শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মানুষ যখন মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছায়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মানুষ যখন মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছায়

রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান তাকে দিয়ে তিনি আমল করান।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কী রকম ইয়া রসুলুল্লাহ?’ তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে তাকে নেক আমলের তৌফিক দেন।’ তিরমিজি। ওপারের ডাক কোন মুহুর্তে আসবে এ চিন্তা বহু দীনদার বান্দার চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। অজস্র অশ্রু ঝরায় তাদের এ ভাবনা; কিন্তু আমরা অনেকেই আজ এ ভাবনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। আসলে ‘অন্তিম মুহুর্তে আমি কোন অবস্থায় থাকব?’ ‘মৃত্যুর ফেরেশতাকে দেখার ভয় আমাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেবে না তো?’ ‘আমি কি মুসলিম অবস্থায় মরতে পারব?’ এমনটি তো হবে না যে জীবনের মালায় মনের হেলায় গেঁথেছি যত ফুল, মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে দেখি যে সবই করেছি ভুল। ভাঙা-গড়া হলো পৃথিবীর নিয়ম। কিন্তু মৃত্যুর দোরগোড়ায় এসে দেখা যাবে শুধুই ভাঙছে কোনো কিছুই আর গড়ছে না। সে দিনটি কেমন হবে একবারও ভেবেছি কখনো? মৃত্যুর আগে মানুষ কী বলে? জীবনের শেষ কথাগুলো কেমন হয়? শেষ ইচ্ছাগুলো কেমন থাকে, এগুলো সবচেয়ে বেশি শোনার সুযোগ পান ডাক্তার ও নার্সরা। তারা মানুষের মৃত্যু দেখেন খুব কাছ থেকে। তারা অনেকের জীবনের শেষ কথা, শেষ কাজ, শেষ কষ্ট, শেষ আনন্দের মুহুর্তগুলোর সাক্ষী থাকেন। মৃত্যুর আগে মানুষের অনুতাপ সম্পর্কে নিকি মর্সান বলেন, অনেকেই সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করেন এবং অবসরে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেন। এরপর তারা উপলব্ধি করেন যে অবসর জীবনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং যা কিছু করতে চেয়েছেন তা আর করতে পারছেন না।

পাঠক! জীবনটা অনেক ছোট তাই ভালো যা কিছু করতে চান করে ফেলুন। বিখ্যাত আলেম সুফিয়ান সওরি (রহ.) যখন মৃত্যুশয্যায় অঝোরে কাঁদছেন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এ কান্না কি তার পাপের জন্য? তিনি মাটি থেকে একটি লাঠি ওপরের দিকে তুললেন এবং বললেন, ‘বিশাল জমিন থেকে এ লাঠি সরিয়ে নেওয়া জমিনের জন্য যতটা মামুলি বিষয়, আমার কাছে আমার পাপের চেয়েও তুচ্ছ (অর্থাৎ পরিমাণে অনেক কম)। ববং আমার ভয় হচ্ছে, মৃত্যুর সময় যদি আমার ইমান তুলে নেওয়া হয়!’ ইমাম শাফেয়ি (রহ.) যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন তাঁর এক ছাত্র আল-মুজানি ঘরে প্রবেশ করে জানতে চাইলেন, ‘ইমাম! আপনি কেমন আছেন?’ তিনি বলেন, ‘বুঝতে পারছি যাত্রার অবসান ঘটতে যাচ্ছে, ভাইদের বিদায় দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে, এবং সময় চলে এসেছে রবের সঙ্গে সাক্ষাতের। অথচ আমি জানি না, আমার রুহ জান্নাতে প্রবেশের দ্বারা আমার সম্মান বৃদ্ধি করবে, না জাহান্নামে নিক্ষেপ করে আমাকে আফসোসের মধ্যে ফেলে দেবে!’ সাহাবি মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) যখন মৃত্যুর বিছানায় উপস্থিত লোকেরা তাঁকে বলতে শুনল, ‘বাইরে দেখে এস তো এখন সকাল হয়েছে কি না?’ তারা বলল, রাত এখনো বাকি আছে। তিনি কিছুক্ষণ পর আবার প্রশ্ন করলেন। তারা তাঁকে আশ্বাস দিল সূর্য এখনো ওঠেনি। তৃতীয়বারের মতো যখন প্রশ্নটা করতে যাবেন এবার তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই এমন রাত থেকে, যার সকাল হবে জাহান্নামে।’ তাই আসুন আমাদের শেষ কথা, শেষ কাজ যেন হয় নেকের, আল্লাহর কাছে সবাই সে তৌফিক কামনা করি।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

সর্বশেষ খবর