পৃথিবীর সমস্ত প্রানীকূলের বেঁচে থাকার জন্য পানি একান্ত জরুরী। পানি না থাকলে জীবের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পরবে এটা স্বাভাবিক। তাইতো পানির অপর নাম জীবন কিংবা মরন যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন পানি সত্যিই খুব দরকারী উপাদান। যেসব অঞ্চলে পানির পর্যাপ্ত উৎস আছে সেখানে পানি নিয়ে নানান রীতিও চালু আছে। কিন্তু যেখানে এক ফোটা পানিকে স্বর্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়, সেখানে আর যাই হোক পানি নিয়ে চলে না কোনো রীতি কিংবা নীতি। পানি সেখানে একান্ত প্রয়োজনীয় এবং বিলাসী উপাদান হয়ে দাড়ায়। আজ থেকে ৩০ বছর আছে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষ হয়। ভয়াবহ সেই দুর্ভিক্ষে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায় স্রেফ পানির অভাবে। এরপর থেকেই ইথিওপিয়ায় পানি মানেই চরম আরাধ্য কোনো উপাদান। একই পানি দিয়ে বহুবিধ কাজ সারতে তাই পৃথিবীর অন্য সকল দেশের মানুষের তুলনায় এগিয়ে ইথিওপিয়ার জনগণ।
দেশটির মাত্র ৫২ শতাংশ মানুষ স্বচ্ছ পানি পান করতে পারে। দশ শতাংশ মানুষের বাড়িতে পানির লাইন আছে। আর গ্রামের দিকে এর হার আরও অনেক কম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাত্র এক শতাংশ। আর দেশটির ২৪ শতাংশ মানুষ পয়নিস্কাসন সুবিধা পাচ্ছে। ইথিওপিয়া কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও পানির অভাবে দেশটির অর্থনীতি যেমন ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে তেমনি সাধারণ জনগনের জীবন যাপনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এই ধ্বংসের মুখে থাকা দেশটির উপরই বুঝি সৃষ্টিকর্তার অসীম মহিমা বারংবার ঝড়ে পরছে। তাইতো নিত্য অভাবের সঙ্গে লড়াই করলেও দেশটিতে জনসংখ্যার হার ক্রমশ বাড়ছেই।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার চরম মূল্য শোধ করতে হচ্ছে আফ্রিকার এই দেশটিকে। অথচ এই উষ্ণায়নের জন্য দেশটি মোটেও দায়ী নয়। কারণ সেখানে গড়ে ওঠেনি কোনো ভারি শিল্প-কারখানা কিংবা প্রকৃতি ধ্বংসকারী কোনো উপাদান। অথচ উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়নের খেসারত দিতে হচ্ছে দারিদ্রপীড়িত এই দেশটিকে। সরকারি এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ইথিওপিয়ার জনগণকে বিভিন্ন কায়দায় পানির সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পানির স্তর ভূভাগের অনেক নিচে চলে যাওয়ায় কাজটি সহজসাধ্য হচ্ছে না। ওদিকে উন্নত বিশ্বের বোতলজাত পানি শতগুন বেশিদামে বিক্রি হয় দেশটিতে। হাতে খরচ করার মতো ভালো অর্থ না থাকলে এক বোতল পানি সেখানে বিলাসিতার নামান্তর।