শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শাওয়ালের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

শাওয়ালের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

শাওয়াল শব্দের অর্থ উঁচু করা, উন্নতকরণ, গৌরব করা। পূর্ণ এক মাস রোজা রাখার পর রোজাদার যখন অতিরিক্ত আরও কয়েকটি রোজা রাখেন তখন তার পূর্ণ মাসের রোজা রাখার পরিপক্বতা লাভ করে। এতে রোজাদার তার নেক আমল অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা বান্দার রমজান মাসের রোজা রাখার পূর্ণতা দান করে। রমজানের রোজায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে শাওয়ালের ছয় রোজা পালনের মাধ্যমে তা পরিশুদ্ধতা লাভ করে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি ফরজ দায়িত্ব সম্পন্ন করবে তখন উঠে দাঁড়াবে এবং তুমি নফলের মাধ্যমে তোমার রবের প্রতি অনুরাগী হবে’ (সুরা ইনশিরা ৭-৮)। শাওয়াল ইসলামী মাসগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস। শাওয়ালের প্রথম দিনটি পবিত্র ঈদুল ফিতর। শাওয়াল মাসের প্রথম দিনটি ব্যতীত বাকি ২৯ দিনের মধ্যে যে মুসলমান ছয়টি রোজা রাখবে সে বিশেষ নেকি হাসিল করবে। রসুল (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানের রোজা রাখবে এবং শাওয়ালের আরও ছয়টি রোজা রাখবে তারা যেন পুরো বছরই রোজা পালন করল’ (মুসলিম শরিফ-১১৬৪) সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘কেউ যদি একটা সৎ কাজ নিয়ে আসে তাহলে তার জন্য দশ গুণ বিনিময় থাকবে’ (সুরা আনয়াম-১৬০)। এই হিসেবে রমজান মাসে এক মাসের রোজা দশ গুণ বেড়ে ৩০০ দিনের সমান হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার পর তা দশ গুণ বেড়ে ষাট হয়। তাহলে ৩৬টি রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা এক বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করেন। চন্দ্রমাসের হিসেবে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে এক বছর হয়। ওবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক দিন রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন তিনি বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে’ (তিরমিজি-১/১৫৭)। শাওয়ালের মাসের প্রথম দিনটি ব্যতীত যে কোনো দিন এই ছয়টি রোজা রাখা যায়। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিংবা বিরতি দিয়েও এই রোজা রাখা যায়। শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার উপকারিতাগুলো হলো- ১. কিয়ামতের দিন ফরজ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে নফল নামাজ দিয়ে তা পূর্ণ করা হবে। ঠিক তেমনি ফরজ রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতিও এসব নফল রোজা দ্বারা দূর করা হবে। ২. রমজানের রোজা আদায় শেষে শাওয়ালের রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি আলামত। কারণ আল্লাহতায়ালা যখন কোনো বান্দার নেক কাজ কবুল করেন তখন তাকে আরও নেক কাজ করার তৌফিক দান করেন। ৩. রমজানের রোজা রাখার মাধ্যমে বান্দা যে তাকওয়া অর্জন করে এবং গুনাহ মাফের যে সুযোগ লাভ করে তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বান্দার উচিত বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার পরিচায়ক।

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রসুল (সা.) নিজে রাখতেন এবং সাহাবিদের রাখতে উৎসাহিত করতেন। প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব হাসিল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। কোনো মুমিন নর-নারী যদি তার কোনো ভাই-বোনকে এই ছয়টি রোজা রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তিনি যদি তার অনুরোধ রোজাগুলো রাখেন তবে দুজনেই সমান সওয়াবের ভাগীদার হবেন। ইসলামী চিন্তাবিদ ও গুণীজনদের মতে, রমজানের রোজা রাখার পর আবার শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখতে পারা হলো রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি নেক আলামত। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা রাখার তৌফিক দান করুন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর