শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

একাত্তরে গণহত্যা

ক্ষমা চাইতে হবে পাকিস্তানকে

মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা তথা জাতিগত নিধনযজ্ঞের সূচনা হয়েছিল ৫২ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে। হালাকু, চেঙ্গিস খান ও হিটলারের বশংবদ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ওই রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালির ওপর। শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের পৈশাচিক হামলা। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালির ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সে সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে সামরিক জান্তা। একাত্তরের মার্চের শুরুতেই পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের আহূত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের দমনে কৌশলী ভূমিকা নেয়। আলাপ-আলোচনার আড়ালে বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেয় তারা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে অপারেশন সার্চলাইট শুরুর নির্দেশ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া। সেদিন মধ্যরাতে রাজধানী ঢাকায় মেশিনগান, কামান, বিক্যুয়লস রাইফেল, মর্টার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ রাজধানীর প্রায় সর্বত্র তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সারা দেশে যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় তা অব্যাহত থাকে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল তা সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ। পাকিস্তান সরকার যুদ্ধাপরাধে জড়িত সেনাদের বিচারের প্রতিশ্র“তি দিলেও তা পালন করেনি। নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার মানবিক আচরণও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের কয়েক শ রোহিঙ্গা হত্যাকান্ডকে ‘জেনোসাইড’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাকিস্তানের মুরব্বি হিসেবে ভূমিকা পালনকারী ওই দেশটির উচিত একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞকে একই অভিধায় স্বীকৃতি দেওয়া। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে পাকিস্তান তার অতীতের অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইবে-এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর