স্বপ্নে প্রিয় নবী (সা.)কে দেখা খুবই সৌভাগ্যের। নবীপ্রেমিকের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ চাওয়া ও পাওয়া একটিবার প্রিয় নবী (সা.)কে স্বপ্নে দেখা। প্রিয় নবীকে স্বপ্নে দেখেছিলেন অসংখ্য সাহাবি, তাবেয়ি, তাবে তাবেয়িসহ বুজুর্গ আল্লাহর প্রিয় মাহবুব বান্দারা। ইমাম আবু হানিফাসহ চার ইমাম, আল্লামা জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভিসহ অসংখ্য ওলি আবদাল গাউস কুতুব প্রিয় নবী (সা.)কে স্বপ্নে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন বলে জানা যায়। প্রিয় নবী (সা.)কে স্বপ্নে দেখা জাগ্রত অবস্থায় দেখতে পাওয়া। এ ব্যাপারে আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায়ই দেখল।’
নবী (সা.)-এর আশেক, প্রেমিকগণ প্রিয় নবী (সা.)কে স্বপ্নে দেখবেন। নবী (সা.)-এর প্রেমিকগণ সর্বদাই নবী (সা.)কে ভালেবাসে নিজের জীবনের চেয়েও। এজন্য স্বপ্নে নবী (সা.)কে দেখতে হলে সর্বপ্রথম ইমানদার ও নবীপ্রেমিক হওয়া জরুরি। এ ছাড়াও নিজের জীবন, পরিবারপরিজন, সম্পদের চেয়েও নবী (সা.)কে ভালোবাসতে হবে। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করার মাধ্যমেও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। স্বপ্নে নবী (সা.)কে দেখতে হলে হালাল উপার্জন ও হারাম বর্জন করে অহংকার, হিংসা, গিবত, চোগলখুরিমুক্ত জীবন সাজাতে হবে। কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা ও বান্দার হক নষ্ট করা যাবে না। আদবে আউলিয়া বেয়াদবে শয়তান। সবার সঙ্গে আদব ও ভালোবাসা দিয়ে ভালো ব্যবহার করতে হবে। যাঁকে স্বপ্নে দেখার জন্য মন ব্যাকুল তাঁকে অনুসরণ করতে পারলেই খুব সহজেই স্বপ্ন দেখা সম্ভব হবে। অতএব স্বপ্নে দেখার জন্য মন ব্যাকুল ও চেষ্টা করা উচিত। রাতে ঘুমানোর আগে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে প্রিয় নবী (সা.)কে স্বপ্নে দেখার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে দরুদ ও সালাম পাঠ করে সুন্নতি তরিকায় ঘুমিয়ে গেলে ইনশাল্লাহ স্বপ্নে প্রিয় নবী (সা.) দেখা দেবেন। তাহাজ্জুদ নামাজে দোয়া করলেও প্রিয় নবী (সা.) স্বপ্নে দেখা দেবেন। স্বপ্নে দেখতে প্রিয় নবী (সা.) কেমন হবেন, কীভাবেই বুঝব প্রিয় নবী (সা.) স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজিসহ বেশ কিছু হাদিসের গ্রন্থ থেকে তাঁর দেহ মোবারক সম্পর্কে জানতে পারি, তাঁর চেহারা খুবই লাবণ্যময়, নুরানি ও পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝকঝকে। দুধে আলতা মিশ্রণ করলে যে রং হয় তেমন ছিল। খুব লম্বা ও খুব বেঁটেও না, মধ্যম আকৃতির। তাঁর আগে ও পরে কখনো তাঁর মতো সুপুরুষ দুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেনি। মাথার চুল ছিল কানের লতি পর্যন্ত কিছুটা কোঁকড়ানো, ঢেউখেলানো বাবরি। বাবরি কখনো ঘাড় পর্যন্ত আবার কানের লতি পর্যন্ত থাকত। চক্ষুযুগলের মণি খুব কালো ছিল। চোখের পাতা ছিল খুব বড় এবং সর্বদা সুরমা লাগানোর মতো দেখাত। নাক ছিল অতীব সুন্দর ও উঁচু। অতীব সুন্দর রজতশুভ্র দাঁত, যা পরস্পর একেবারে মিলিত ছিল না, বরং সামান্য ফাঁকা ফাঁকা ছিল। হাসির সময় তাঁর দাঁত মুক্তার মতো চমকাত। ঘাড় ছিল দীর্ঘ, মনোরম মাংস, কাঁধের হাড় আকারে বড়। দুই কাঁধের মধ্যস্থলে কবুতরের ডিমসদৃশ একটু উঁচু মাংসখণ্ড। এটাই মোহরে নবুয়ত। এতে লেখা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’।
লেখক : ইসলামিক গবেষক