শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নারী অধিকার নিয়ে ভুল ধারণা ছড়াল কারা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নারী অধিকার নিয়ে ভুল ধারণা ছড়াল কারা

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মুসলিম নারীর অগ্রগতির পেছনে দুটি ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে। একদল মুসলমান বিশ্বাস করেন-কেবল ঘরের কাজ করার জন্যই নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী-সন্তানের দেখাশোনা ছাড়া নারীর জন্য অন্য কাজ করা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। এরকম বিশ্বাস পোষণকারীদের বড় একটা অংশ কঠোরভাবে ধর্মের বিধি-বিধান পালন করে থাকেন। আরেক শ্রেণির মুসলমান বিশ্বাস করেন, ইসলামে নারীর কোনো মর্যাদা নেই। নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারটি ইসলামে পছন্দনীয় নয়। এ শ্রেণির মুসলিম ধর্মকর্মে খুব একটা আগ্রহী নয়। এরা নারীর মর্যাদার ব্যাপারে এতটাই হতাশ যে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে নারীর আসল মর্যাদা মনে করে সে অনুযায়ী চলাকে আবশ্যক করে নিয়েছে। অথচ পাশ্চাত্যের উন্মত্ত যৌনতা ও নারীর খোলামেলা পোশাকে চলাফেরা না ইসলামে অনুমোদিত, না আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে স্বীকৃত। নারীর মর্যাদার বিষয়ে এ দুটি ধারণাই ভ্রান্ত। এ ভুল ধারণা বিস্তার লাভ করেছে মূলত কোরআন-সুন্নাহর ইলম না থাকার কারণে। ইসলাম না নারীকে ঘরে বন্দি রাখায় বিশ্বাসী আবার নারীকে খোলামেলাভাবে বাইরে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষেও নয়। নারীর মর্যাদা সম্মান পাশ্চাত্যের অনুকরণের মধ্যে নয়। আবার পাশ্চাত্যের আদর্শে জীবনযাপনের মধ্যে নারীর স্বাধীনতা রয়েছে এমনটিও বলা যাবে না। আসলে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে এবং ইসলামী চরিত্র ও মূল্যবোধের ব্যাপারে বেপরোয়া মনোভাব পোষণের কারণেই ইসলামে নারীর মর্যাদার ব্যাপারে এসব ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। ইসলাম চায় কোনো নারী অজ্ঞ না থাকুক। ইসলাম ও অজ্ঞতা পরস্পর বিরোধী। প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর ওপর ইসলাম জ্ঞানার্জন ফরজ করেছে। নারীর অধিকার সংরক্ষণে অন্য সব আদর্শের চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ইসলাম। শরিয়তে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম হারাম করা হয়েছে, কিন্তু নারীর জন্য এর অনুমতি রয়েছে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও নারীর সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নারীর সার্বিক ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব বিয়ের আগে বাবার এবং বিয়ের পর স্বামীর কাঁধে অর্পণ করেছে ইসলাম। নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ শেষে স্বীকার করেছেন, ১৪০০ বছর আগে ইসলাম নারীকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে আজও সে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না নারীরা। অনেকেই শুনে অবাক হবেন, ইসলাম নারীকে সৌন্দর্য রক্ষা ও সৌন্দর্য চর্চার অনুমতি দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পাশ্চাত্য চিন্তা থেকে ইসলামের ভাবনা পুরোপুরি আলাদা এবং যুক্তিসংগত। পাশ্চাত্য ধারণা মতে, নারী সবার সামনে তার সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু ইসলাম সে কথা বলে না। ইসলাম বলে, নারী কেবল তার স্বামীর সামনেই সৌন্দর্য উন্মুক্ত করবে। এর ফলে নারীর নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, একইভাবে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আরও মজবুত হবে। আজকের দিনে পাশ্চাত্যের দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের জীবনে বন্ধন নেই। স্বামী থাকে এক জায়গায়, স্ত্রী রাত কাটায় অন্য কারও সঙ্গে। এর অনেক কারণের মধ্যে এটাও একটা কারণ যে, পাশ্চাত্যে নারীর সৌন্দর্য যেখানে-সেখানে প্রকাশের অনুমতি রয়েছে। অনেকেই বলে ইসলাম নারীকে সমান অধিকার দেয়নি। অনেক ইসলামপ্রিয় মানুষের মুখেও এ কথা শোনা যায়। প্রকৃত সত্য হলো, ইসলাম নারীকে পুরুষের সমান অধিকার তো দিয়েছেই, কোথাও কোথাও পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছে। মূলত মানুষ হিসেবে আল্লাহর কাছে নারী-পুরুষ দুই শ্রেণিই সমান এবং তাদের ইবাদতও আল্লাহর কাছে সমানভাবে গৃহীত হয়। নারীর ইবাদতের সওয়াব কম আর পুরুষের ইবাদতের সওয়াব বেশি এমনটি নয়। আবার মা হওয়ার কারণে নারীর মর্যাদা তিন গুণ বেশি দেওয়া হয়েছে। এখানে পুরুষকে খাটো করে নারীকে বড় করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ! উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীর সম্পত্তি পুরুষের চেয়ে অর্ধেক নির্ধারণ করেছে ইসলাম। এটাও নারীকে বেশিই দেওয়া হয়েছে। কেননা, ‘নারী তার বাবা, স্বামী, ছেলে ও মায়ের সম্পত্তি থেকে অংশ পেয়ে থাকে’। কিন্তু ছেলে এত জায়গা থেকে পায় না। তাছাড়া যে নারী এত জায়গা থেকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি পেল তার কিন্তু বাধ্যতামূলক কোনো ব্যয়ের খাত নেই। তাই ইসলাম নারীকে অধিকার ও স্বাধীনতা দুটোই দিয়েছে- এ কথা অনেক অমুসিলমও অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

 

সর্বশেষ খবর