বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধূলির ধরায় বেহেশতের শাহজাদা হুসাইন (রা.)

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ধূলির ধরায় বেহেশতের শাহজাদা হুসাইন (রা.)

হুজুর (সা.)-এর আগমনকে স্মরণ করে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল লিখেছেন- ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়...।’ নবীজির মিলাদ শরিফে মাহাত্ম্য সম্পর্কে এত চমৎকার নাত খুব কম আশেকই লিখতে পেরেছেন। এই নাতটির একটি লাইন এরকম-

ধূলির ধরা বেহেশত আজ,

জয় করে দিল রে লাজ’;

আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।’

অর্থাৎ হুজুর (সা.)-এর আগমনের কারণে ধুলোমলিন এই পৃথিবীর মর্যাদা বেহেশত থেকেও বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই হীরে-জহরতে মোড়া বেহেশতও ধুলোমলিন পৃথিবীর কাছে লজ্জায় মাথা ন্যুয়ে ফেলেছে সে দিন। বেহেশত আমাদের সবার কাম্য। পরম আকাক্সিক্ষত। সুখের চিরস্থায়ী ঠিকানা। তবুও আখেরি নবী বেহেশতে নয়, জন্ম নিলেন পাপ-তাপ ও দুঃখকষ্টে জর্জরিত  অন্ধকার পৃথিবীতে। এখানেই বেহেশতের লজ্জা। যেন বেহেশত বলছে- এত এত নেয়ামতরাজির অধিকারী হয়ে কী লাভ হলো আমার! আখেরি নবী আজ আমার বুকে নয়, জন্ম নিয়েছেন পৃথিবীর ধুলোয়। একইভাবে বেহেশতের জন্য আরেকটি লজ্জার দিন ছিল চতুর্থ হিজরির শাবান মাসের তৃতীয় দিনটি। সেদিন পৃথিবীর বুকে জন্মগ্রহণ করেছেন বেহেশতের শাহজাদা ইমাম হোসাইন (রা.)। মা ফাতেমা ও শেরে খোদা হরজত আলীর জীর্ণ কুটিরে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে শিশুটিই যে একদিন উম্মতে মুহাম্মাদির নাজাতের জন্য ফোরাতের তীরে কোরবান হবেন কে জানত! কেউ না জানলেও আলেমুল গায়েব আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজুর (সা.) ঠিকই জানতে পেরেছিলেন। প্রিয় সাহাবিদেরও জানিয়েছেন তিনি। তাই তো হজরত উম্মে সালমা (রা.) কারবালার দিন বারবার রসুলের দেওয়া বোতলের মাটির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। কেননা অনেকদিন আগে রসুল (সা.) উম্মে সালমার হাতে মাটিভর্তি বোতলটি দিয়ে বলেছিলেন, হে উম্মে সালমা! এ মাটি কারবালার মাটি। যেদিন এ বোতলের মাটি রক্তের রং ধারণ করবে সেদিন বুঝবে ফোরাতের তীরে আমার কলিজার টুকরা নাতি হোসাইন শহীদ হয়ে গিয়েছে।

সাইয়েদেনা হোসাইন (রা.) বেহেশতের বাদশাহ। হোসাইনকে ভালোবাসা ইমানের অংশ। শুধু হোসাইন নয়, আহলে বাইত তথা পাক পাঞ্জাতনের প্রতিটি সদস্যের প্রতি প্রেম রাখাই ইমানের অন্যতম দাবি। হাদিসের কিতাব চষে আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম হোসাইন ও ইমাম হাসানের মানাকিব সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

সুনান তিরমিজি শরিফে হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাকে ভালোবাসবে এবং হাসান-হুসাইন দুই ভাই ও তাদের বাবা-মাকে ভালোবাসবে কিয়ামতের দিন সে আর আমি একসঙ্গে থাকব।’ সুনানে নাসায়িতে আরও স্পষ্টভাবে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসল সে আসলে আমাকেই ভালোবাসল। আর যে এ দুজনের সঙ্গে বিদ্বেষ রাখল সে আমার সঙ্গেই বিদ্বেষ রাখল।’

ইমাম হাকেম লিখিত বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ আল মুসতাদরাকে জলিলে কদর সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন দুজনেই আমার বংশধর। যে এদের ভালোবাসল সে আমাকে ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল সে আল্লাহকে ভালোবাসল। যে আল্লাহকে ভালোবাসল কোনো সন্দেহ নেই আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। একইভাবে যে হাসান-হুসাইনের প্রতি বিদ্বেষ রাখল সে আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখল। যে আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখল সে আসলে আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষ রাখল। আর যে আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষ রাখল আল্লাহ তাকে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’

তিরমিজিতে বাবুল মানাকিবে উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদিন আমি রসুল (সা.)-কে দেখলাম হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে কোলে নিয়ে আদর করছেন। একপর্যায়ে তিনি বললেন, এ দুই ভাই আমার বংশধর এবং আমার আদরের কন্যা ফাতেমার ছেলে। হে আল্লাহ! আমি এ দুজনকে ভালোবাসি। তুমি তাদের ভালোবাস। এবং তাদেরও ভালোবাসে যারা এ দুজনকে ভালোবাসবে।’

প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা বেহেশতি সর্দার ইমাম হাসান ও হুসাইনকে ভালোবাসি। তাদের আদর্শে জীবন পরিচালনা করি। আহলে বাইতকে নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে আল্লাহ আমাদের পানাহ দিন। আমিন।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর