মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্ব আদালতে গণহত্যার স্বীকৃতি

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্ব আদালতে গণহত্যার স্বীকৃতি

এটা খুবই বেদনাদায়ক যে, স্বাধীনতার ৫২-৫৩ বছরেও পাকিস্তানিদের নির্মম গণহত্যার কোনো বিচার হয়নি, বিশ্বদরবারে এর কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। অথচ পৃথিবীর কত দেশে কত ছোট ছোট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনার জন্য দায়ী দেশ বা জনগোষ্ঠীকে জবাবদিহি করতে ও ক্ষমা চাইতে হয়েছে। যেহেতু পৃথিবীর বড় বড় মোড়লরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল সেহেতু তাদের আবার জবাবদিহি! তারা সিনা টান করে বিশ্বময় ছড়ি ঘোরাচ্ছে। সবলের আবার অপরাধ কী? সবল যা করবে তা-ই ন্যায়, তা-ই সত্য। এই গাওজুরি শতবর্ষ এমনকি তারও আগে থেকে চলে এসেছে। সারা বিশ্বের শক্তিধররা মনে করে আসছে, এভাবেই চলবে চিরকাল। এর কোনো বদল হবে না। দুর্বলকে শাসন করে পীড়ন করে সবলরা চিরকাল পার পেয়ে যাবে। হয়তো আর বেশিদিন এভাবে চলবে না। জগতের বদল হবেই। ন্যায়-অন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠবে নির্যাতিত সাধারণ মানুষের সামনে। তখন তারা অবশ্যই রুখে দাঁড়াবে। তখন একটা বিচার হবেই হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অনেক বড় বড় শক্তিধরের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে। বিশ্বমোড়লরা ভাবতেই পারেনি সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালি পাকিস্তানি পশুশক্তির হাত থেকে তাদের মাতৃভূমি মুক্ত করতে পারবে। ভেতো বাঙালি এভাবে একটা যোদ্ধা জাতিকে পরাজিত করতে পারে তা পৃথিবীর অনেকের চিন্তা-চেতনা তো দূরের কথা, স্বপ্নেও আসেনি। পৃথিবী তখনো বিভক্ত ছিল এখনো আছে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা খুব একটা বেশি দেশের সমর্থন পাইনি। তবে এটা সত্য, পৃথিবীর বহু দেশের বহু মানুষের সমর্থন পেয়েছি। আমাদের প্রধান বিরোধী ছিল আমেরিকা ও চীন। যেহেতু চীনে মুক্ত সমাজ নেই, সেহেতু জনগণের মতামত সরকারের বিরুদ্ধে সেভাবে প্রতিফলিত হয় না। যে কারণে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ততটা বহিঃপ্রকাশ চোখে পড়ে না। তবু বোঝা যায় সাধারণ মানুষের মতিগতি। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নও পক্ষে ছিল না। তারা আগস্টের পর আমাদের সমর্থন করতে শুরু করে। তাদের সমর্থন আমাদের অনেক বেশি সাহসী করে তোলে। ১৯৭১ সালে আজকের ভারত ছিল না। কোনোভাবেই সারা পৃথিবীতে ভারতের আজকের মতো প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল না। রাজনৈতিক প্রভাব, কূটনৈতিক ক্ষমতা, আর্থিক অবস্থা কিছুই ছিল না। ঠিক সে সময় ১ কোটি শরণার্থী প্রতিবেশী ভারতকেও ভাবিয়ে তুলেছিল। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল পশ্চিম বাংলায় নকশালপন্থি আন্দোলনের ভরা যৌবন। কলকাতা মহানগরীতে অনেক বড় বড় ডাক্তার রোগী দেখে দুই টাকার বেশি ফি নিতে সাহস করত না। কারণ নকশালিরা চারদিকে। রাস্তায় টহল দেওয়া পুলিশ অস্ত্রহাতে দাঁড়িয়ে থাকতেও ভয় পেত। পুলিশের হাত থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিত বলে লোহার চেইন দিয়ে তালা মেরে রাখা হতো। ঠিক এ রকম একটা উত্তপ্ত সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সে সময় শুধু একা ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আর কেউ ছিল না। ইসলামী বিশ্ব বিরুদ্ধে, পশ্চিমা দুনিয়া বিরুদ্ধে। অনেকেই ছিল নীরব। পাকিস্তানিদের অত্যাচারে হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়। খুনিরা হাজার হাজার লাখ লাখ ঘরদুয়ার, বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর নানা দেশে প্রচার হওয়ায় ধীরে ধীরে বিশ্বজনমত আমাদের দিকে আসতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা আমাদের সরাসরি বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সেই আমেরিকার লাখো মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানিয়েছে। ব্রিটেনের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ মানুষ আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। অ্যারাবিয়ান দেশগুলোর সাধারণ মানুষ আস্তে আস্তে আমাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা শুরু করে। চীন ছিল পাকিস্তানের একেবারে ঘোরতর সমর্থক। সমর্থক কি বলব, অংশীদার। পাকিস্তানিদের যত সমরাস্ত্র ছিল তার ৭০-৮০ ভাগ চীনের তৈরি। চীন যতটা সম্ভব ততটা করেছে। বরং তাদের সাধ্য-সামর্থ্যরে বাইরেও করেছে। কিন্তু রক্ত যে আরও শক্তিশালী। পবিত্র রক্তের সামনে কামানবন্দুক যে কিছুই না সেটা ভিয়েতনাম যেমন দেখিয়েছে, আফগানিস্তান দেখিয়েছে তেমনি বাঙালিরাও দেখিয়েছে। পাকিস্তান ছিল অন্যায়ের পক্ষে, আমরা ছিলাম ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। ন্যায় ও সত্যকে কেউ কোনো দিন কখনো পরাজিত করতে পারেনি। হাজার বছরের ইতিহাসে কখনো এর ব্যতিক্রম হয়নি। মোহাম্মদ ঘুরির ভারত জয়, ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের কোনোখানেই ন্যায়ের বিপক্ষে অন্যায় কখনো কোনোভাবেই জয়ী হয়নি। তাই সত্যের জয় যখনই হোক হবেই। তাতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু সত্য কোনো দিন পরাজিত-পরাভূত হয়নি, হবে না।

আজ হয়তো সত্য দুর্বল। তাই অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও পাকিস্তানকে বাংলাদেশে গণহত্যার জবাব দিতে হয়নি। তাই বলে কখনো কোনো দিন দিতে হবে না তা কিন্তু নয়। পাকিস্তান আমাদের সবকিছু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। আমরা যাতে বিশ্বদরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারি সেজন্য আমাদের জ্ঞানী-গুণী-বিদ্বানদের তারা হত্যা করেছিল। যাদের অনেকেই নিরুপায় হয়ে তাদের পক্ষাবলম্বন করেছিল তারাও কিন্তু নিস্তার পায়নি। কিন্তু আল্লাহ রাজিখুশি থাকায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। শত্রুর হাতে জাতির নেতা দেশের পিতা বঙ্গবন্ধু অসময়ে অমন নির্মমভাবে নিহত না হলে আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, আমাদের সামাজিক উত্থান হতো সারা পৃথিবীর তাকিয়ে দেখার মতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর গণহত্যার কোনো বিচার পাইনি। বিচার তো দূরের কথা গণহত্যার স্বীকৃতি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া খুব একটা চোখে পড়েনি। এমনকি যারা হত্যা করে এখানে-ওখানে বুক চিতিয়ে বলার চেষ্টা করেছে ‘আমরা হত্যা করেছি’ তাদেরও কোনো বিচার হয়নি। বরং তাদের অনেকেই সমাদরে পৃথিবীর অনেক সভ্য দেশ অসভ্যের মতো আশ্রয় দিয়েছে, সহযোগিতা পেয়েছে। লিবিয়ার মতো দেশ, সে দেশের নেতা কর্নেল গাদ্দাফি ফারুক-রশীদদের জামাই আদরে গ্রহণ করেছিল। সেই কর্নেল গাদ্দাফিকেও ৪২ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকার পর নির্দয়ভাবে নিহত হতে হয়েছে। ভালোভাবে তার দাফন-কাফনও হয়নি। এসবই প্রকৃতির লীলা। সবাই ক্ষমা করতে পারে, কিন্তু প্রকৃতি কোনো অন্যায়কে ক্ষমা করে না। একদিন না একদিন অন্যায়ের শাস্তি হয়ই। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই একসময় আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের নয়, আমার কূটনীতির পরাজয়।’ এ রকম ঘোর বিরোধিতার পরও আমরা শুধু আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে রক্তের সাগরে অবগাহন করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম। এই স্বাধীনতা অর্জনে নয় মাসের স্থলে যদি নয় বছর লাগত তাহলে বাংলার প্রতিটি ঘরে প্রতিটি গ্রামে এর আঁচড় লাগত। সবাই বুঝতে পারত স্বাধীনতা কী, স্বাধীনতা পেতে কত রক্ত দিতে হয়, কত কষ্ট করতে হয়। এখন শুধু রাজাকার-আলবদরদের দোষ দিলে চলবে কেন? যারা রাজাকার-আলবদর বানিয়েছে সেই বাঙালি কর্মকর্তাদের কেন কিছু করা হলো না? কেন তাদের জবাবদিহি করতে হলো না? যেসব বড় বড় বাঙালি কর্মকর্তা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদের যদি সঠিক বিচার করা হতো তাহলে আজকের এ অবস্থা হতো না।

সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি, ২০২২ বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম মহামান্য রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন গঠনের আলোচনায়। আমরা বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ। একে অন্যের প্রতি সব সময় একটা আলাদা দরদ অনুভব করি। করোনা হওয়ায় শরীর বেশ দুর্বল ছিল। দেখা করতে যাওয়ার পথে বাড়ির সিঁড়ির একেবারে শেষ ধাপে পড়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে কোনো ব্যথা পাইনি। কয়েক মিনিট বসে থেকে গাড়িতে উঠেছিলাম। বঙ্গভবনের বারান্দায় গিয়েই হুইলচেয়ার চেয়েছিলাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করে বঙ্গভবন আমার জন্য কোনো হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করতে পারেনি। শেষে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই গিয়েছিলাম। কয় পা আর হবে, এক শ-সোয়া শ পা। যেখানে বহুবার গেছি। জিল্লুর ভাই থাকতে গেছি, তার আগে গেছি, তার আগেও অনেকবার বঙ্গভবনে গেছি। এমনকি স্বাধীনতার পরপরই ২৮ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশের বঙ্গভবনে প্রথম গিয়েছিলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে দেখতে এবং কথা বলতে। সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বেগম নজরুল ইসলাম আমাকে নাতি বলে ডাকতেন এবং খুব ভালোবাসতেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথাবার্তা শেষ হলে তিনি বলেছিলেন, ‘দাদির সঙ্গে দেখা করে যাও’। গিয়েছিলাম দাদিকে দেখতে। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই জড়িয়ে ধরে বুকে তুলে নিয়েছিলেন। সত্যিই তিনি এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন। সেই বঙ্গভবনে রবিবার ২৬ মার্চ সর্বশেষ গিয়েছিলাম। ইফতার সামনে নিয়ে যখন বসে ছিলাম তখন রোজাদারদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কুশল জিজ্ঞাসা করছিলেন। আমরা যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম তার তিন-চার জন আগে থাকতেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ফিরে গিয়েছিলেন। তাই তাঁর সঙ্গে এ যাত্রায় দেখা হয়নি। কিন্তু তাঁর ভাতিজা, তাঁর ভাই অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। সবাই অসাধারণ ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন অনেকক্ষণ আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বড় ভালো লাগছিল। আপনজনের এক অসাধারণ সান্নিধ্য পাচ্ছিলাম। দেখা হয়েছিল আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে। ভদ্রলোক বললেন, আপনাকে দেখে এদিকে এসেছি। বেশ ভালো লেগেছে। অসাধারণ অমায়িক ব্যবহার। যেটা সবারই হওয়ার কথা। কিন্তু তেমনটা সবার নয়। কেমন যেন একটা শুকনো শুকনো ভাব সবার মধ্যে লেগেই থাকে। আমন্ত্রণপত্রে ছিল ‘একক’। তাই এককই গিয়েছিলাম। ভাবনা করে গিয়েছিলাম গ্যাস লাগানো গাড়ি গেট থেকে না ফিরিয়ে দেয়। কারণ অতটা পথ হেঁটে যেতে ভালো লাগে না। কিন্তু দেখলাম, না, কোনো ফিরাফিরি নেই। কোনো কিছু বলল না। শুধু জিজ্ঞাসা করল, গাড়িতে গ্যাস লাগানো আছে? ড্রাইভারের সোজাসাপ্টা উত্তর, হ্যাঁ, আছে। কিন্তু