রবিবার, ৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের ৯টি নিয়ামক

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিএইচডি (অব.)

বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের ৯টি নিয়ামক

আজ থেকে ২৫০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সংসদীয় নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি উৎসুক মানুষ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে ভোট কেবল একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়; বরং উৎসবের আমেজ ছড়ানো একটি কাক্সিক্ষত আয়োজন। বাংলাদেশের বিগত ৫২ বছরের ইতিহাসে যে ১১টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার অধিকাংশই নানা কারণে বিতর্কিত, সমালোচিত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাসমৃদ্ধ ছিল। তবু রাজনীতি- প্রিয় এ দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়।  তারা চায় অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও তাদের মূল্যায়ন হোক। অনেক ক্লাব, মাদরাসা, স্কুল, এতিমখানা কিংবা সামাজিক সংগঠন এমনকি ব্যক্তি হিসেবে কেউ কেউ নির্বাচন এলেই কেবল বাড়তি কিছু আয়ের সুযোগ পান। চিকিৎসা বা কন্যা সম্প্রদানের জন্য সাহায্য, বেকারদের চাকরি ইত্যাদি অনেক কিছুই সম্ভব হয় নির্বাচনের আগে আগে। তাই বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই নতুন মুখ, নতুন স্বপ্ন, নতুন ভাবনা, এককথায় একটি নতুন মাত্রা। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলে নানা রকম উপাদান। নির্বাচন নিয়ে তাই চলতে থাকে নিত্যনতুন সমীকরণ। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলার মতো ৯টি উপাদান নিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম ৯টি বর্ণ দিয়ে লেখা যায়, এমন শব্দগুলোই যেন আগামীতে বারবার আবর্তিত হতে চলেছে।

বাংলাদেশের বর্তমানে ক্ষমতাসীন ও সবচেয়ে সংগঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফরমের নাম আওয়ামী লীগ, যা লিখতে হয় ইংরেজি প্রথম অক্ষর ‘এ’ দিয়ে। বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিকাও তাই সবার আগে আলোচনায় আসে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করে। পরবর্তীতে সেই নির্বাচন ও সংসদ ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে পরিত্যক্ত হয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন আওয়ামী লীগ যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই হয়েছে। আলোচনা-সমালোচনা, নিন্দা কিংবা আন্দোলন- যাই হয়েছে, আওয়ামী লীগ তা সামাল দিয়ে মেয়াদ পূর্ণ করেছে। বর্তমানে নানা সমীকরণে আওয়ামী লীগ শক্তিমত্তা, বুদ্ধিমত্তা ও পরিপক্বতায় অতীতের যে কোনো সময় থেকে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। তাই আসন্ন নির্বাচন আওয়ামী লীগ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই হবে বলে ধারণা করা যায়। ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রচুর গবেষণা ও হোমওয়ার্ক করেই মাঠে নামে এবং সফলতা লাভ করে। ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি, একাধিক ভাবনা এবং অবস্থা বুঝে দ্রুত পরিবর্তন যোগ্য পরিকল্পনা। তাই আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে এমন ধারণা অমূলক নয়।

ইংরেজি বর্ণমালার দ্বিতীয় অক্ষর ‘বি’ দিয়ে লেখা একটি অতি পরিচিত রাজনৈতিক শব্দ ‘বুরোক্রেসি’ বা আমলাতন্ত্র। এই আমলাতন্ত্রের একদিকে থাকেন নির্দিষ্ট পোশাক পরিহিত আমলার দল, যারা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, কোস্টগার্ড প্রভৃতি পরিচালনা করেন। আর নানা বর্ণের পোশাক পরে মাঠপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের নানা স্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীরা। বাংলাদেশে এই আমলাদের কল্যাণে কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ এমনকি তার চেয়ে বেশি ভোট প্রদানের নজির রয়েছে। ইদানীং অনেক জাঁদরেল ও বর্ষীয়ান নেতাও ‘রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই’ বলে আক্ষেপ করেন। তবে রাজনীতি এখন কার হাতে? উত্তর দুটি বিগ বির মধ্যে; বুরোক্রেসি এবং বিজনেসম্যান।

ইংরেজি বর্ণমালার তৃতীয় অক্ষর ‘সি’ দিয়ে দুটি অর্থনীতিবিষয়ক শব্দের উল্লেখ রয়েছে, যা সরাসরি নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। শব্দ দুটি হলো ‘কারেন্সি’ (মুদ্রা) এবং ক্যাশ (কাঁচা টাকা)। একটি দেশ পরিচালনার সাফল্য বা ব্যর্থতার অন্যতম নিয়ামক শক্তি সে দেশের মুদ্রার মান এবং বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলারের রিজার্ভের আকার। বাজারে ক্যাশ বা মুদ্রার প্রাচুর্য থাকলেও সেই মুদ্রা দিয়ে চাহিদা মোতাবেক দ্রব্য যদি কেনা না যায় অর্থাৎ দ্রব্যমূল্যে লাগামহীন গতি ভোটে সরাসরি সরকারি দলের বিপক্ষে কাজ করে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানসহ বহু দেশে প্রধানত ডলার সংকটের কারণে সরকারি দল ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ডলারের বা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেশের আমদানিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, শিক্ষা উপকরণ, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি এমনকি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট দেখা দেয়। এর ফলে ভোটে সাধারণ মানুষ বিশেষত ব্যবসায়ী সম্প্রদায় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। আবার নির্বাচনের ঠিক আগে ১০০ টাকায় সন্তুষ্ট ভোটারকে ১ হাজার টাকা দিলে দরিদ্র ভোটার অনেক ক্ষেত্রেই বেমালুম সব ভুলে যায়। কুমিল্লার একজন প্রয়াত রাজনীতিবিদ পাঁচ বছরের মধ্যে ভোটের ঠিক আগে আগে একবার মাত্র নিজ এলাকায় যেতেন এবং ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথপূর্বক ক্যাশ টাকা বা কাঁচা টাকা ছড়িয়ে জিতে যেতেন বলে তিনি ‘একবার হোসেন’ নামে পরিচিতি পান।

‘ডি’ দিয়ে লেখা শব্দ ‘ডেভেলপমেন্ট’ অর্থাৎ নানা ক্ষেত্রে এলাকার উন্নতি অথবা উন্নতিতে অবহেলা ভোটে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খাম্বা বসানো সত্ত্বেও বিদ্যুৎ দিতে না পারা সরকারি দলের বিপক্ষে জনমত তৈরি করে। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় ২০০৮ পরবর্তী সময়ে। পদ্মা ব্রিজ ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য বর্তমান সরকার দক্ষিণবঙ্গের বহু ভোট পাওয়ার প্রত্যাশা করতেই পারে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, মেট্রোরেল, নতুন নতুন রাস্তা ও সেতু নির্মাণ, স্কুল-কলেজের উন্নতি, আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রভৃতি ভোটের দিনে সরকারকে আনুকূল্য দেবে। আবার উন্নতির নামে দুর্নীতি, মাত্রারিক্ত ঋণ, অর্থ পাচার ও জনদুর্ভোগের কথা তুলে ধরে ভোটে প্রভাব ফেলবে বিরোধী শক্তি। কানাডার বেগমপাড়া, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আমেরিকাসহ বহু দেশে সম্পদ গড়া বাংলাদেশিদের সত্যিকারের পরিচয় বিশেষত রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পেলে উন্নতির অন্তরালে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই হয়তো বেরিয়ে আসবে। বিরোধী শিবির বরাবরই দাবি করে যে, ডেভেলপমেন্ট ও দুর্নীতি সমান্তরালভাবে চলার কারণে অর্থ পাচারের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। তবু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সাধারণ মানুষ অল্পে তুষ্ট এবং তারা দেশের বিশেষত নিজ এলাকার যে কোনো উন্নতিতে আপ্লুত হয় এবং সরকারের প্রতি সমর্থন জানায়।

‘ই’ দিয়ে হয় ইলেকশন কমিশন, যা কখনো পরাজিত শক্তিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি এবং বিজয়ী দলের বিরাগভাজন হয়নি। অথচ একটি সুষ্ঠু ভোটের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি শক্তিশালী, কার্যকর, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। উদাহরণ হিসেবে ভারতের কিংবদন্তিতুল্য নির্বাচন কমিশনার ত্রিমুনেল্লা নারায়ানা আইয়ার সেশনের নাম উল্লেখ করা যায়। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ভারতের রাজনীতিবিদরা দুজনকে সমীহ করে চলতেন, ওপরে সৃষ্টিকর্তা আর জমিনে নির্বাচন কমিশনার সেশন। অথচ বাংলাদেশে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, মাগুরা ও মিরপুরের নির্বাচন প্রভৃতি উপহার দিয়ে মূলত উপহাসের পাত্র হয়েছেন অতীতের অনেক নির্বাচন কমিশনার। সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েও মোতায়েন করতে না পারা, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন এমপিকে এলাকা ছাড়ার অনুরোধের পর আইনের ছায়ায় তার বহাল তবিয়তে থাকা, ইভিএম নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন ইতোমধ্যে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে বর্তমান কমিশন কেমন ভূমিকা রাখতে পারবে, তার ভিত্তিতে অনেক কিছুই নির্ধারিত হবে।

ইংরেজি ‘এফ’ অক্ষর দিয়ে লেখা ফরেন বা বিদেশি প্রভাব বাংলাদেশের নির্বাচনের অন্যতম নিয়ামক শক্তি বলে বিবেচনা করা হয়। যদিও সব দলই ক্ষমতায় থাকতে দেশের সংবিধান ও জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা বলে, বিরোধী দলে গেলে তারাই আবার বিদেশি দূতাবাসে ঘন ঘন যাতায়াত করেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সরাসরি দূতিয়ালি করে আলোচনার শীর্ষে কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন। ১৯৯৪ সালে তার সফর বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। একাধিক সূত্রের দাবি, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে নির্বাচন ও রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে ছিল ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সফর। বিদেশি কোম্পানির সুপারিশ মোতাবেক ভারতে গ্যাস রপ্তানিতে অসম্মতির কারণে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে আওয়ামী লীগকে ২০০১-এর নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ লেখা আছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। বহু টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ আছে সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের বিরুদ্ধে। সুতরাং আগামী নির্বাচনেও ফরেন বা বিদেশি প্রভাব থাকবে বলেই ধারণা করা যায়।

রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য নিহিত ‘জি’ দিয়ে লেখা একটি শব্দে, তা হলো ‘গভর্নেন্স’ বা শাসন। এই শাসন যদি দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনে, তাকে গুড গভর্নেন্স বা সুশাসন বলা হয়, যার সুফল যুগপৎভাবে ভোগ করে সরকারি দল এবং সাধারণ মানুষ। আর গুম, খুন, হামলা, মামলা, চাঁদাবাজি, অপরাধ ও নৈরাজ্যের অবধারিত পরিণতি ভোটে ব্যর্থতা। সুশাসনের প্রতীকী কিছু মানদন্ড রয়েছে, যার অন্যতম সে দেশের বিচার ব্যবস্থা। অপরাধবিহীন আদর্শ রাষ্ট্র কেবল পুস্তকেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। অপরাধ নেই এমন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। তবে যে দেশে সুশাসন আছে, সে দেশে সত্যিকারের বিচার আছে। বিপরীতে সুশাসনের ঠিক উল্টোচিত্র হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধ। অতীতে নির্বাচনের আগে অস্ত্রের মহড়া, প্রার্থী অপহরণ, নমিনেশন জমা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা প্রভৃতি সুশাসনের অভাবকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে। এই অশুভ ধারার অবসান তথা সুশাসনই কেবল নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

সুশাসনের বিপরীতে রয়েছে ‘হ্যারাসমেন্ট’ যা  লেখা হয় ইংরেজি ‘এইচ’ অক্ষর দিয়ে। হ্যারাসমেন্টকে বাংলায় নির্যাতন বলা যায়। এই নির্যাতনের শিকার হতে পারে যে কেউ, যে কোনো সময়। একটি দেশে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ইভ টিজিং, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি থাকবে এবং একজন ভুক্তভোগী সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে তার প্রতিকার পাবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই প্রতিকারের পথ যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তার রাষ্ট্রীয় মদদে বা সরকারের ব্যর্থতায় তা নির্যাতন বলে গণ্য হয়। গুম, অপহরণ, সাংবাদিক নির্যাতন, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, মতপ্রকাশে বাধা, হাট-বাজার-নদীর ঘাট-টোল আদায় কেন্দ্র এসব কিছু যখন একটি মাত্র দল, গোষ্ঠী বা পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে, তখন ওই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে তা নির্যাতন রূপে আবির্ভূত হয় এবং নির্বাচনে তার বিরূপ ফলাফল লক্ষ্য করা যায়। কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া আবার শহরে গরিব মানুষের নাগালের বাইরে দ্রব্যমূল্যের অবস্থান মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্যাতনের এক করুণ চিত্র। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন দেশে একটি বহুল আলোচিত ও ঘৃণ্য উপাখ্যান, যা ভোটের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ইংরেজি নবম অক্ষর ‘আই’ ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দা বৃত্তির সাংকেতিক নাম। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এবং বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতির কারণে আগ্রহী দেশগুলো নিজ নিজ গোয়েন্দা দ্বারা বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে তৎপর থাকে ও নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি দলই অন্য দলের বিরুদ্ধে বিদেশি গোয়েন্দাদের তাঁবেদারি ও তাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলে। এই গোয়েন্দাদের মাধ্যমে বহু টাকা লেনদেন এমনকি প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিল, এখনো আছে। দেশি গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে দল ভাঙা, প্রার্থী ক্রয়-বিক্রয়, সভা-সমাবেশ আয়োজন বা ভ-ুল এবং কিংস পার্টি তৈরির অভিযোগও পুরনো নয়। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে বিশেষত নির্বাচনের নমিনেশন পেপার ক্রয় ও জমা দেওয়ার সময় গোয়েন্দাদের তৎপরতা নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। একজন প্রয়াত রাষ্ট্রপতিসহ অনেকেই নির্বাচনের আগে অজ্ঞাত স্থানে থাকার নেপথ্যে গোয়েন্দাদের হাত ছিল বলেই অনেকের ধারণা।

বিশ্বজুড়ে মন্দা অর্থনীতি, বিরূপ জলবায়ু ও পরিবেশ, মহামারি, চলমান যুদ্ধ ও আরও যুদ্ধের আশঙ্কা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে একেকটি দিন অতিবাহিত করছে বিশ্ব সম্প্রদায়।  বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এমতাবস্থায় একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সুযোগ্য ব্যক্তি ও যোগ্য দলের হাত ধরে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে-এটাই প্রত্যাশা।     

                               লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক

email: [email protected]

সর্বশেষ খবর