মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কর্তাভজা সম্প্রদায়

কর্তাভজা সম্প্রদায়

কর্তাভজা আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদ থেকে উ™ূ¢ত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায়। এ মতবাদের মূল গুরু ছিলেন আউলচাঁদ (আনু. ১৬৯৪-১৭৭০)। তিনি মুসলমান না হিন্দু ছিলেন তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তাঁর আউল নাম থেকে মনে করা হয় তিনি মুসলমান ছিলেন, কারণ আউল বাউল মতবাদেরই একটি শাখা। তবে তিনি নিজে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তাঁর প্রথম জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। প্রচলিত লোককাহিনি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার উলা গ্রামে পান খেতে একটি নবজাত শিশু পাওয়া যায়। খেতের মালিক মহাদেব বারুই তাঁকে লালনন্ডালন করেন। বড় হয়ে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং ফকির হিসেবে ঘুরে বেড়ান। এ সময় তাঁকে সবাই আউলচাঁদ হিসেবে জানত। আউল মহাপ্রভুকে বলতেন কর্তা, ঈশ্বর বা খোদা নয়। সংগীত ছিল তাঁর সাধনার প্রধান মাধ্যম। তিনি তাঁর অনুসারীদের বলতেন ঈশ্বর বা খোদাজ্ঞানে কর্তার উপাসনা করতে। তৎকালীন লোকেরা তাই এ সম্প্রদায়কে বলত কর্তাভজা। তাঁর অনুসারীর অধিকাংশই ছিল হিন্দু এবং তারা তাঁকে চৈতন্যদেবের অবতার মনে করে পূজা করতেন। কালক্রমে কর্তাভজা সম্প্রদায় কলকাতা, চব্বিশ পরগনা, সুন্দরবন ও সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ মতবাদের একজন অনুসারী ছিলেন কলকাতার ভূকৈলাসের জয়নারায়ণ ঘোষাল। তিনি ছিলেন একজন বানিয়া, ধনী জমিদার এবং গীতিকার। এ মতের অনুসারীর মধ্যে আরও ছিলেন বিখ্যাত কবিয়াল আন্দিরাম, কানাই ঘোষ, কৃষ্ণদাস, নিধিরাম ঘোষ, পাঁচকড়ি (পাঞ্চুরুই দাস) এবং মনোহর দাস। কর্তাভজা সম্প্রদায় ধর্ম বা নরনারীর পার্থক্য স্বীকার করত না। মতবাদটি আঠারো শতকের শেষে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বেশ প্রভাবশালী ছিল, কিন্তু বিশ শতকের শুরুতে হিন্দু ও মুসলমানের সংস্কার আন্দোলনের ফলে তা দুর্বল হয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর