শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অহংকার ও আত্মম্ভরিতা

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

অহংকার ও আত্মম্ভরিতা

আত্মার ব্যাধিসমূহের মধ্যে অহংকার ও আত্মম্ভরিতা হচ্ছে গুরুতর একটি ব্যাধি। অহংকার মানে হচ্ছে নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় জ্ঞান করা এবং অন্যকে তুচ্ছ ও নিকৃষ্ট মনে করা। দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বপ্রথম অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করেছে শয়তান। এ সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ ইরশাদ করেন : (অভিশপ্ত শয়তান বলে) আমি তার (আদম) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছ এবং তাকে কর্দমাক্ত মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছে (সুরা আরাফ আয়াত-১২) ইবলিশের এ ধৃষ্টতা পূর্ণ উক্তির পর আল্লাহ বললেন, তুমি এই স্থান হতে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে তা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও, তুমি অধমের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আরাফ আয়াত-১৩) অহংকারের কুফল অনেক বেশি। অহংকারী ব্যক্তি যেহেতু নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মনে করে, এ কারণে সে অন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা পানাহার ও কথাবার্তা বলাকে নিজের মর্যাদার খেলা মনে করে। যখন সে মানুষের সঙ্গে মিলিত হয় তখন কামনা করে যে সব মানুষ তাকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করুক। ওই কারণেই আল্লাহ দাম্ভিক ও অহংকারী সব ব্যক্তিকেই অপছন্দ করেন। কোরআন মাজিদে আল্লাহ ইরশাদ করেন, আল্লাহ কোনো উদ্যত অহংকারীকে পছন্দ করেন না (সুরা লোকমান আয়াত-১৮)।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ ইরশাদ করেন, বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইজার কেউ যদি এ দুটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (মুসলিম শরিফ) অহংকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম, এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার অন্তরে এক জাররা (অণু) পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম শরিফ) বস্তুত এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে অহংকার ও আত্মম্ভরিতার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে সাধারণভাবে মানুষ বঙ্ক কুল, রূপ-সৌন্দর্য, মাল-দৌলত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, শক্তি-সমর্থ, বন্ধু-বান্ধব ও সাহায্যকারীর আধিক্যের কারণেই অহংকারী হয়ে থাকে। আমরা সামান্য একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারি, যে মহান রব্বুল আলামীন আমাদের সামান্য এক ফোঁটা নাপাক পানি থেকে মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি সুন্দর অবয়ব ও আকৃতি দান করেছেন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ষষ্ঠবকে পূর্ণাঙ্গতা ও সৌন্দর্যতা দিয়ে সাজিয়েছেন। অথচ সেখানে আমার কোনো ইচ্ছা-অনিচ্ছার সুযোগ ছিল না। কে আমার মা-বাবা হবেন কোথায় আমার বসবাস হবে কতটুকু আমার হায়াত হবে, দুনিয়ার জিন্দেগি আমার কেমন হবে? এর কোনো কিছুতেই আমার হাত ছিল না। একমাত্র আল্লাহ আমাকে যেমনি সৃষ্টি করেছেন তেমনি আমি হয়েছি। সুতরাং আমার কোনো সৌন্দর্যতায় আমি অহংকারী হয়ে যাওয়া, আর অপরের দিকে বাঁকা চোখে তাকানোর চেষ্টা করা, মূলত আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতকে অস্বীকার করা এবং সব গুণগান নিজের বলে দাবি করা। এর ফলে সে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে কুফরি করল এবং নিজের বলে দাবি করে শিরক করল। এর ফলে আল্লাহর নেয়ামত স্বীকার করে তার শুকরিয়া আদায় করা তার পক্ষে কোনোকালেও সম্ভব হবে না এবং আল্লাহপাকের সামনে নিজের গোলামি প্রকাশ করারও আগ্রহ সৃষ্টি হবে না। বরং আল্লাহর দেওয়া বিধিনিষেধ ও ইসলামী কার্যকলাপ তার জন্য অপছন্দনীয় ও অসহ্য হয়ে যাবে। এক সময় মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে লেগে যাবে। ফলে তার দুনিয়া এবং আখেরাত উভয়টি ধ্বংস হয়ে যাবে। এ জন্যই অহংকার ও আত্মম্ভরিতা ইসলামে কবিরা গুনাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা সে যা নিয়ে অহংকার করছে তার কোনোটারই সে মালিক নয়। বরং সবকিছু আল্লাহপাক দিয়েছেন এবং যে কোনো মুহূর্তে তিনি তার কাছ থেকে সবকিছুই ছিনিয়ে নিতে পারেন। এ জন্য সর্বাবস্থায় আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। 

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর