শিরোনাম
বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

এত বড় স্পর্ধা এদের কে দিল?

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

এত বড় স্পর্ধা এদের কে দিল?

বাঙালির ভাষা এবং সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানিদের অগ্রহণযোগ্য আগ্রাসন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-আন্দোলনের অন্যতম কারণ। তারা শুধু বাংলা ভাষার ওপর খড়গ চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, আমরা যেন রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দ, মাইকেল, লালন, বিদ্যাসাগর, শরৎ, বঙ্কিম, সুনীলের সাহিত্য থেকে বঞ্চিত থাকি, সুচিত্রা-উত্তমের ছবি দেখতে না পারি, হেমন্ত, সন্ধ্যা, গীতা, মান্না, প্রতিমা, সতীনাথ, মানবেন্দ্র, সলিল চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন, দেবব্রত, কণিকা, সুচিত্রা মিত্র, চিন্ময়, সাগর সেন প্রমুখের গান, দেব দুলাল, সৌমিত্র এবং কাজী সাব্যসাচির গ্রন্থনা কর্ণে ধারণ করতে না পারি, সে ব্যবস্থা করেছিল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। যার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের ফুঁসে উঠতে হয়েছিল, গড়ে তুলতে হয়েছিল ছায়ানট, উদীচী প্রভৃতি সংস্থা।

৭১-এ শোচনীয় পরাজয়ের পর বাংলাদেশে লালিত কিছু বাঙালি পরিচয়ধারী পাকিস্তানি পুডল আড়াল হয়ে গেলেও ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেই অপশক্তি দলবদ্ধ হয়েছিল খুনি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে, যাকে সেই পরাজিত পাকিস্তানপন্থি অপশক্তি তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে পেয়েছিল। পরবর্তী ২১ বছর দেশ শাসন করেছে সেই পাকিস্তানি চরেরা আর সে সময় ৭১-এর পরাজিত অপশক্তি, যাদের মধ্যে ধর্মান্ধরাই বেশি, দুধ-কলা দিয়ে লালিত হয়ে কিছুটা হলেও শক্তি অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, আইএসআই-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাঁটিতে পরিণত হয়, ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাস পরিণত হয় ষড়যন্ত্রের সূতিকাগারে, সিরাজউদ্দৌলার সময়ে কাশিমবাজার কুঠির মতো। ২০০৯ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ক্ষমতায় আসার পর এই ধর্মান্ধ অপশক্তি বহুলাংশে পরাস্ত হলেও পুরোপুরি বিলীন হয়নি, যে কথা সপ্তাহ খানেক আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এভাবে বলেছিলেন- “আমরা পাকিস্তানি সৈন্যদের পরাজিত করেছি বটে; কিন্তু পাকিস্তানি চেতনার লোকদের পুরোপুরি পরাস্ত করতে পারিনি, পাকিস্তান জিন্দাবাদপন্থি এ লোকগুলো ছদ্মবেশে আজও আমাদের মধ্যেই বিচরণ করছে।” প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ এলেই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়, নগ্নতায় ভরে যায় তাদের পাকিস্তান প্রেম। তাদের নির্লজ্জ দাবি, পয়লা বৈশাখ নাকি হারাম। তারা আরও বলে, মঙ্গল শোভাযাত্রা নাকি ইসলাম ধর্মবিরোধী। পয়লা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে সম্রাট আকবর কর্তৃক দিবসটিকে বাংলা পঞ্জিকার প্রথম দিন হিসাবে গবেষণার মাধ্যমে চিহ্নিত করার পর। পৃথিবীর প্রতিটি জাতি, প্রতিটি মানবগোষ্ঠীই তাদের নববর্ষকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং উদযাপন করে থাকে। পয়লা বৈশাখের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, যেটিও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব এবং মর্যাদাপূর্ণ। গ্রামাঞ্চলে পয়লা বৈশাখে যে মেলা হয়, তা কবে শুরু হয়েছিল, সেটি নির্ধারণ করা অসম্ভব। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রায় প্রতিটি মানুষই সেসব মেলায় অংশ নিয়ে পুরো দিনটি কাটিয়ে দেন উৎসবের মাধ্যমে। বিভিন্ন ব্যবসাকেন্দ্রে সেদিন হালখাতা খোলা হয়, যেখানে পুরনো দেনাদাররা তাদের দেনা শোধ করে থাকেন। ‘মঙ্গল’ শব্দটি বাংলা ভাষার একটি অত্যন্ত পবিত্র শব্দ। মঙ্গল মানে শুভ। বছরটি যেন শুভ বার্তা বয়ে আনে, সেই কামনা করেই আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠান করে থাকি। এটিকে যারা ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন, তারাও জানেন তাদের এই দাবির কোনো ধর্মীয় ভিত্তি নেই। তারপরও তাদের বিরোধিতা নেহাতই এ জন্য যে, মঙ্গল একটি বাংলা শব্দ। বাংলা ভাষার প্রতি এদের অনীহা এবং শ্রদ্ধাহীনতা প্রাচীনকাল থেকেই। পাকিস্তানি আমলে পূর্ববাংলার লোকদের কোণঠাসা করে রাখার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা বাংলা বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল তাদের কিছু তথাকথিত বাঙালি পুডল-এর মাধ্যমে। বাংলা ভাষাকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা, পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলি জিন্নার মুখ থেকেই উচ্চারিত হয়েছিল। মধ্যযুগে যখন কোটি কোটি হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তখন কিছু কিছু নব্য মুসলমানও তাদের নিজস্ব বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলেন বলে সে যুগের প্রখ্যাত বাঙালি কবি আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতা থেকে আন্দাজ করা যায়, যেখানে তিনি লিখেছিলেন “যেসবে বঙ্গেত জন্ম্যি হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুড়ায়, নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়। মাতা-পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি, দেশি ভাষা উপদেশ মনে হিতো অতি।” কবি আবদুল হাকিম বাংলায় জন্ম নেওয়া যেসব বাংলা ভাষা বিরোধীদের বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছিলেন, সেই শ্রেণির তথাকথিত বাঙালি আমাদের দেশে আজও আছে, যারা সাম্প্রদায়িকতার উন্মাদনা প্রচারের জন্যই বাংলা ভাষাবিরোধী। আমাদের স্বাধীনতার পর বাংলা রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেলেও ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পাকিস্তানি দর্শনের পুরোধা জিয়াউর রহমান বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে এক রকম জেহাদ ঘোষণা করে সব বাংলা শব্দ যথা- জয় বাংলা, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ বিমান মুছে ফেলেছিল তার পাকিস্তানি প্রভুদের নির্দেশে। জিয়া জীবিত না থাকলেও তার বাংলাবিরোধী অনুসারীদের অভাব নেই। তাদের অপকর্মে ইন্ধন দিয়ে বেড়াচ্ছে পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী, আইএসআই। বিশেষ করে ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের মাধ্যমে।

পাকিস্তান যে এখনো স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারছে না, এখনো তারা ’৭১ সালে ৩০ লাখ লোককে হত্যা (ন্যূনতম হিসাবে) এবং পাঁচ লাখ নারী ধর্ষণের জন্য, ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য অনুতপ্ত নয়, সে কথা কয়েক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ৭১-এর হত্যাযজ্ঞের জন্য ক্ষমা চাওয়া নাকি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, আমাদের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়া, যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচার করা, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতিপূরণ দেওয়া তো দূরের কথা সম্প্রতি তার চেয়ে আরও বেশি জঘন্য পাকিস্তানি ধৃষ্টতার একটি ঘটনা ঘটেছে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে। সেখানে বাংলাদেশ মিশন ৭১-এ পাকিস্তানি গণহত্যার স্মৃতি বহনকারী কিছু প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। কিন্তু এটি করার পর পাকিস্তান সরকারের দাবির মুখে জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনীটি বন্ধ করে দেয় বলে একটি পাকিস্তানি পত্রিকার খবরে প্রকাশ। এ বিষয়ে গত ৪ এপ্রিল পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনৈক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে উল্লেখ করেন, “জাতিসংঘ নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন কর্তৃক ১৯৭১ সালের ঘটনাবলির একতরফা এবং বিতর্কিত ঘটনাবলি প্রচারের জন্য তথাকথিত ছবি প্রদর্শনীর যে ব্যর্থ পদক্ষেপ নিয়েছিল, জাতিসংঘ পাকিস্তান সরকারের দাবির মুখে সেই একতরফা পদক্ষেপ বন্ধ করে এবং বিতর্কিত ছবিগুলো নামিয়ে ফেলে যথার্থ কাজটি করেছে।” পাকিস্তানি মুখপাত্র আরও বলেছেন, “বাংলাদেশ মিশন ইতিহাসকে বিকৃত করে সেই প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিল।” তিনি আরও বলেছেন, “১৯৭৪ সালে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তার মাধ্যমেই ১৯৭১ সালের সব বিষয়ের সমাধান হয়ে গেছে।” পাকিস্তানি সেই মুখপাত্রের ভাষ্যটি সে দেশের ‘দি নেশন’ নামক পত্রিকার ৪ এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে খবরটি বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে দেখা যায়নি। এমনকি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো অবস্থান নিয়েছিল বা প্রতিবাদ করেছিল কি না তাও আমরা জানি না। পাকিস্তানি মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পাকিস্তানের ‘দি নেশন’ পত্রিকায় যা লেখা হয়েছে, তা সঠিক হলে এটিকে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবেই মনে করতে হবে, কেননা নিউইয়র্কে আমাদের মিশন আয়োজিত ৭১-এর গণহত্যার ছবি প্রদর্শনের যে আয়োজন করেছিল, তা যদি সত্যি সত্যি পাকিস্তান সরকারের দাবির মুখে জাতিসংঘ বন্ধ করে দিয়ে থাকে, তাহলে তারচেয়ে বেশি কূটনৈতিক লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে? পাকিস্তানি প্রতিনিধি নির্লজ্জসুলভ ভাষায় বলেছেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তিতে নাকি সব মিটে গেছে। এহেন মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে থাকলে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের কাছে পরাজয় মেনে নেওয়ারই নামান্তর। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয়েছে  কি না, তাও জানা নেই। সম্প্রতি জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা ইনস্টিটিউটের সদ্য অব্যবহিত প্রাপ্ত প্রধান, তার যে বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিকৃত করেছিলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই বইটি লেখার জন্য পাকিস্তান থেকে অর্থ প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেই বইটি লিখেছিলেন তার এক পাকিস্তানি বান্ধবীর দাবি অনুসারে, যে মহিলা পাকিস্তানের একটি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পয়লা বৈশাখকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন, যারা পয়লা বৈশাখ মানে না, তারা বাঙালি নয়। তিনি বলেছেন, যত দিন আওয়ামী লীগ থাকবে, ততদিন পয়লা বৈশাখও থাকবে। মাননীয় তথ্যমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রীও একই ধরনের কথা বলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলের নেতাদের উক্তি দেখে এমন ভরসা পাই যে, দেশটিকে পাকিস্তানে পরিণত করার দুরভিসন্ধি কখনো সফল হবে না। তারপরও ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাসের কর্মকান্ডের ওপর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনের কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতীতে পাকিস্তানের উপ-রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন পাকিস্তানি কূটনীতিক হাতেনাতে ধরা পড়ে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ধরা পড়েছিলেন ঢাকাস্থ পিআইএ অফিসে ছদ্মপরিচয়ে কর্মরত জনৈক আইএসআই কর্মকর্তা। পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালিত কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, আর যারা এই অনুষ্ঠানগুলো করছে তাদের টি-শার্টের গায়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকা দেখানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত গর্হিত এবং বেআইনি। এগুলো বন্ধ করতে আশু ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাধুবাদ পাওয়ার অধিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামানও অর্জন করেছেন, অনেক ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে। পুলিশপ্রধান ড. আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশপ্রধান খোন্দকার গোলাম ফারুকসহ এমন সব কর্মকর্তা এবং সদস্য যারা মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। আনন্দের খবর এই যে, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় আগের যে কোনো বছরের তুলনায় অধিক লোক অংশ নিয়েছিলেন, শুধু ঢাকাতেই নয়, গোটা বাংলাদেশে। বাঙালি যে তাদের বাঙালিত্ব এবং ঐতিহ্য বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর, মঙ্গল শোভাযাত্রায় বহু লোকের অংশগ্রহণ তাই প্রমাণ করছে, প্রমাণ করছে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি আর ৭১-এর বিজয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের বাঙালিসত্তা বাস্তবায়িত করেছি।