আর কোনো কথা বলল না। সেবার হুইলচেয়ারের দরকার ছিল। কিন্তু এবার কোনো হুইলচেয়ারের প্রয়োজন পড়েনি। পুরো মাঠের এদিক থেকে ওদিক নিজের পায়েই চলাফেরা করেছি। তবে কেন যেন ইফতারি স্বাদ লাগেনি। মাংস খাই না, তাই হালিম এবং বিরিয়ানি কোনোটাই মুখে তুলিনি। বঙ্গভবনের বেশ কিছু অনুষ্ঠানে দেখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গেলে অতিথিদের বড় বেশি অসুবিধা হয়। প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার আগে কারও গাড়ি ছাড়া হয় না। সম্মানি লোকেরাও তখন আর সম্মান পায় না। রাষ্ট্রদূতদের গাড়ি ঠিকভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। দু-একটা বেরিয়ে এলে তাদের সঙ্গেও খুব একটা ভালো ব্যবহার করা হয় না। এটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিবর্গ আদৌ জানেন কি না জানি না। তবে ব্যাপারটা খুব একটা শোভন নয়। অনেক বছর ভারতে ছিলাম। সেখানকার অনেক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু কারও জন্য কারও বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়েছে তেমনটা মনে হয়নি। শ্রী প্রণব মুখার্জি যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, তাঁর ছোট ছেলে পিন্টুর বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। তিনি হাত ধরে অনেকের সঙ্গে দেখা করিয়েছিলেন। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী মনমোহন সিং, অটল বিহারি বাজপেয়ি, শ্রী চন্দ্র শেখরসহ অনেকেই ছিলেন। যখন রাষ্ট্রপতি আসেন তখনো অনুষ্ঠানস্থলের অবস্থা প্রায় একই ছিল। মান্যবর, গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা অনুষ্ঠানে থাকতেই আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। গাড়ি পেতে এক মিনিটও দেরি করতে হয়নি। কিন্তু আর কোথায় কেমন হয় জানি না। রাষ্ট্রপতি ভবনে সাধারণ অতিথিদের বেরিয়ে আসতে এক-দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এবার যেমন রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশে কোনো অসুবিধা হয়নি, ঠিক তেমনি আমার গাড়িচালক যীশুকে ফোনে পেয়েছিলাম। যীশু বলেছিল, স্যার, মূল গেট দিয়ে বের হয়ে একটু বাঁয়ে এলেই ছোট গেট। তার পাশেই আমি দাঁড়িয়ে আছি। তা-ই করেছিলাম। তবে বঙ্গভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিউটি করা অনেকেই যারপরনাই সম্মান দেখিয়েছে। অনেকেই কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। মূল ফটক দিয়ে যখন বের হচ্ছিলাম তখন একজন বলছিলেন, যেতে দেব, না আটকাব? মনে হয় সুবেদার র‌্যাংকের কেউ বারবার বলছিল, না না স্যারকে থামাব কেন? উনাকে যেতে দিন। তাই কেউ কোথাও বাধা দেয়নি, আটকায়নি। কেন যেন একটা চিন্তা মাথা থেকে কিছুতেই দূর করতে পারছি না। তা হলো স্বাধীনতার প্রতি আমাদের কি আকর্ষণ কমে গেল? ২০/৩০ বাবর রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম পৌনে ৪টায়। রাস্তা ছিল একেবারে ফাঁকা। ১০-১২ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলাম তারেক ৩১৭ নম্বর কেবিনে একটা অপারেশনের জন্য ভর্তি। তাই তাকে দেখে সাড়ে ৪টায় বেরিয়েছিলাম। কিন্তু কোথাও একটা জাতীয় পতাকা দেখলাম না। কেমন যেন উদাস উদাস ঠেকছিল, এজন্য লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ! কেন কী কারণে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠানও খুব যে ভালো হয়েছে বলা যাবে না। এমনি আনুষ্ঠানিকতা ছিল দারুণ সুন্দর। দেশাত্মবোধক গান, হামদ-নাত সবই ঠিক ছিল। কিন্তু অতিথি কম ছিল। কেন কম ছিল বলতে পারব না। তবে আমার পাশে বসা আবদুল্লাহ বীরপ্রতীক একটা সুন্দর কথা বলেছে, ‘করোনা পরীক্ষার কারণেই হয়তো কম অতিথির আগমন।’

 

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর