অনাবাদী জমিতে আম চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকার কৃৃষকরা। জেলার ৪টি উপজেলায় আমবাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক অস্বচ্ছল পরিবার। বরেন্দ্র এলাকার শক্ত এঁটেল মাটি আম চাষের বেশ উপযোগী হওয়ার ফলে এখানে সুস্বাদু আম চাষ এবং বিশাল বাজার গড়ে ওঠার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন স্থানীয় কৃষি গবেষকরা।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, সমতল থেকে প্রায় ৩/৪ফুট উঁচু হওয়ার ফলে জেলার ৪টি উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর এবং পত্নীতলাকে বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে চিহ্ণি করা হয়েছে। ভূমির অসমতল, শক্ত এঁটেল এবং সেচ সংকট থাকার ফলে এ এলাকার হাজার হাজার একর জমি গত ৫/৬বছর আগেও স্থানীয় কৃষকের কোন কাজে আসছিল না। এসব জমির মধ্যে কিছু সেচ সুবিধার আওতায় আনা হলেও বেশির ভাগ ছিল পরিত্যক্ত। কিন্তু গত ৬/৭ বছর আগে বাণিজ্যক আকারে এখানে কিছু ব্যক্তি পরীক্ষামূলকভাবে অনাবাদী জমিতে আমের বাগান তৈরি করেন। এতে ক্ষিরসা গোপালভোগ, মোহনভোগ, নেংরা, মল্লিকা, আম্রপালী, নাকফজলী জাতের আম চাষ শুরু করেন। শক্ত এঁটেল মাটির ফলে মাত্র দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে আম গাছগুলোতে আম আসতে শুরু করে।
তবে গত তিন বছর থেকে হাড়িভাঙ্গা আম সাপাহারে ব্যাপকহারে চাষ শুরু করেছে স্থানীয় চাষীরা। মাটির গুণ অনুযায়ী এখানকার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মত সুস্বাদু। চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়ার ফলে বরেন্দ্র এলাকায় আমের বাগানগুলোতে ব্যাপক আম ধরেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা এসে এসব বাগান থেকে আম কিনছেন। মাত্র এক বিঘা পরিমাণ একটি বাগান থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করছে এখানকার আমচাষীরা। বিপুল সম্ভবনা দেখা দেয়ায় অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা বরেন্দ্র এলাকায় আম বাগান করতে এগিয়ে এসেছেন।
সাপাহারের মধইল গ্রামের আমচাষী মহিনী কান্ত জানান, তার ২০টি আমগাছে হাড়িভাঙ্গা জাতের আম ধরেছে। এতে ফলনও হয়েছে বেশ ভাল। প্রতিটি আম প্রায় দেড়শো থেকে দুশ গ্রাম ওজন হয়েছে।
পত্নীতলার শ্যামপুর গ্রামের সফল আমচাষী আলাউদ্দিন জানান, তার বসত সংলগ্ন জমিতে ২০০৩ সালে মাত্র আড়াই বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের তিনশটি আমগাছ রোপন করেন। মাত্র তিন বছর পর থেকে আম ধরা শুরু করে। চলতি বছর আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে ভাল আম হয়েছে। বর্তমানে তার ২৫৫টি আমগাছ থেকে ৩শ মন আম পাবেন বলে আশা করছেন। বেশ কয়েকজন পাইকার তার বাগানের দাম বলেছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় ৮ লাখ টাকা দাম হাঁকছেন তিনি। গেল বছর তিনি বাগানটি বিক্রি করেছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। এবার আমের ফলন ও আকার বড় হওয়ার ফলে দ্বিগুণ ফলন হয়েছে। আর এ কারণে দাম হাঁকছেন দ্বিগুণ।
এ বিষয়ে পত্নীতলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আম গবেষক ড. আবুল হায়াৎ মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, গত প্রায় এক দশক ধরে এ অঞ্চলের আম নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। বরেন্দ্র এলাকার মাটিতে এক ধরনের শুষ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে যা মিষ্টি আমের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। তিনি মনে করেন খুব দ্রুত বরেন্দ্র এলাকায় আমের বিপুল বাজার সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম নুরুজ্জামান মণ্ডল বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম চাষকে অধিক লাভজনক মনে করে এখানে এগিয়ে আসছে চাষীরা। মিষ্টি আমের জন্য এ অঞ্চলের মাটি সহায়ক। এ কারণে আমের সাইজ যেমন বড়, খেতেও সুস্বাদু। চলতি বছর জেলায় ৮ হাজার ৪শ ২৫ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠা আম বাগানের মধ্যে শুধু বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলায় আম বাগান গড়ে উঠেছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি বছর শুধু বরেন্দ্র এলাকা থেকে প্রায় শত কোটি টাকার আম বিক্রির মুনাফা পাবেন চাষীরা।