পঞ্চগড় জেলার প্রায় সব নদীই নব্যতা হারিয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে। এই সব নদীর পাড়ে প্রায় কয়েক হাজার কৃষক মরা নদীর বালুচরকে কৃষি উপযোগী করে ইরি-বোরো ধান লাগিয়েছেন।
ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২২টি নদী দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়কে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এই নদীগুলো বর্ষাকালে দুকূল প্লাবিত করে পলির সঙ্গে নিয়ে আসে নুড়িপাথর। দেশী মিঠা পানির সুস্বাদু মাছ প্রায় সারাবছরই নদীগুলোতে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পঞ্চগড়ের পরিবেশকে অত্যন্ত উপভোগ্য করে তুলেছে পাহাড় থেকে নেমে আসা এই নদীগুলো। তাই পাহাড়ের নিচে সমতল এই জেলাটি কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ পাথরে ভরা।
পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দা,ডাহুক,তিরনই,রনচণ্ডি, বেরং, জোড়াপানি, সাঁও, করতোয়া, তালমা, চাওয়াই পাঙ্গা, কুরুম, পাম, পাথরাজ, ঘোড়ামারা, মরাতিস্তা, আতরাই, নাগর, সিংগিয়া, বহু, রসেয়ার উৎসমুখ ভারতে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এইসব নদীগুলোর উৎসমুখে বাঁধ, ব্যারেজ, সুইসগেট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে তাদের সেচ ও অন্যান্য কাজে পানির চাহিদা মেটাতে নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে দিয়েছে। ফলে এই নদীগুলো প্রাকৃতিক নাব্যতা হারিয়ে প্রায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। নদীর বুকে গড়ে উঠছে মরুভূমি। নিচে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টের পশ্চিম-উত্তর কোণে ভারত মহানন্দা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করায় এ জেলার অনেক নদীই মরে যাওয়ার দিকে। এদিকে মরা নদীর বালুময় বুকে বালু কেটে আল বানিয়ে বোরো চাষ করছে পঞ্চগড়ের চাষীরা। প্রায় সবকটি নদীর জেগে উঠা বালু চরে বর্তমানে শুরু হয়েছে বোরো চাষ।
একজন চাষী জানিয়েছেন, এমন ব্যবস্থায় যে যতটুকু পারে সেভাবেই চাষ করে। তিনি বলেন, এক থেকে দেড়ফিট বালি তুলে নিয়ে আল নির্মাণ করা হয়। তারপরই পানি পাওয়া যায়। তাই আলাদা করে সেচ দিতে হয় না। তবে এই একটি আবাদ ছাড়া অন্য কিছুই করা যায় না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
অন্যদিকে, ভারত কতৃপক্ষ শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রেখে যেমন জেলার নদ-নদীগুলোকে মরা নদীতে পরিণত করছে তেমনি বর্ষা মৌসুমে বাঁধের মুখ খুলে দিয়ে বন্যায় প্লাবিত করছে বিস্তীর্ণ এলাকা। জেলার পরিবেশবাদীদের ধারণা, এ অবস্থা চলতে থাকলে পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।