বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

রমজানে বেশি বেশি তওবা করি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসেই নাজিল হয়েছে কোরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সৎ পথযাত্রীদের সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা আর ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। (সুরা বাক্কারা-১৮৫)। সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। তিনিই সব ক্ষমতার মালিক এবং ইবাদতের যোগ্য একমাত্র মাবুদ। তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে এবং ফিরে যেতে হবে। তিনি যে বিধান দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে বিশ্বনবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)কে হুবহু অনুসরণ করতে হবে।

আমরা আজ অনেকেই তা ভুলে যাচ্ছি। আমরা আল্লাহকে সর্বশক্তিমান কেবল বলার জন্য বলছি। প্রকারান্তরে অনেকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজেদের ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর প্রশংসা বাদ দিয়ে মানুষের প্রশংসায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কেয়ামত সন্নিকটস্থ ছোট ছোট আলামতগুলোর মধ্যে এ মনোভাব পোষণসহ আরও অনেক আলামত ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। তন্মধ্যে ভূকম্পন এখন প্রায়শঃই পৃথিবীর সর্বত্র অনুভূত হচ্ছে। মরুভূমি সবুজ হচ্ছে। মিথ্যাচার সত্যে পরিণত, পিতা-মাতাকে সন্তান এবং সন্তানকে পিতা-মাতা হত্যা করছে, নীচ ও হীন মনের লোকেরা সম্পদশালী ও বিলাসী জীবনযাপন করছে। ভদ্রলোক অপমানিত হচ্ছে। আমানতের খেয়ানত হওয়াসহ সারা বিশ্বে উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। ভূকম্পন যেভাবে হচ্ছে তাতে নিয়ম-শৃঙ্খল বহির্ভূত ভবনগুলো ধসে পড়লে উদ্ধার কাজ তো দূরে থাক (আল্লাহ ক্ষমা করুন) মানুষের কবর ওই ভবনগুলোর মধ্যে হয়ে যাবে, গায়েবি জানাজা পড়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। তাই আসুন সময় থাকতে আমরা তওবা করি। তাই রমজানই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট তওবার সময়, এ জন্য আমাদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থান/অবস্থান থেকে তওবা করে মিথ্যা-অনাচার, কুপ্রবৃত্তিসহ ইসলাম যা সমর্থন করে না ওইসব কর্ম ও পথ পরিহার করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সবাই আল্লাহর গোলাম, কেবল তাঁরই দাসত্ব করতে হবে। ওই পথ উপেক্ষা করে যদি মানুষের গোলামী করি এবং মানুষকেই রিজিকদাতা ও জীবিকানির্বাহের উৎস মনে করি তাহলে এ মানসিকতা পোষণকারীরা দাজ্জালকে আল্লাহ বলে স্বীকার করে নেবে (নাউজুবিল্লাহ)। তওবার দ্বার উন্মুক্ত তবে রমজান সর্বোৎকৃষ্ট এ জন্য যে, প্রত্যেক মুসলমান রোজারত অবস্থায় একটি মাস ধারাবাহিকভাবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, অশ্লীলতা-গুনাহের সম্পৃক্ত কার্যাবলী থেকে বিরত থাকি এবং বাকি সময়ে রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকি তাই সবার অন্তর ও হৃদয়ে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়। এ ৩০টি দিনে প্রত্যেকেই যখন শরিয়াহর বিধিবিধান বহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকতে থাকতে দীনের পথে চলার অভ্যস্ত হয়ে যাই তখন আল্লাহর কাছে তওবা করে সাহায্য প্রার্থনা করলে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করে পাপের পথ থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। আমাদের তাঁর অভিমুখী করে দেবেন। মানুষের ভুল হবে, এ জন্য ভয় পেলে হবে না। মনে রাখতে হবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তার প্রমাণ আল্লাহর বাণী এবং বিশ্বনবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস। সর্বাগ্রে কোরআনুল কারিমের বাণীর দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলেই আমরা তওবা করতে উদ্বুদ্ধ হব। সুরা জুমার আয়াত নং-৫৩ আল্লাহ সুবহানুতায়ালা বলেছেন, হে আমার বান্দারা তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছ তারা আমার রহমত প্রাপ্তি থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। এ আয়াতটি হচ্ছে গুনাহগারদের জন্য সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আয়াত। দ্বিতীয়ত আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, বিশুদ্ধ তওবা। আশা করা যায় তিনি তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। (সুরা আত-তাহরিম-০৮)।

(৩) আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আরও বলেন, তাহারা কি জানে না আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল এবং বান্দাদের সদকা গ্রহণ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। (সুরা : তওবা-১০৪)।

(৪) সালাত পরিত্যাগকারী এবং জাকাত প্রদান না কারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, যারা সালাত আদায় এবং জাকাত প্রদান করে না তারা যদি তওবা করে সালাত আদায় এবং জাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই অর্থাৎ তারা মুমিন হয়ে যাবে। (সুরা : তওবা-১১)।

(৫) সীমা লঙ্ঘনকারী ও অপবাদ আরোপকারীদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, পরবর্তীতে তারা যদি তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে নেয়, জেনে রাখো আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। (সুরা : নূর-০৫ ও মায়িদা-৩৯)।

(৬) বেইমান ও অসৎ কর্মচারীদের উদ্দেশে আল্লাহ বলেন, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎ কর্ম করে এবং এ পথে অবিচল থাকে আল্লাহ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দেবেন পুণ্যের দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। (সুরা-ফুরকান-৭০)।

কোরআন মাজিদে আরও অনেক আয়াতে তওবা কবুল করার কথা বলা হয়েছে। রসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, আদম সন্তান পাপী। সবচেয়ে উত্তম পাপী সে যে তওবা করে। (তিরমিজি হাদিস নং-৩৫৪০)। রসুল (সা.) আরও বলেন, তোমরা যদি গুনাহ না কর, তবে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দেবেন এবং সে স্থলে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন যারা গুনাহ করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে তখন তিনি তাদের ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম)। তবে এ তওবা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না যারা মৃত্যু জেনে অর্থাৎ মৃত্যুর সুস্পষ্ট আলামত প্রকাশিত হওয়ার পর তওবা করবে। (সুরা : নিসা-১৮)।

তাই আসুন, পবিত্র কোরআনুল মাজিদের তওবার বাণীসমূহ ও রসুল (সা.)-এর হাদিসে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থান থেকে নিজেদের সংশোধনকরত তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি এবং এ পথে অবিচল থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাই। এ জন্য রমজান মাসই হচ্ছে উৎকৃষ্ট সময়। আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের সঠিকভাবে তওবা করার তৌফিক দান করুন। নিশ্চিয়ই তিনি ক্ষমাশীল।  আমিন।

 

                লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা

সর্বশেষ খবর