‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই!’ এটি এখন আর বলা যায় না। আপনি চাইলেই কফির রেস্তোরায় বসে আড্ডা দিতে পারেন। রাজধানীতে এমন অনেক রেস্তোরা আছে। একসময় রাজধানীতে ভালো মানের কফির রেস্তোরাঁ খুজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। টাকা দিলেও বিশ্বমানের সঙ্গে তাল রেখে কফি মিলতো খুব কমই। মানুষের রুচি আর চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে ঢাকা শহরের নানান জায়গায় গড়ে উঠেছে কফির দোকান। কফির প্রতি মানুষের ক্রমশ বাড়তি কৌতুহল বা আকর্ষণও বহু উদ্যেক্তাকে নতুন নতুন কফি শপ শুরু করার ব্যাপারে উৎসাহ যুগিয়েছে। স্বাদ ও গন্ধে মাতোয়ারা হতে যারা কফির খোঁজ করেন, রাজধানীর মানসম্পন্ন কফি হাউজ নিয়ে তাদের জন্যই এই আয়োজন।
বারিস্তা
বাড়ি এসই (এফ), ১ গুলশান অ্যাভনিউ।
সময়: সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা।
ইতালিয়ান লাভাৎজ্জা ব্র্যান্ডের বিন দিয়ে এখানে কফি প্রস্তুত করা হয়। এসপ্রেসো, কাপুচিনো, লাটে, মোকাসহ আরও নানান রকমের কফি পাওয়া যায়। ছিমছাম বসার ব্যবস্থা। দেয়ালের রংয়ের সঙ্গে আলোর ব্যবহার বেশ মানানসই। ছাত্র বা পেশাজীবি সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন-এ কথা বলাই যায়। গুলশান আউটলেটে ৩০ জনের আসন ব্যবস্থা রয়েছে। আরও শাখা রয়েছে ধানমণ্ডি , উত্তরা, কারওয়ান বাজারে।
ব্রোনিয়া ক্যাফে অ্যান্ড গ্যালারি
৬৮ গুলশান অ্যাভিনিউ।
কফি আর চিত্রকর্ম—একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা প্রথম ক্যাফে হতে পারে এটি। দেয়ালজুড়েই আছে নানা ধরনের চিত্রকর্ম। জানা গেছে, এক চিত্রশিল্পী এখানে প্রায়ই অতিথিদের জন্য ‘পোট্রেট’ করেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিনস দিয়ে বানানো হয় এখানকার কফি। এখন ব্যবহার করা হচ্ছে স্টারবাকসের কয়েকটি রোস্টিং। ক্যাপুচিনোর কাপের গন্ধের সঙ্গে কফি আর্টও মন্দ মিলবে না এখানে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ক্যাফের পাশের একটি কক্ষে একেবারেই বিনা খরচায় সিনেমা দেখারও বন্দোবস্ত রয়েছে। এরমধ্যে একদিন আবার বরাদ্দ রাখা হয় শিশুদের নিয়ে সিনেমার দেখার জন্য। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই ক্যাফেতে একসঙ্গে ৫২ জন বসতে পারবেন। আর সিনেমা দেখার অংশে রয়েছে ৪২টি চেয়ার।
বিনস অ্যান্ড অ্যারোমা
বাড়ি ৯, রোড ১৮ সেক্টর ৩।
বাইরে থেকে কাচঘেরা সামনের অংশের পেছনের দেয়ালে ঝোলানো কফির মগ আর ঝুলে থাকা ল্যাম্প শেডের হলদে বাতি বেশ চোখে পড়ে। কফি কাউন্টারটি বেশ পরিপাটি। টেবিলের ছোট একটি অংশের ডিজাইনে ‘আসল’ কফি বিনস রাখা হয়েছে।
জানা যায়, এই ক্যাফেতে শুধু ব্রাজিলে উৎপাদিত কফি ব্যবহৃত হয়। এরা বিশেষভাবে নিজেদের তত্ত্বাবধানে কফি রোস্টিং করেন আর তা ব্যবহার করা হয় তিন সপ্তাহের মধ্যে। তাদের ভাষ্য, এই সময়ের মধ্যে রোস্টেড বিনস থেকে কফি বানালে এর স্বাদ থাকে অটুট। এরপর থেকেই নাকি ধীরে ধীরে স্বাদে ভাটা পড়তে থাকে। এসপ্রেসো ১২৫ টাকা, ক্যাপুচ্চিনো ১৯৫ আর মোকা ২১৫ টাকা পড়বে। খাবারের মধ্যে স্মোকড চিকেন স্যান্ডউইচ পড়বে ৩১৫ টাকা। এই কফিশপের উপরে আছে এদের নিজস্ব পানি শোধনাগার। যাতে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ লিটার শুদ্ধ পানীয়জল পাওয়া যায়। এখানে সব মিলিয়ে বসতে পারবেন ৬০ জন। খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। আর কফির ‘মাতাল’ গন্ধে ডুবে যাওয়ার সময় যদি মন চায়, কাফকা অথবা মার্কেজ অথবা ফ্রয়েড-চিন্তা নেই তাও আছে।
কিভা হান
বাড়ি ১/এ, রোড -২৩, গুলশান-১।
সময় : সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা।
প্রচলিত ইতিহাস মতে, পৃথিবীর প্রাচীনতম কফি শপের নাম থেকে এই নাম এসেছে। যে দোকানটির শুরু হয়েছিল ১৪৭৫ সালে। এমনটাই জানান কিভা হান কফি শপের কর্ণধার সামিত বিন সালাম। ২০০৭ সাল থেকে স্বপ্ন দেখেছেন কফি ‘পাগল’ এই তরুণ উদ্যোক্তা। অবশেষে ২০১৩ সালের শেষের দিকে কিভা হানের যাত্রা শুরু হয়েছে । কফির প্রতি ভালোবাসা তার আগেই ছিল। আর কফিশপ খোলার আগে নিজেই কফি বানানোর বিদ্যা রপ্ত করতে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে।
পড়াশুনার একটি অংশ ছিল স্থাপত্যবিদ্যা। এই জ্ঞান ও চিন্তাভাবনা তিনি কিভা হানে ঢেলেছেন অকাতরে। মিশ্র ধরনের পেইন্টিং যেমন আছে তেমনি আছে পোস্টমডার্ন ঘরানায় সাজানো চেয়ার টেবিল। মাঝেমধ্যেই এখানে খাবার ও কফির উপর থাকে বিভিন্ন রকমের প্রোমোশনাল মূল্য ছাড়।
ব্রিউজ অ্যান্ড বাইটস
১১২ গুলশান অ্যাভিনিউ।
এখানে কফি বানাতে ব্যবহার করা হয় ইলি কফি বিনস। বাংলাদেশে ইলি কফির যারা বিপণন করেন তারাই খুলেছেন এই ক্যাফে। অন্দরসজ্জায় আধুনিকতার ছাপ আছে। যে পেয়ালাতে কফি দেওয়া হয় সেগুলোও ইলি প্রতিষ্ঠানেরই করা। এখানে আছে ‘এসপ্রেসো তিরামিসু’। আর এদের দাবি এই খাবার, ‘ঢাকার কোথাও পাবেন না’। হট ও কোল্ড মিলে ১৬টি ভিন্ন স্বাদের কফি আছে। ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পড়বে প্রতি কাপ কফির দাম। বসার ব্যবস্থা আছে প্রায় ৪০ জনের। একদিকে সোফায় যেমন বসতে পারবেন আবার শপের বারান্দায় পাতা টুলে বসেও কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে পারেন।
নর্থ এন্ড কফি রোস্টার্স
খ-৪৭-১ (দ্বিতীয় তলা), প্রগতি সরনি,
নতুন বাজার -গুলশান ঢাকা-১২১২।
সময়: শনি থেকে বৃহস্পতি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা।
শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১০টা।
নর্থ এন্ডের প্রথম বৈশিষ্ট হচ্ছে, কফির ‘মাতাল’ করা ঘ্রাণ টের পাবেন সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ই। দরজা খুললেই মনে হবে ‘হারিয়ে’ গেছেন কফির রাজ্যে! চোখে পড়বে কাউন্টারের পেছনে থরে থরে সাজানো আমদানি করা কফির বস্তা। ব্রাজিল, কোস্টা রিকা, ইথিওপিয়া, গুয়াতেমালা, ইন্দোনেশিয়া এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামের কফি। পুরো রেস্তোরাঁজুড়েই চোখে পড়ে কফির আবহ। হোটেল লেইক শোরেও তাদের শাখা আছে।
গ্লোরিয়া জিন'স কফিজ
বাড়ি ৩৫, গুলশান অ্যাভনিউ ঢাকা-১২১২।
সময়: সকাল ৭টা থেকে রাত ১টা।
এই কফিশপে ঢুকতেই চোখে পড়ে বেশ আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা। ছোট টেবিলের পাশাপাশি বড় টেবিলও রয়েছে। যেখানে বন্ধুরা অথবা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে কফির স্বাদে ‘হারিয়ে’ যেতে পারেন! তবে কফির কদর যারা করেন, তাদের কাছে যে ব্যাপার ভালো লাগবে তা হল চার দেয়ালে আটকে থাকা কফির মোহনীয় সুঘ্রাণ। ক্যাফের পেছনের অংশে প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে কফির স্বাদ উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। ভেতর ও বাইরে মিলিয়ে ১৫০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে।
এসপ্রেসো ১৮০ টাকা, ক্যাপুচিনো আর লাত্তে ১৭৪ টাকা। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হল 'লা মার্জোকো'র কফি মেশিন। এটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা কফি তৈরির মেশিন হিসেবে পরিচিতি বলে জানান গ্লোরিয়া জিন’সের ব্যবস্থাপক মোরশেদ এলাহী। পাস্তা ৪৯৫ টাকা থেকে ৭৯৮ টাকা পর্যন্ত। সম্প্রতি শাখা হয়েছে ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোডে।
কফি রিপাবলিক
৫৪/এ গুলশান অ্যাভনিউ।
সময়: সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা।
নিজস্ব কারখানায় রোস্ট করা কফিবিন ব্যবহার করেন বলে দাবি এদের। ১১টি ভিন্ন ধরনের বিন মিশিয়ে ব্লেন্ডিং করা হয়। হাত-পা ছড়িয়ে কফি পান সঙ্গে আড্ডা— সময় বেশ আয়েশে কাটনো যায় এখানে। যারা খেতে যাবেন তাদের জন্য একটি গিটার রাখা আছে। চাইলে বাজিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
জর্জেস ক্যাফে
ঠিকানা: বাড়ি ২, রোড ১০ উত্তরা ১ নম্বর সেক্টর।
প্রথমেই বাইরে থেকে চোখে পড়বে ক্যাফেতে ঢোকার মুখে কলাগাছ! ভেতরে ‘বিষাদময়’ কালো রংয়ের ব্যবহার বেশি! এখানে কফি মিলবে হরেক পদের। মেনুতে দেখা গেল ‘হট অ্যান্ড কোল্ড’দুই ধরনেরই কফি আছে। এসপ্রেসো ১৩০ টাকা আর মাক্কিয়াতো ১৫০ টাকা। আর আমেরিকানো পড়বে ১৬০ টাকা!
সব মিলিয়ে কফি বা কিছু স্ন্যাকসের সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় কাটানোর জন্য এই জায়গাগুলো বেশ। সময় করে চলে যেতে পারেন যে কোনদিন।