ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধের সালিশে বিপুলভাবে লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। এ সালিশে বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় কাছাকাছি বিপুল সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অধিকার প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ আহরণের মাত্রা
প্রায় শূন্য। বলা হয়, বঙ্গোপসাগরের তলে রয়েছে মূল্যবান খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদের বিপুল সম্ভার। বিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ রয়েছে শুধু সমুদ্র পর্যটন থেকেই। হংকং, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীনের মতো সমুদ্রঘেঁষা দেশগুলোর ভিত মজবুত করেছে সমুদ্র অর্থনীতি। সমুদ্র অর্থনীতির মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখন পর্যন্ত আসল কাজটিই শুরু করা সম্ভব হয়নি। কীভাবে সমুদ্রসম্পদ আহরণ করা হবে তার পথই উন্মোচিত হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকার দখল পাওয়া দেশের জন্য এক বড় অর্জন। সমুদ্র অর্থনীতির ওপর ভর করে দেশের জিডিপি নিয়ে যাওয়া সম্ভব ১০ শতাংশের ওপরে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে বড় অবদান রাখতে পারে নীল অর্থনীতি। যত তাড়াতাড়ি এ সম্পদ ব্যবহার করা যাবে ততই মঙ্গল। কিন্তু এত বড় একটি ক্ষেত্রকে সমন্বয় করতে ১১ বছরেও
পৃথক কোনো কর্তৃপক্ষ গড়ে ওঠেনি। পর্যটন, বাণিজ্য, জ্বালানি, পররাষ্ট্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, নৌপরিবহন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আরও অনেক মন্ত্রণালয় ব্লু-ইকোনমির সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতিটি মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে প্রকল্প প্রণয়ন এবং গবেষণার নামে সরকারি অর্থের খরচই শুধু নিশ্চিত করছে, সমুদ্র অর্থনীতিকে এক ইঞ্চিও এগিয়ে নিতে পারছে কি না সন্দেহ। বঙ্গোপসাগরে নিজেদের অংশ থেকে মিয়ানমার গ্যাস উত্তোলন করে রপ্তানিও করছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার গ্যাস উত্তোলন নিয়ে চলছে সিদ্ধান্তহীনতা। এ সংকটের অবসানে সমুদ্র অর্থনীতির স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে। কোনো সময় ক্ষেপণই আর কাম্য নয়।