অ্যাডভোকেট হিসেবে দাবিদার দু-চারজন উ™£ান্ত ব্যক্তি নাকি মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে মহামান্য হাই কোর্টে রিট করবেন। তাদের এহেন দাবি প্রমাণ করছে যে, রিট কাকে বলে সে বিষয়ে তাদের জ্ঞানের জগতে শূন্যতা বিরাজ করছে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় কবিগুরুর একটি অতি জনপ্রিয় গান “বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারী”। এ গান দিয়ে কবিগুরু সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করেছেন সারা পৃথিবীতে শান্তির বারি বর্ষণের জন্য। মঙ্গল শোভাযাত্রা, যার মাধ্যমে মঙ্গলময় বাংলাদেশ এবং পৃথিবী কামনা করা হয়েছে, সেটি কীভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, তা শুধু ধর্মান্ধরাই জানে। রিট আইন সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব থাকায় এমন অনেক রিট মামলা করা হচ্ছে যেগুলো মোটেও চলতে পারে না, আর এ ধরনের যোগ্যতা বিবর্জিত রিট মামলা করে, যেগুলো পরে অগ্রহণযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত হয়, আদালতে অযথা মামলার জট বাড়ানো হচ্ছে।

সবশেষে যে প্রশ্নটির জবাব আমরা খুঁজছি, তা হলো বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রবীন্দ্র-নজরুল-লালনের বাংলায়, এ ধরনের পাকিস্তানপ্রেমীরা কীভাবে তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলে বেড়াচ্ছে, পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার ৫০ বছর পরেও।

লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর