সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচন

এ বছরের মে মাসটি হয়তো বিভিন্ন দেশে হয়ে যাওয়া কিছু নির্বাচনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মে মাসের ৪ তারিখ গণতন্ত্রের তীর্থ ভূমিখ্যাত ইংল্যান্ডের ২৩০টি কাউন্সিলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। স্থানীয় নির্বাচন হলেও শেষ বিচারে রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তিমত্তা এবং সাধারণ ভোটারদের দলীয় সমর্থনের একটা চিত্র ফুটে ওঠে ওই নির্বাচনে। ইংল্যান্ডের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। বিগত ১২ বছরে এ দলেরই পাঁচজন নেতা-নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনা করেছেন। এদের মধ্যে কেউ ৫৫ দিন আবার কেউ ছয় বছর ৬৪ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। ক্ষমতাসীন অবস্থায় এ কনজারভেটিভ পার্টি ২০১৯ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৮৯টি কাউন্সিলে জয়লাভ করলেও ২০২৩ সালে ৪ মের নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ায় ৩৩টিতে। অন্যদিকে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ও সংসদের বিরোধী দল লেবার পার্টি ২০১৯ সালে ৫৭টি কাউন্সিলে জয়লাভ করার পর ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৭১-এ পৌঁছে। আসন সংখ্যার বিচারে দেখা যায় স্থানীয়ভাবে ৮ হাজার ২৫টি আসনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১ হাজার ৬৩ আসন হাতছাড়া হয়ে যায়। আবার তার বিপরীতে লেবার পার্টির পক্ষে ৫৩৭টি এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির পক্ষে ৪৬০টি আসন বৃদ্ধি পায়। এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিশ্লেষণে ব্রিটিশ দৈনিক ‘দি গার্ডিয়ান’-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্যাটি বলস লক্ষ্য করেন, ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও সাধারণ ভোটাররা প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির দিকে কম ঝুঁকেছেন। বরং তারা পরিবর্তনের আশায় ঝুঁকেছেন তৃতীয় সারির লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমনকি চতুর্থ সারির গ্রিন পার্টির দিকে। আরেক বিশ্লেষক জন ম্যাথ ডোনালের মতে, ভোটারদের সামনে মূলত দুটি পছন্দ ছিল। এক. পরীক্ষিত বা চেনা জনের সঙ্গে থাকা অথবা দুই. ‘সময় এসেছে পরিবর্তনের’ এটা মেনে নেওয়া। ভোটাররা দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছেন। ডোনালের মতে, সরকারিভাবে মজুরি হ্রাস, বিভিন্ন সরকারি সেবার পরিধি সংকোচন এবং অদূর ভবিষ্যতে এসব সমস্যা সমাধানের স্পষ্ট কোনো আশা না থাকায় ভোটাররা ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। এমনকি নানা কারণে তারা বিরোধী দল লেবার পার্টির ওপরও আস্থা হারিয়েছেন। ফলে এ সমর্থন তৃতীয় সারির লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও চতুর্থ সারির গ্রিন পার্টির পাল্লা ভারী করেছে। মার্টিন ক্যাটেল নামের আরেক বিশ্লেষক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের নেপথ্যে কনজারভেটিভদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দুষছেন এবং এ ফলাফল ১৮ মাস পরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বর্তমান কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে হারিয়ে দিতে বিরোধী লেবার পার্টিকে উৎসাহ ও শক্তি জোগাবে বলে মত দিয়েছেন। তবে সব বিরোধী শক্তি একজোট হলেই কেবল ক্ষমতা পরিবর্তন সম্ভব বলে তার বিশ্বাস।

১৮ মে ২০২৩ তারিখে ইংল্যান্ডের পাশের দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনের আগে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া ডেমোক্র্যাটিক ইউনিস্ট পার্টি (ডিইউপি) হেরে যায়। আগে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আইরিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (স্থানীয় ভাষায় ‘সিন ফিন’) কাছে ৪৬২টি আসনের মধ্যে সিন ফিন ১৪৪টি আসন লাভ করে। তাদের ভোট বৃদ্ধির হার ৭.৭ শতাংশ এবং আসন বৃদ্ধির সংখ্যা ৩৯টি। পক্ষান্তরে আগের নির্বাচনের মতো ১১২টি আসনই পায় ডিইউপি। তবে তাদের ভোট কমে যায় দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে একত্রিত হতে না চাওয়া এবং ব্রেক্সিট ইস্যুতে ১৫ মাস ধরে স্থানীয় সংসদ বয়কট তথা সংসদে অনুপস্থিত থাকায় ভোটারদের বিশেষত তরুণ সমাজের সমর্থন ডিইউপির বিপক্ষে চলে যায়। লক্ষণীয়, এ নির্বাচনেও তৃতীয় অবস্থানে থাকা অ্যালায়েন্স পার্টির ভোট ৩ শতাংশ এবং আসন সংখ্যা ১৪টি বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় নির্বাচনে এ জয়-পরাজয় পরবর্তী সরকার গঠনের নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের দৃঢ় বিশ্বাস।

দক্ষিণ ভারতের মোট পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কর্ণাটক রাজ্যটি নরেন্দ্র মোদি তথা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসিত ছিল। গত ১৩ মে ২০২৩ তারিখে কর্ণাটকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে দেয় কংগ্রেস। রাজ্যের ২২৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৩৫টি, বিজেপি ৬৬টি এবং অন্যরা ২৩টি আসন লাভ করে। ২০১১ সালের জরিপ অনুসারে কর্ণাটকের ৮৪ শতাংশ মানুষ হিন্দু, ১৩ শতাংশ মুসলমান এবং বাকি ২ শতাংশের কম খ্রিস্টান।

হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী বিজেপি ২০১৮ সালে নির্বাচনে মূলত ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে ১০৪টি আসন পায় ও ক্ষমতা বাগিয়ে নেয়। ভারতীয় ১০টি প্রখ্যাত গণমাধ্যম এ নির্বাচন নিয়ে জরিপ চালিয়েছিল। জরিপে দেখা যায়, ৯টি গণমাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস পেয়েছিল যা যথারীতি প্রকাশ করা হয়। তারপরও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান বিজেপি তার নির্বাচনী কৌশলে জনগণকে আস্থায় নিতে পারেনি। অন্যদিকে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মাপন্ন মল্লিকার্জুন খড়গেকে বলা হয় ‘৭/২৪’ রাজনীতিবিদ। অর্থাৎ তিনি সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টার জন্য রাজনীতি করেন এবং তার দলীয় কর্মী, সমর্থক ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে থাকেন। এ নির্বাচনের আগে তিনি ৪০টি প্রকাশ্য জনসভা এবং অসংখ্য আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী সভা করেছেন। গান্ধী পরিবার বিশেষত কংগ্রেসের প্রাণপুরুষ রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তার অসাধারণ মেলবন্ধনের সুফল কর্ণাটকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরও এক সুতায় গেঁথে ফেলে। এ মাপন্ন মল্লিকার্জুন খড়গেকে কর্ণাটকের আঞ্চলিক রাজনীতিতে কোণঠাসা করে কেন্দ্রে পাঠাতে তৎপর ছিলেন কংগ্রেসের স্থানীয় প্রধান সিদ্দারামাইয়া। অথচ নির্বাচনের আগে এসব কিছু ভুলে একত্রে মাঠে নামেন তারা। নির্বাচনে জয়লাভের পর এ সিদ্দারামাইয়াকেই কর্ণাটক রাজ্যের চিফ মিনিস্টার বা মুখ্যমন্ত্রী বানান মাপন্ন মল্লিকার্জুন খড়গে এবং সিদ্দারামাইয়ার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ডি কে শিবাকুমারকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ডেপুটি চিফ মিনিস্টারের দায়িত্ব দেন। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান এ নেতা মোদির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যোগ্য জবাব দিয়ে চলেছেন, যা সাধারণ ভোটাররা পছন্দ করেছেন। তিনি ভারতের পাঁচটি আঞ্চলিক ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারেন। কর্ণাটকের মাটির সন্তানরূপে তিনি আঞ্চলিক সব সমস্যা ও চাহিদা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন এবং এসবের বাস্তবসম্মত সমাধানের দিশা দিয়েছিলেন। সার্বিক বিচারে প্রতীয়মান হয়, অঞ্চলভেদে মানুষের রাজনৈতিক চরিত্র ও ভোটারদের আচরণ ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কেন্দ্র বা এক অঞ্চলের মডেল অন্য অঞ্চলে কার্যকরী না হওয়ার স্বাভাবিক পরিণতিই যেন কর্ণাটকের ক্ষমতা থেকে বিজেপির বিদায়।

ক্ষমতার পটপরিবর্তন হতে চলেছে থাইল্যান্ডেও। ১৪ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দেশটির সংসদে ৫০০ আসনের মধ্যে সেনাসমর্থিত বর্তমান ক্ষমতাসীন পালাং প্রাচারাত পার্টি মাত্র ৪০টি আসন পায়। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে থাইল্যান্ড শাসন করেছে সে দেশের সামরিক জান্তা। ২৪ মার্চ ২০১৯ তারিখে কিংস পার্টির তকমা পাওয়া পালাং প্রাচারাত পার্টি ১১৬টি আসন পায়। কথিত আছে, নানাভাবে তারা কিছু ছোট দল, আঞ্চলিক দল এমনকি কিছু স্বতন্ত্র এমপিকে রাজি করিয়ে সরকার গঠন করেন। তবে এবার তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এবারের নির্বাচনে সে দেশের প্রগতিশীল দল ‘মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি’ ১৫১টি এবং ফেও থাই পার্টি ১৪১টি আসন পেয়েছে। উভয় দলের সমন্বয়ে শিগগিরই থাইল্যান্ডে নতুন সরকার গঠিত হবে বলে আভাস পাওয়া যায়। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক জেসিকা কিগান ও মার্টিন কুঞ্জে এক বিশ্লেষণে দাবি করেন, ২০১৪ সালে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ, আদালতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে বাধা এবং দেশের সাংবিধানিক প্রধান থাই রাজা (কিং)-কে দিয়ে সেনাসমর্থিত ব্যক্তিদের প্রশাসনে নিয়োগ এবং তাদের মাধ্যমে দেশ চালানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সাধারণ জনগণ। ফলে কল্পনাতীত এ ফলাফল মানতে হচ্ছে সামরিক বাহিনী ও দেশের রাজাকে। জেসিকা এবং কুঞ্জের দৃষ্টিতে থাইল্যান্ডের ৩০ লাখ নতুন ভোটার, যারা এই প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তারা দুর্নীতি, অত্যাচার, রাজনৈতিক হয়রানি ও আদালতকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং সামরিক জান্তা ও তাদের দোসরদের ‘না’ বলে দিয়েছেন। এ নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি ছিল একটি নতুন মাইলফলক। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের ৭৭টি প্রভিন্সে (রাজ্য) সুশীল সমাজ, এনজিওকর্মী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা সদা সতর্ক থেকে এবং কেন্দ্রভিত্তিক প্রাথমিক ফলাফলের সাড়ে ২৭ হাজার ছবি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যমে আগাম প্রকাশ করে নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়।

১৪ মে রাষ্ট্রপতি শাসিত তুরস্কে অনুষ্ঠিত হয় দুই পর্বের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম পর্ব। একই সঙ্গে ওইদিন দেশের জাতীয় সংসদের ৬০০ আসনের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। এ ৬০০টি আসনের মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের দল ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ ২৬৭টি আসনে জয়লাভ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটি পেয়েছিল ২৯৫ আসন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে এরদোগান ২০১৮ সালে ৫২.৫৯ শতাংশ ভোট পেলেও এবার পিপলস অ্যালায়েন্সের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রথম পর্বের নির্বাচনে পেয়েছেন ৪৯.৫০ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের কামাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৪.৮৯ শতাংশ ভোট। এর ফলে কোনো রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় সংবিধানের আলোকে দ্বিতীয় দফা ভোটের দিকে গড়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। প্রথম পর্বের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি ও তার দল জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন। তবে বহির্বিশ্বে বিশেষত মুসলিম জগতে এরদোগান নানা কারণে প্রশংসিত হলেও নিজের দেশে তিনি সমালোচিত ছিলেন। এর মধ্যে লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভয়াবহ ভূমিকম্প-পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে অনেকটা বেকায়দায় ছিলেন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগলু নির্বাচনের আগে ছয়-দলীয় বিরোধী জোটের সমর্থন আদায় করায় নির্বাচন ছিল বিগত দিনে ১২টি নির্বাচনে বিজয়ী এরদোগানের রাজনৈতিক জীবনে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। প্রথম পর্বে কাক্সিক্ষত ম্যাজিক ফিগার বা ৫০ শতাংশ ভোট না পেলেও তৃতীয় স্থানে থাকা ও ৫.১৭ শতাংশ ভোট পাওয়া রাষ্ট্রপতি প্রার্থী সিনান ওগানের সমর্থন নিয়ে ২৮ মে দ্বিতীয় পর্বে এরদোগান রাষ্ট্রপতি রূপে আরেক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেয়েছেন। এবার তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫২.১৬ শতাংশ। অন্যদিকে আগের মতো উদারতার বদলে নিজেকে কট্টরপন্থি ও জাতীয়তাবাদী প্রমাণ করার মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ে মরিয়া ছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল। দ্বিতীয় পর্বে ৮৫ শতাংশ ভোটারের দেওয়া মোট ভোটের ৪৭.৮৪ শতাংশ গেছে তার দখলে। তুরস্কের জাতীয় সংসদেও এরদোগান ও তার দল অন্যদের সমর্থন নিয়ে পাল্লা ভারী করছেন বলে খবর পাওয়া যায়। প্রথম ধাপে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও দ্বিতীয় ধাপে কাক্সিক্ষত পরিসংখ্যানসহ বিজয় নিয়ে প্রকাশ্যে আত্মবিশ্বাসী রয়েছেন এরদোগান। সরকারিভাবে তুরস্কের বিজয়ী রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের শপথ গ্রহণও শেষ হয়েছে। আর এভাবেই গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে তুরস্কে।

স্পেনে স্থানীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৮ মে। এ  নির্বাচনে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর ভরাডুবির পর আগাম জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। ২৯ মে তিনি এক ঘোষণায় বলেছেন, আগামী ২৩ জুলাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আঞ্চলিক এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বামপন্থিদের ছয়টি অঞ্চল হাতছাড়া হয়েছে। এ অঞ্চলগুলোয় সরকার গঠন করছে দেশটির রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল পিপলস পার্টি (পিপি)। বলা হয়ে থাকে, স্পেনে জাতীয় নির্বাচনে কী হতে পারে, তার আভাস পাওয়া যায় আঞ্চলিক নির্বাচনে। ফলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পেদ্রো সানচেজ। টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পেদ্রো বলেন, ‘নির্বাচনের যে ফলাফল পাওয়া গেছে, এর ভিত্তিতে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা ও সরকারের প্রধান হিসেবে আমি এই দায় নিচ্ছি।’ জনরায় মেনে তার এখনই নির্বাচন দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

পেদ্রোর রাজনৈতিক দল স্প্যানিশ সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি ২০২০ সালে বামপন্থি দল ইউনাইটেড ইউ ক্যানসহ (ইউনিদাস পোদেমস) আরও কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় এসেছিল। এটি ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে স্পেনের প্রথম জোট সরকার। এর মধ্য দিয়ে স্পেনের যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান হয়েছিল। কিন্তু এ সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করতে পারল না। তবে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশটি গণতন্ত্রের পথে আরও এগিয়ে গেল বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।

ফিরে তাকাতে চাই সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। ইসলামের ইতিহাসে ‘মরলে শহীদ-বাঁচলে গাজী’ বলে একটা কথা প্রচলিত। এ গাজী বলতে যুদ্ধফেরত বিজয়ী বীরকেই আমরা চিনি। কিন্তু এবারের গাজীপুর নির্বাচনে কে যে গাজী আর কে শহীদ-তা নিয়ে নতুন করে গবেষণা করা যেতে পারে। কারণ এ গাজীর দাবিদার হতে পারেন নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন স্বয়ং, তার নেপথ্য শক্তি ও পুত্র সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর, ক্ষমতাসীন দলের আজমত উল্লা, যিনি নৌকা ও ছদ্মবেশী কর্মীদের নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধেই লড়াই করেছেন বলে ধারণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন, যারা হঠাৎ করে খোলস ছেড়ে বের হওয়ার সাহস দেখায়, আমেরিকা, যারা নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ভিসা-সংক্রান্ত ভেলকিবাজির ঘোষণা দেয়, বিএনপি যারা ‘মাঠে না থাকিয়া প্রমাণ করিল যে তারা মাঠে আছে’, চরমোনাইয়ের অনুসারীরা, যারা নিজেদের অস্তিত্ব, শক্তি ও ভবিষ্যতে দরকষাকষির ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে, প্রশাসন, যারা কোনো দৈত্যের আদেশে যেন আদর্শ বালকের রূপ ধরেছে, সুশীল সমাজ ও মিডিয়া, যারা বৃষ্টি দেখে ছাতা মেলে ধরেছে, সর্বোপরি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড, যারা চেয়েছে গণতন্ত্রের বিজয় হোক এবং ৩০০ বড় নৌকা নিরাপদে তীরে ভিড়ার বৃহত্তর স্বার্থে গাজীপুরে হেরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

 email: [email protected]

সর্বশেষ খবর