প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাপদ্ধতিও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের জন্য শুধু বইপত্রের ওপরে নির্ভরশীল নয়; তারা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখছে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেছে। শিক্ষকরা শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুগুলোকে আরও উপভোগ্য এবং কার্যকর করতে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করছেন। ইন্টারেক্টিভ এডুকেশন প্যানেল (আইইপি) তেমনই একটি উদ্ভাবনী টুল, যা শিক্ষণপ্রক্রিয়াকে আরও আকর্ষণীয়, ফলপ্রসূ এবং উন্নত করে তুলেছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক, যেমন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তাদের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটাকে ইন্টারেক্টিভ ফ্ল্যাট প্যানেল (আইএফপি) নামেও অভিহিত করা হয়। এটি একটি টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল বিষয়বস্তুর সঙ্গে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে ক্লাসগুলো আরও প্রাণবন্ত ও ইন্টারেক্টিভ হয়, যা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির চেয়ে উন্নত এবং একটি সক্রিয় শেখার পরিবেশ তৈরি করে। ইন্টারেক্টিভ প্যানেলগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অসংখ্য আকর্ষণ সুবিধা প্রদান করে, যা ঐতিহ্যবাহী ক্লাসরুমগুলোকে গতিশীল শেখার পরিবেশে রূপান্তর করে। প্রথমত এই প্যানেলগুলো ইন্টারেক্টিভ পাঠ এবং মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে ছাত্রদের অংশগ্রহণকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। দ্বিতীয়ত শিক্ষকরা সহজেই তাদের পাঠের ভিডিও, এনিমেশন এবং ইন্টাররেক্টিভ অনুশীলনী অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, যা জটিল ধারণাগুলোকে আরও সহজে বোধগম্য এবং স্মরণীয় করে তোলে।
প্যানেলের বহুমুখিতা বিভিন্ন শিক্ষাগত উপকরণ এবং পদ্ধতির মধ্যে সহজে সুইচ (পরিবর্তন) করার সুযোগ দেয়, ফলে মূল্যবান ক্লাস সময় সাশ্রয় হয়। পারস্পরিক ব্ল্যাকবোর্ড প্রজেক্টরের বিপরীতে এই প্যানেল শিক্ষকদের ভিডিও দেখানোর সুযোগ করে দেয়, ছাত্রদের স্ক্রিনের সমস্যার সমাধান করতে দেয়। খরচ-কার্যকারিতা আরেকটি প্রধান সুবিধা, কারণ এই প্যানেলগুলো ঐতিহ্যবাহী প্রজেকশন সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টর বাল্ব প্রতিস্থাপন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন দূর করে। প্যানেলগুলোর পরিবেশগত প্রভাবও কমে, যেখানে মার্কার বা অন্যান্য খরচের উপকরণের প্রয়োজন হয় না। এমন বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে সহযোগিতামূলক শেখা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়, যা একাধিক ছাত্রকে একসঙ্গে প্যানেলে কাজ করার সুযোগ দেয়। প্যানেলের ইন্টারনেট সংযোগ শিক্ষাগত সম্পদে বাস্তব সময়ে প্রবেশাধিকার প্রদান করে এবং ভার্চুয়াল ফিল্ড ট্রিপ পরিচালনা বা বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার ক্ষমতা দেয়। শিক্ষকরা পাঠের উপকরণ ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ এবং ভাগ করার সুবিধা পান, যা প্রস্তুতির সময় কমায় এবং বিভিন্ন ক্লাসে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠ প্রদানের অনুমতি দেয়। প্যানেলের অন্তনির্মিত সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত শেখার টেমপ্লেট এবং সরঞ্জাম প্রদান করে, যা পাঠ পরিকল্পনা এবং প্রদানকে সহজ করে। এ ছাড়াও প্যানেলগুলোর দূরবর্তী শেখার সুবিধার সমর্থন ব্যাঘাতের সময় শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে, যখন এদের দৃঢতা এবং দীর্ঘায়ু বিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্থিতিশীল দীর্ঘ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ তৈরি করে।
এ ধরনের ইন্টারেক্টিভ এডুকেশন প্যানেলের আরও কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে যেমন ইন্টারেক্টিভ টাচস্ক্রিন অর্থাৎ এটি একটি উন্নত স্মার্ট বোর্ড বা ডিজিটাল টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, যা দিয়ে সরাসরি স্ক্রিনে লেখা, ছবি আঁকা এবং বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করা যায়। ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই প্যানেল ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল কন্টেন্ট যেমন ভিডিও, প্রেজেন্টেশন এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক উপকরণ সরাসরি দেখতে ও ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে। সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি- এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি সক্রিয় মিথস্ক্রিয়া তৈরি করে, যা শেখাকে আরও আকর্ষণীয় এবং সহজ করে তোলে। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি- ইন্টারেক্টিভ প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সরাসরি কন্টেন্টের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, যা একঘেয়েমি কমিয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। সহজ কন্টেন্ট শেয়ারিং- শিক্ষক দ্রুত কোনো ডকুমেন্ট, ছবি বা ভিডিও ক্লাসে শেয়ার করতে পারেন, যা ক্লাসরুমকে আরও গতিশীল করে তোলে। ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার অংশ- এটি ডিজিটাল শিক্ষা বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শেখার পদ্ধতি উন্নত করে এবং আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। দলীয় কাজ এবং কোলাবরেশন উন্নতি- ইন্টারেক্টিভ এডুকেশন প্যানেল শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়, যা তাদের দলীয় কাজ এবং একে অন্যকে সহযোগিতার দক্ষতা বাড়ায়। তারা প্যানেলের মাধ্যমে গ্রুপে কাজ করতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যতের পেশাগত জীবনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে কাজ করবে।
লেখক : অধ্যাপক আইআইটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়