সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

গামছারও ইচ্ছে করে ধোপাবাড়ি যেতে

মাকিদ হায়দার

গামছারও ইচ্ছে করে ধোপাবাড়ি যেতে

গামছার নাকি ইচ্ছে করে ধোপাবাড়ি যেতে। আজ অবধি গামছার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে কি না অন্তত আমার জানা নেই। তবে পাবনার দোগাছি, শিবপুর এবং আতাইকুলার গামছা খুব জনপ্রিয় ও টেকসই। অনুরূপভাবে পাবনার লুঙ্গির চাহিদা দেশে-বিদেশেও। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারের রুহিতপুরের লুঙ্গি, টাঙ্গাইলের লুঙ্গি, গামছা এবং শাড়ির চাহিদা এখন বাড়লেও  এক সময় পাবনার শাড়ির চাহিদা ছিল সমগ্র বাংলায়, দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই।  তন্তুবায় সম্প্রদায় ৪০ কাউন্টের সুতোর সঙ্গে ৬০ কাউন্টের সুতো দিয়ে অথবা ৬০ কাউন্ট সুতোর সঙ্গে ৮০ কাউন্ট সুতো মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন শাড়ি শাহজাদপুর, দোগাছি এবং রাজাপুর ও কুলুনিয়ার তন্তুবায় সম্প্রদায় এই শিল্পটাকে অক্ষুণ্ণ রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারপর এসেছে কুষ্টিয়ার মোহিনী মিলের শাড়ি।  ঢাকার লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের শাড়ি সবই ছিল মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যবহার উপযোগী। তবে গামছা পরবর্তীতে অন্যান্য জেলার তন্তুবায় সম্প্রদায় তৈরি করলেও চাহিদা বেশি পাবনার গামছা এবং লুঙ্গির। আমি এখনো জানি না লুঙ্গি কোনো দিন ধোপাবাড়ি যেতে চেয়েছিল কি না। পাবনা শহরের দক্ষিণে প্রায় ৫০ একর জমির ওপর একটি দৃষ্টিনন্দন দোতলা বাড়ি বানিয়েছিলেন শীতলাইয়ের জমিদার শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মৈত্র। দেশ ভাগের অনেক বছর আগে। শোনা যায়, কুষ্টিয়ার মোহিনী কটন মিলের মালিকের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জমিদার যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রের ছেলের। মোহিনী বাবুর একটি শর্ত ছিল বিয়াই মৈত্র বাবুর কাছে। আপনার বাড়ির ছাদে আমার মেয়েকে প্রতিদিন একবার করে উঠতে দিতে হবে। মেয়ে বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আমার মিলের ধোঁয়া এবং পদ্মা নদী দেখবে। শীতলাই জমিদার মোহিনী বাবুর কথা রেখেছিলেন। ওই শীতলাই জমিদারের বাড়িতে গিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ নাকি কয়েকবার রাত যাপন করেছিলেন। শীতলাই জমিদারবাড়ি সংলগ্ন ছিল পদ্মার শাখা নদী ইছামতী। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ থেকে কবি যখন পাবনা হয়ে শাহজাদপুর, পতিসর যেতেন তখন বারদুয়েক কবিকে শীতলাইয়ের জমিদার মৈত্র মহাশয় বিনীত অনুরোধ জানানোর পরে রবীন্দ্রনাথ নাকি সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন রাত যাপনের।

আমি আমার পড়ালেখার জীবনে একাধিকবার শাহজাদপুরে রবিঠাকুরের কাচারিবাড়ি দেখতে গেলেও যাওয়া হয়নি পতিসরে। কয়েক বছর আগে বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি কবি ইসলাম রফিকের আমন্ত্রণে লেখক চক্রের ৩২তম সাহিত্য সম্মেলনে গিয়েছিলাম। বগুড়া লেখক চক্রের জন্ম ১৯৮৮ সালে। শহরের শিল্পী, সাহিত্যিক ও কবিদের নিয়েই প্রতিষ্ঠিত বগুড়া লেখক চক্রের। ৩২তম সাহিত্য সম্মেলনে সারা দেশ থেকে কবি, গল্পকার, অনুবাদকসহ অনেকেই গিয়েছিলাম। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক বিশিষ্ট নাট্যজন খায়রুল আলম সবুজসহ গিয়েছিলাম পতিসরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি দেখতে। সঙ্গে ছিলেন প্রাবন্ধিক মুক্তাদির। সাংবাদিক রউফ, কবি কামরুন নাহার কুহেলী, কবি সিকতা কাজলসহ আরও অনেকেই। পতিসরের নাগর নদের পশ্চিম দিকে রবিঠাকুরের কাচারিবাড়ি। ঠিক তার দক্ষিণেই ১৯৩৭ সালে কবিগুরু তার পুত্রের নামে হাইস্কুল বানিয়ে দিয়েছিলেন ‘রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন’। উদ্দেশ্য ছিল পূর্ববাংলার হিন্দু-মুসলমান শিক্ষায় আলোকিত হোক। ইতোমধ্যে মাঝবয়সী এক ব্যক্তি এসে সবুজকে জানালেন, আপনার অভিনয় টিভিতে দেখি। তিনি আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন। মিনিট তিনেক পথ হাঁটলেই দেখতে পাবেন আমাদের দুর্গাপূজার উৎসব হচ্ছে। তার কথায় গিয়ে দেখলাম হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের লোকজন। চারদিকে আনন্দ উৎসব। ইতোমধ্যে জনাকয়েক পুরুষ, মহিলা, তরুণ-তরুণী খায়রুল আলম সবুজকে কাছে পেয়ে প্রচন্ডভাবে উচ্ছ্বসিত। ঠাকুর দেখতে ও পূজা দিতে আসা একজন বৃদ্ধ সবুজের হাত ধরে জানালেন, আপনার অভিনয় আমার খুবই প্রিয়। এমন সময় নবম অথবা দশম শ্রেণির একছাত্রী উচ্ছ্বাসে জানালেন, আমাদের এই নাগর নদী নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার একটি বিখ্যাত কবিতা-‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে’। সেই সময়ই এক বয়স্ক ভদ্রলোক কিছু মিষ্টি নিয়ে এসে জানালেন, এগুলো মায়ের ভোগ। আপনাদের সবাইকে খেতে হবে। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা যখন বগুড়া ফিরছিলাম তখন কবি ইসলাম রফিক একটি গ্রামের মাঝামাঝি এসে গাড়ি থামিয়ে আমাদের সবাইকে জানালেন গ্রামটির নাম। রফিক-মুক্তাদিরসহ আরও সবাই সমস্বরে জানালেন এই সেই গ্রাম, যে গ্রামের সবাই চাঁদের ভিতরে দেখেছিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি। কুহেলী জানাল গ্রামটির নাম। পরের দিন সদলবলে গিয়েছিলাম বগুড়ার গাবতলীতে জিয়াউর রহমান কমলের বাড়ি দেখতে। বাড়িটি দেখে আমার মনে হলো জিয়ার নাম কমল হলেও হৃদয়ে কোনো কোমলতা ছিল না। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যতগুলো মুক্তিযোদ্ধা ও আর্মি অফিসারকে বিনা দোষে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল সেই মুক্তিযোদ্ধা এবং আর্মি অফিসারদের হৃদয়বিদারক ছবিসহ তাদের আহাজারি সবাইকে ব্যথিত করেছিল। ১৯৭৭ সালে একটি বিদেশি বিমান হাইজ্যাক করে হাইজ্যাকাররা নামিয়েছিল ঢাকার বিমানবন্দরে। তৎকালীন বিমানমন্ত্রী সারা রাত বিমানবন্দরে কাটিয়ে অসুস্থ হয়ে পরের দিন মারা গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পরেই জিয়া বিনা অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিলেন বিনা অপরাধীদের।

জিয়ার মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল করেছেন প্রেমিকপ্রবর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। টানা ৯ বছর সামরিক শাসনের অবসান হয়েছিল নব্বই দশকের শুরুতেই। দেশবাসী ভোটাধিকার ফিরে পেল এবং জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের শাসনভার গ্রহণ করার পরে ওই দলে যোগ দিলেন একজন সুবিধাবাদী ব্যারিস্টার। ব্যারিস্টার সাহেব আওয়ামী লীগে সুবিধা করতে না পারার কারণ হলো তিনি দুই নৌকায় দুই পা রেখে দেখতেন কোন নৌকায় গেলে মন্ত্রী হওয়া যাবে। ওই ব্যারিস্টার সাহেব মোনেম খাঁর শাসনামলে পুরান ঢাকার আরেক ব্যারিস্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন ছাত্রনেতাকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফ্রন্ট বা এনএসএফ। এনএসএফের এক নেতা বগুড়া নিবাসী খোকা, বরিশালের পাঁচ পাত্তুর-আসল নাম আজ আর মনে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য কলেজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এনএসএফের শাখা। এনএসএফের কর্মীদের হাতে পিস্তল, রিভলবার সব সময়ই শোভা পেত। আমার এখনো মনে আছে এনএসএফের কর্মীদের অত্যাচারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের বিকাল ৫টার আগেই ফিরে যেতে হতো ছাত্রীনিবাসে। বিশেষত রোকেয়া হল বা ছাত্রীনিবাসের যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি ছিলেন অত্যন্ত কড়া মেজাজের। ফলশ্রুতিতে মেয়েগুলো বাধ্য হতো বিকাল ৫টায় ছাত্রীনিবাসে ফিরে আসতে। সম্ভবত তৎকালীন ঢাকা হলে ছিল এনএসএফের প্রধান ঘাঁটি। আমাদের জগন্নাথ কলেজের এক এনএসএফের নেতা ছিলেন সৈয়দ নোমানী। নোমানী ছিলেন আমাদের সিনিয়র। এনএসএফের গুন্ডাপান্ডা ছেলে নিয়ে তিনি কলেজের বিভিন্ন ছাত্রকে উদ্বুদ্ধ করতেন এনএসএফে যোগ দেওয়ার জন্য। সঙ্গে দিতেন প্রলোভন এবং টাকা।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে জগন্নাথ কলেজের ছাত্রনেতা ছাত্রলীগ সভাপতি রাজিউদ্দীন আহমদ রাজু ভাই, কাজী আরেফ আহমদ, ঢাকাইয়া নাসির ভাই এবং পুরান ঢাকার সুধীর দা, বিমান দা, কাজী ফিরোজ রশীদ এবং শ্রদ্ধেয় আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছেলে হাসু ভাইসহ রাজু ভাইয়ের নির্দেশে প্রচন্ড রকমের উত্তম-মধ্যম দিয়ে সৈয়দ নোমানীকে জানানো হলো এর পরে যদি কলেজে তোকে দেখি, উচ্চৈঃস্বরে কথাটি বলল আমাদের সহপাঠী (১৯৬৫-৬৭ শিক্ষা বছর) বুড়িগঙ্গার ওপারের জিনজিরার জহির উদ্দিন বাবর। ইতিপূর্বে বাবরের নেতৃত্বে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে এনএসএফের একটি ঘাঁটি ছিল। বাবরের সঙ্গে আরেক নেতা সাইফুদ্দিন, ঈশ্বরদীর কালো চুন্নু, পুরান ঢাকার জনাকয়েক ছেলে, যারা জগন্নাথ কলেজে আমাদের সহপাঠী ছিলেন। তাদের লাঠি এবং বাঁশের আক্রমণে এনএসএফের গুন্ডারা ইকবাল হল ছেড়ে গেলেও তাদের সঙ্গে থাকা গোটা দুই গোখরা সাপ রিভলবার নিতে ভুল করেননি। ওই ইকবাল নাকি ঢাকা হলে একদিন নিহত হলেন এনএসএফ নেতা পাঁচপাত্তুর লালবাগের মজনুর হাতে। বাবরদের তিন পুরুষের ব্যবসা কাপড়ের। প্রচুর অর্থসম্পদ থাকলেও বাবর কোনো দিন বলেনি তাদের কাপড়ের দোকান সদরঘাট-নিউমার্কেট-ইসলামপুর, এলিফ্যান্ট রোডে আছে। মুক্তিযুদ্ধের আগেই ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে গিয়ে দেখা হলো আমার জগন্নাথ কলেজের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে। গল্পকার বুলবুল চৌধুরী, প্রাবন্ধিক গাজী আজিজুর রহমান এবং বাবরের সঙ্গে। আমাদের মাথার ওপরে হেলিকপ্টার। না-পাক আর্মিদের দেখলাম অস্ত্র হাতে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনছিলাম ১৮ মিনিট কয়েক সেকেন্ড। সেই ভাষণের ১৮ দিন পরেই ২৬ মার্চ রাতে দেখলাম চারদিকে আগুন এবং না-পাকদের অগ্নিবর্ষণ। আমরা থাকতাম ৩২/২ নম্বর মালিবাগের একটি ভাড়াবাড়িতে। আমাদের মা রহিমা খাতুন সারা রাত পবিত্র কোরআন পাঠ করলেন। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে কারফিউ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, এপ্রিলের শেষ দিকে। শেষ হলো ৯ মাস পরে ১৬ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এলো। একপর্যায়ে রেসকোর্স ময়দানে না-পাক পাকিস্তানিদের পূর্ব পাকিস্তানের সরদার লে. জে. এ এ কে নিয়াজি মাথানত করলেন ভারতীয় জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে। পরাজিত লে. জে. নিয়াজি যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারতে প্রায় আড়াই বছর বন্দি থাকার পর না-পাক পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে তার পরাজয় নিয়ে একটি সত্য তিনি প্রকাশ করেছেন তার লেখা-‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’।

দীর্ঘদিন আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। পিতার বিশ্বাস ছিল কোনো বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারবে না। জাতির পিতার হত্যার পরে দেখলাম দেশে এলো পাকিস্তান প্রিয় গোলাম আযম গং। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা নামলেন রাজপথে, দেখলাম পাবনার সাঁথিয়া থানার মনমথপুর গ্রামের লুৎফর রহমান খানের ছেলে মতিউর রহমান নিজামী। তিনি আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন, সঙ্গে ছিলেন আরও অনেকেই। নিজামীর নাম মনে আসতেই মনে পড়ল ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ গ্রন্থের লেখক লে. জে. এ এ কে নিয়াজির কথা। আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি তার পূর্ব পাকিস্তানে ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের কথা। তিনি ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলেন কসাই টিক্কা খানের অধীনে। সেই অর্থে সাঁথিয়ার জনাব নিজামীর ভূমিকাও ছিল কসাইয়ের।

পাবনার প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম এ আলীম। তিনি পাবনার ওপর একটি তথ্যমূলক অনুসন্ধানী বই পাঠান্তে জানতে পারলাম, তার নিজ বাড়ি সাঁথিয়া হওয়ার সুবাদে, ইতিহাসবিদদের মতো রাজাকার, আলবদর এবং নিজামীর ভূমিকা সরাসরি না বললেও পাঠকরা সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন ১৯৭১ সালে পাকপ্রেমীদের পাকিস্তানিদের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা- যদিও ড. আলীম ইতিহাসবিদ নন, তবু তিনি তাঁর পাবনার ইতিহাসে জানিয়েছেন অনেক অজানা কথা। গত শতাব্দীতে পাবনার ইতিহাস লিখেছিলেন রাধারমণ সাহা, দ্বিতীয়বার লিখেন ড. এম এ আলীম। ইতিপূর্বে জনাব আলিমের অনেকগুলো গবেষণামূলক বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রকাশনী থেকেও। তবে ড. আলিমের লেখা বঙ্গবন্ধু ও ভাষা এবং ভাষা আন্দোলন-২, রবীন্দ্র উত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতা-৩ এবং রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সবই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত। আগের কথায় ফিরে আসি। আমাদের দোহারপাড়ায় ছিলেন সুবল ধোপা আর আরিফপুরে ছিলেন তুলসী ধোপা। আমি একবার সুবল কাকাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, গামছা কোনো দিন ধুয়েছেন নাকি? তিনি হেসে জানিয়েছিলেন, ‘গামছার নাকি ইচ্ছে করে ধোপাবাড়ি যেতে’। গত রবিবার ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখের আমার প্রিয় পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ। ভাষণে তিনি জানিয়েছেন-বিএনপি ক্ষমতায় থাকার অর্থ অত্যাচার, শোষণ। খালেদা জিয়া ম্যাট্রিক দিয়েছিলেন সেই পরীক্ষায় অঙ্ক ও উর্দুতে পাস করেছিলেন, জিয়া ম্যাট্রিক পাস, খালেদা ম্যাট্রিক ফেল।

আবারও মনে পড়ল ‘দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ গ্রন্থের কথা। নিয়াজি, ভুট্টো, টিক্কা, ইয়াহিয়ার আত্মা আবার ফিরে এসেছে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জল-বাতাসে। যারা ফিরে যেতে চান তাদের লক্ষ্য-সেই গামছার মতো; যারা বিগত ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে তাদের তো ইচ্ছে করে অন্তত একবার ধোপাবাড়ি যেতে। সেটি সুবল ধোপার বাড়িই হোক অথবা তুলসী ধোপার বাড়িতে।         

লেখক : কবি

সর্বশেষ খবর