করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত সারা পৃথিবী। এই সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশের বাইরে বসবাসরত অনেক তারকা বাংলাদেশসহ বিশ্বের আক্রান্ত মানুষকে সচেতন করতে নানাভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী মোনালিসা। রয়েছেন আমেরিকার কুইন্সে। করোনা নিয়ে তিনিও বেশ চিন্তিত। সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন- পান্থ আফজাল
কেমন আছেন?
এই তো আছি। খুবই আপসেট।
একটু খুলে বলবেন কী?
সার্বিক অবস্থা তো জানেনই। মানুষ মরে যাচ্ছে। আমার কিছু প্রিয় মানুষ গতকাল মারা গেছেন। বুঝছি না, কী হচ্ছে!
প্রিয় মানুষের মধ্যে কারা মারা গেছেন?
আপনি চিনবেন না। সবাই নিউইয়র্কের।
বুঝতে পারছি, করোনা প্রাদুর্ভাবে শঙ্কিত আপনি। নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে সম্প্রতি কিছু কথা লিখেছেনও...
হ্যাঁ, লিখেছি যে, দিন দিন আমাদের চারপাশটা অপরিচিত হয়ে উঠছে। এখন প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে চিন্তা করি, আমি এখনো বেঁচে আছি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই খাঁ খাঁ করে। রাস্তা শূন্য, মানুষ নেই, গাড়ি নেই, নেই সংগীত। মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। দিন দিন পৃথিবীটা যেন এক অন্য পৃথিবী, যেন এলিয়েনদের গ্রহ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্তে এসে পড়েছি, হে আল্লাহ কখন এই অবস্থা ঠিক হবে? কবে আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব? পৃথিবীর এমন অবস্থা আমি জীবনে কখনই দেখিনি। কেউ জানে না কাল কী হবে, কে আক্রান্ত হবে, কে মারা যাবে... কেউ জানে না...
নিউইয়র্কে করোনা পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?
খুবই খারাপ। আর কিছুদিন পরে কি হবে কেউ জানে না। অবস্থা আসলেই খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে। দোয়া করবেন।
নিশ্চয়ই! কিন্তু আপনার সঙ্গে আর কে কে আছেন এখন?
এসব নিয়ে এই পরিস্থিতিতে কথা বলতেও খারাপ লাগছে। আমি মেন্টালি খুবই আপসেট। মানসিক অবস্থা ভালো নেই। আমি এখানে একা।
আচ্ছা। এই পরিস্থিতিতে বাসায় কী কী করছেন?
এই তো, সাবধানে থাকছি। যা যা বলেছেন, ওইগুলো মেনে চলার চেষ্টা করছি।
কী সতর্কতা মেনে চলছেন, একটু বলবেন কী?
প্রথমত. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি। খাবারের দিকে খেয়াল রাখছি। যে খাবারগুলো এনার্জি বাড়ায় ও পুষ্টিকর, সেগুলোই খাবার চেষ্টা করছি। দিনে বেশ কয়েকবার হাত ভালো করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ক্লিন করছি। ফেসবুকে উপকারী নিউজ দেখছি, পড়ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ দেখছি। পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছি। ব্যায়াম করছি। মোটকথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। নিজেকে স্রেফ কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ দেখছি।
বাংলাদেশের মানুষের খোঁজ নিচ্ছেন। ফেসবুকে বিভিন্ন নিউজ, পরিস্থিতি শেয়ার দিচ্ছেন দেখলাম...
হুম। দেশের মানুষের থেকে অনেক দূরে আছি। তাই বলে খোঁজ না নিয়ে পারি! এই সময় সবাই খারাপ আছে। তাই প্রতিদিন করোনা নিয়ে ফেসবুকে নতুন কোনো বিষয় দেখলে শেয়ার করছি। চাই ভালো থাকুক বাংলাদেশ, ভালো থাকুক বাংলাদেশের মানুষ।
কোনো কাজে বাসা থেকে বেরই হচ্ছেন না?
আপনি বুঝছেন না। আমি এখানে একা। কেউ নেই। কোনো বিপদ হলে কেউ আসবে না।
নিউইয়র্কে তো শোবিজের অনেকেই আছেন...
সবার একই অবস্থা। কে কার বিপদে এগিয়ে আসবে বলুন!
অন্তত তাদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বললে মানসিকভাবে শান্তি পেতেন। তাই না?
হুম। যাই হোক। আপনারা সবাই ভালো ও নিরাপদে থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আশা করি, শিগগিরই আমরা সবাই এই কঠিন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসব। আর আমাকে মনে রাখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।