যে চ্যানেলের সৌজন্যে শিল্পীর এত নামযশ, সেই চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ তাদের কতটা মেনে চলতে হয়? লিখিত চুক্তি ছাড়া মৌখিক ভাবেও শিল্পীরা চুক্তিবদ্ধ থাকেন। তবে সে নিয়ন্ত্রণ কি কখনও শিল্পীর ব্যক্তিপরিসরে হস্তক্ষেপ করে?
কলকাতার ‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র ঐন্দ্রিলা সেন বললেন, চ্যানেলকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম, ব্যক্তিজীবন নিয়ে কোথায় কতটা কথা বলব তা নিয়ে ওরা কিছু বলবে না। চ্যানেল সে কথা শুনেছে।
সময় নিয়েই চ্যানেলের কাছে বেশি অভিযোগ করেন শিল্পীরা, মত মধুমিতা সরকারের। সিরিয়ালের কনট্র্যাক্টে থাকলে মনে রাখতে হবে, ঠিক সময়ে এপিসোড টেলিকাস্ট হওয়ার জন্য চ্যানেল যতটা সময় চাইবে, শিল্পীকে তা দিতে হবে। সিরিয়ালের লিড চরিত্রদের বাড়তি দায়িত্ব থাকে। তারা যদি বেশি দাবিদাওয়া করেন, তা হলে সিরিয়ালের মান পড়ে যায়। তবে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কখনও সমস্যা হয়নি।
ঐন্দ্রিলার মতে, অনেককে বলা হয়, সিরিয়ালের লুকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিতে। পুরো ব্যাপারটাই বোকা বোকা! একটা ধারাবাহিকে শাড়ি, অন্যটায় হয়তো শট প্যান্টস পরব। যাই হোক, আমার নিজের পরিচিতিটা সকলের আগে।
গাজী আব্দুন নূরের মতে, ছোট পর্দায় যেমন প্রত্যেক দিন শিল্পীদের দেখা যায়, তেমনই সহজে লোকে তাঁদের ভুলেও যায়। চরিত্রদের ঘিরে শহর-মফস্বল নির্বিশেষে মানুষের মনে আবেগ তৈরি হয়। শিল্পী হিসেবে আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সেই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। তাতে চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ থাকলে খারাপ কী!
একটি জনপ্রিয় চ্যানেলের ক্লাস্টার্ড বিজনেস হেড সম্রাট ঘোষের মতে, কোনও শিল্পীর ব্যক্তিজীবনে চ্যানেল হস্তক্ষেপ করে না। নতুনরা যখন চরিত্র হয়ে অনুষ্ঠানে যান, তাদের গাইড করার জন্য চ্যানেল নির্দেশ দেয় মাত্র।
অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত সিরিয়াল চলাকালীন একটি পত্রিকার জন্য ফটোশুট করেছিলেন। তার জন্য চ্যানেলকে জবাবদিহি করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, কনট্র্যাক্ট পেপারে লেখা অনেক কিছুরই মানে ঠিক মতো বোঝানো হয় না। আমি ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরে সব কিছু জেনে বুঝেই কনট্র্যাক্ট সই করেছি।
কলকাতার ছোট পর্দার এক সিনিয়র অভিনেত্রী বললেন, চ্যানেল ব্যক্তিজীবনেও হস্তক্ষেপ করে। তবে সিনিয়র শিল্পীদের সমস্যা হয় না। নতুনদের উপরই বেশি নজরদারি করে। চুক্তিতে থাকলে নিয়ন্ত্রণের সুযোগও বাড়ে।
নতুন শিল্পীদের চারপাশের জীবনটাই বদলে যায় একটা ধারাবাহিক হিট করলে। রাতারাতি পরিচিতি, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, শোয়ের প্রস্তাব, সবটাই চ্যানেলের কল্যাণে। আবার রুপোলি জগতের চমকে অনেক সময়ে বিভ্রান্তও হন নতুনরা। তারা যেন পথভ্রষ্ট না হন, তার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে।
অভিনেত্রী মানালি দে বললেন, আমি বাধ্য মেয়ের মতো চ্যানেলের সব কথা মেনেছি বলেই আমার সঙ্গে তাদের ঝামেলা নেই। সিরিয়াল ছেড়ে বেরিয়েও আসতে হয়নি।
টেলিভিশনের সিনিয়র শিল্পী অপরাজিতা আঢ্য বলেন, যখন সিরিয়ালে এসেছিলাম, তখন এমন ছিল না। পাঁচটা সিরিয়ালে পাঁচটা ভিন্ন চরিত্র করেছি। দিনের শেষে লোকে চিনেছে ‘অপরাজিতা’ নামেই।
(সূত্র: আনন্দবাজার)
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা