চীন তাদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ তাইওয়ানের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে কি না সে আশঙ্কায় ভুগছে দুনিয়াবাসী। তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির মাত্র কয়েক ঘণ্টার সফর অশান্তির আবহ সৃষ্টি করেছে এশিয়ার বিশাল এলাকাজুড়ে। রিপাবলিকান দলের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্মতি যে নেই, তা সবার কাছেই কমবেশি স্পষ্ট। মার্কিন রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতেই রিপাবলিকান স্পিকার তাইওয়ান সফর করেছেন। যে দ্বীপটিকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকারের সফরকে কড়াভাবে নিয়েছে চীন। কারণ এর ফলে তাইওয়ানের স্বাধীন সত্তাকে প্রকারান্তরে স্বীকার করা হয়েছে। আর এ সফরের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে চীন। তাইওয়ানের চারপাশে তারা যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। নিক্ষেপ করা হচ্ছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। যুদ্ধজাহাজ থেকে লাইভ-ফায়ার ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। বন্ধু তাইওয়ানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রণতরী পাঠিয়েছে ধারেকাছের এলাকায়। পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা যাতে তাইওয়ানের পক্ষে দ্রুত অবস্থান নিতে পারে। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেমন প্রক্সি যুদ্ধ চলছে, তেমনি উত্তেজনার উপমশ না হলে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে তাদের আরেকটি প্রক্সি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। আকারে এবং সামরিক শক্তিতে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের বিশাল পার্থক্য থাকলেও ক্ষুদ্র এ দ্বীপদেশটিকে একটি সামরিক ঘাঁটি বললেও অত্যুক্তি হবে না। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় চীন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, সেহেতু কোনো কারণে আরেকটি প্রক্সি লড়াই শুরু হলে তা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যেমন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য, ভোজ্য তেল, সার ও জ্বালানি সরবরাহকারী, তেমনি চীন বিশ্বের ভোগ্যপণ্যের প্রধান ভান্ডার। চীনা পণ্য ছাড়া দুনিয়াবাসীর দিন চলে না। বাস্তবতার নিরিখেই আমরা চাই চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের যেন আর অবনতি না ঘটে। বিশ্বশান্তির স্বার্থে সব পক্ষকে সুমতির পরিচয় দিতে হবে।