নজর এখন লন্ডনে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা-কৌতূহল এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে। আজ ১৩ জুন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে এই ঐতিহাসিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির বরফ গলাতে এই বৈঠক কী ফলাফল বয়ে আনে এটাই সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কী কী বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে? আলোচনায় উঠে আসবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচিত সব বিষয়। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন, কোনো কিছুই বাদ যাবে না। বিচার নিয়ে মাঠের রাজনীতিতে কারও কোনো দ্বিমত নেই। এ নিয়ে লন্ডন বৈঠকে বেশি কিছু আলোচনার আছে বলে মনে হয় না। সংস্কার নিয়ে সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নানা ইস্যুতে স্পষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। বিএনপির সঙ্গেও সব বিষয়ে কমিশন একমত হতে পারেনি। আলোচনা চলছে। যেসব বিষয়ে কমিশন-বিএনপি এক জায়গায় আসতে পারেনি, এমন কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠকে আলোচনা হবে, এটা ধরে নেওয়া যায়। এই বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিছু কিছু ইস্যুতে দলের বর্তমান অবস্থান থেকে সরে আসতেই পারেন, এবং তা পারলে জাতি আনন্দচিত্তে সাধুবাদ জানাবে। লন্ডন বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ। সরকারপ্রধান সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছর এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। বিএনপি রমজান, ঈদ, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ঘোষিত সময়সীমা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। সরকারের সঙ্গে বিএনপির এ নিয়েই বিরোধ তীব্র হয়েছে। নির্বাচন ইস্যুতে সৃষ্ট এই বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর লন্ডন বৈঠক সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে, এটাই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করছেন। জামায়াত, এনসিপিসহ হাতে গোনা কয়েকটি দল বাদে অধিকাংশ দলই সরকার ঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমা মেনে নেয়নি। তারা সবাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি উপর্যুপরি জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে অনেকেই মনে করেন, দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় না থেকে একটা মাঝামাঝি পথ বেছে নিতে পারে। তারা মনে করেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে বহুল কাক্সিক্ষত একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এপ্রিলের প্রথমার্ধ আর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে সময়ের ব্যবধান মাত্র দুই মাস। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সমর্থন সহযোগিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলোও এই সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করে ফেলা সম্ভব হবে। তখন আর সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত দুই মাস সময় নিয়ে উত্তপ্ত বৈরী আবহাওয়া আর রমজানজুড়ে নির্বাচনি কর্মকাণ্ডের মধ্যে দেশকে নিয়ে যেতে হবে না। এ ক্ষেত্রে শুধু দরকার দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, আস্থার সম্পর্ক, যা সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেকবার বলেছেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেছেন, এই সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। তারেক রহমানের এ বক্তব্য মনে রেখে বিশ্বাস করতে চাই- অনুষ্ঠেয় লন্ডন বৈঠকও ব্যর্থ হবে না। এই বৈঠক ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আশা করতে চাই-এই বৈঠক দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণে গণতান্ত্রিক মানবিক নিরাপদ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতিকে পথরেখা দেখাবে।
লেখক : নব্বইয়ের ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় নেতা