করে তাদের আল্লাহর রহমত এবং আখেরাতে চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই মুত্তাকি লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভু তাদের দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। কারণ, নিঃসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফিরাত চাইতো)”। [সূরা যারিয়াত : ১৫-১৮] প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করার এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্য অপরিহার্য ও কার্যকর পন্থা। আল্লাহপাক বলেন, “বস্তুত রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির একেবারে যথার্থ”। [সূরা মুয্যাম্মিল-৬]

এসব বান্দাদের আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দা বলেছেন এবং নেকি ও ইমানদারির সাক্ষ্য দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন- আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। [সূরা ফুরকান : ৬৩-৬৪]

তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত : ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সবচেয়ে বেশি (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)

রসুল (সা.) বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়াতায়ালা প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামাজ পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন। অনুরূপ কোনো মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাজের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)।  রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় নামাজ দাউদ (আ.) এর নামাজ । তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতের তৃতীয় ভাগে নামাজে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)।

 

তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত : তাহাজ্জুদের অর্থ হলো ঘুম থেকে উঠা। কোরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকিদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদের মসনূন সময় এই যে, এশার নামাজের পর লোকেরা ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামাজ পড়বে।

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর