মহাকাশে নতুন এক কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পেয়েছেন ইউনির্ভাসিটি অব উতহার একদল জ্যোর্তিরবিজ্ঞানী। সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া এই গহ্বরটির আয়তন সূর্যের চেয়ে ২১ মিলিয়ন গুণ বড় বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০০৮ সালে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অতিমাত্রায় ভর বিশিষ্ট একটি কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান পান। যার ভর সূর্যের চেয়ে চার মিলিয়ন গুণ বেশি।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথম তৎকালীন মহাকর্ষের ধারণার ভিত্তিতে কৃষ্ণগহ্বরের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না।
কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হয় একটি নক্ষত্রের লাখ লাখ বছরের জীবনচক্রের সমাপ্তির ফলে, যেখানে একটি শূন্যতার বিশালতা সৃষ্টি হয়৷ কৃষ্ণগহ্বর যখন উল্টো দিকে ঘোরে তখন আর এর গহ্বর বোঝা যায় না৷
কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টির কারণ হল বিশালাকারের একটি বিস্ফোরণ। অতিকায় নান্দনিক এই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে একটি নক্ষত্র ধ্বংস হয় এবং সেটির উপাদানগুলো মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে৷ সেই মুহূর্তে অল্প সময়ের জন্য নক্ষত্রটি নীহারিকার মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷
ধ্বংসের কাছাকাছি সময়ে একটি নক্ষত্রের অভিকর্ষ বল এতোটাই বেশি হয় যে, বিস্ফোরণের পর যে উপাদানগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সেগুলো ছোট গহ্বরের সৃষ্টি করে৷ এরপর এটার কোন আয়তন থাকে না, কিন্তু অসীম ঘনত্ব থাকে, যা আলবার্ট আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়৷
কৃষ্ণগহ্বর একটি ঘন কালো রং এর বলের মত। ঘন কালো রঙের বলটির অভিকর্ষীয় ক্ষমতা এতোটাই শক্তিশালী থাকে যে, এর কাছাকাছি অবস্থানে থাকা সকল মহাকাশীয় উপাদান যেমন গ্রহ, চন্দ্র, সূর্যকে শুষে নিতে থাকে৷ এটা যতো বেশি উপাদান শুষে নিতে পারে, এর অভিকর্ষীয় ক্ষমতা ততোটাই বৃদ্ধি পায়৷ এর ফলেই আলোর ছটা প্রতিভাত হয়৷
সকল মৃত নক্ষত্র থেকে অবশ্য কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি হয় না৷ পৃথিবীর সমান আকারের ছোট নক্ষত্রগুলো সাধারণত ছায়াপথে থাকা সাদা ক্ষুদ্র তারকায় পরিণত হয়৷
কৃষ্ণগহ্বর বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে, ছোট থেকে বিশালাকারের কৃষ্ণগহ্বর। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকারের উপর ভিত্তি করে কৃষ্ণগহ্বরগুলোর মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করে থাকেন৷ আকারে ছোট কৃষ্ণগহ্বরগুলোকে বিজ্ঞানীরা স্টেলার তথা নাক্ষত্রিক কৃষ্ণগহ্বর বলে আখ্যায়িত করে থাকেন৷ আর অতিকায়গুলোকে ডাকা হয় সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর নামে৷
একটি নক্ষত্রের সমাপ্তিকালে বিস্ফোরণের মাধ্যমে যে কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি হয়, তা চুপি চুপি হারিয়ে যায়, কারণ কৃষ্ণগহ্বর খালি চোখে দেখা যায় না৷ তাদের কোন আয়তন কিংবা অবয়ব নেই৷ বরং তাদেরকে মহাশূন্যে একটি অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ তবে তাদের চারিদিকে যে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয় তার মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বর চিহ্নিত করা যায়৷