বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় পর্যটন শহর কক্সবাজারেও প্রতিবছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিবসটি উদযাপিত হয়। গত বছর বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের প্রাক্কালে সাগর সৈকতে ছিল লাখো পর্যটকের ভিড়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সাগরপাড়ে, হোটেল-মোটেলের পথে পথে, রেস্তোরাঁয়, হিমছড়ি, ইনানী বিচ, সাফারী পার্কে, সেন্টমার্ঠিনে প্রকাশ্যে ও গোপনে মিলন ঘটে পর্যটকসহ স্থানীয় প্রেমিক যুগলের। বিশেষ করে সাগরপাড়ে তিল পরিমাণ জায়গা থাকে না বিশেষ এই দিনে। তারকা হোটেল-মোটেলসহ নানাস্থানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনে থাকে ভরপুর।
তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০ দলীয় জোটের একটানা হরতাল ও অবরোধে পর্যটকের অভাবে বিশেষ এই দিনটি বিশেষভাবে উদ্যাপনের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পর্যটকদের উপস্থিতি বলতে গেলে নেই বললেই চলে। প্রায় খা খা করছে সৈকত। অবরোধ-হরতালে পর্যটন ব্যবসায়ীদের দৈনিক ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ হিসেবে অবরোধের ৩৮ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২শ' কোটি কোটি টাকা। বাধ্য হয়ে এখন অনেক হোটেল কর্মচারীকে ছুটি দিতে হয়েছে।
শুক্রবার সাগরপাড়ে বেড়াতে আসা স্থানীয় প্রেমিলযুগল মিছবাহ ও তাহমিনা জানান, প্রতি বছর লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায় সমুদ্র সৈকত। রাজনৈতিক টানাপোড়নে এবারের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। এমনিতেই শুক্রবারে সাগরপাড়ে জনসমাগম হয় বেশি। কিন্তু এখন তা নেই।
হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের জি এম মোশাররফ হোসেন জানান, ৩৮ দিনের অবরোধে কেবল আমাদের প্রতিষ্ঠানেই সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কর্মচারীদের খাবার, বেতন ও বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। তিনি আরও জানান, জেলার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ পর্যটন ব্যবসানির্ভর। পর্যটক আসলে চাল দোকানি, রিকশাচালক, শুঁটকি বিক্রেতা থেকে শুরু করে সবাই লাভবান হন। কিন্তু এখন পর্যটক নেই, এর প্রভাব প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তরুণ পর্যটকদের আগমন হয়নি। এ কারণে কক্সবাজার শহরের শতাধিক হোটেল-মোটেলের অবস্থা করুণ। পর্যটক না আসায় হোটেল-মোটেলগুলোতে দৈনিক ৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। অবরোধের ৩৮ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২শ কোটি টাকা।
ট্যুরিজম এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-এর সভাপতি এস এম কিবরিয়া জানান, নিরাপত্তাবেষ্টিত বাসেও পেট্রলবোমা হামলা হচ্ছে। ফলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তরুণ পর্যটকরা ঝুঁকি নিয়ে আসতে চাইছেন না। সৈকতের কিটকট ছাতাগুলো ‘শূন্য’ পড়ে আছে। সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্টেও একই চিত্র। যেখানে পর্যটকদের ভিড়ে হাঁটা যেত না, সেখানে ফাঁকা সৈকতে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। রেস্তোরাঁগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়।
নিরিবিলি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক জানান, রেস্তোরাঁর ৩২ কর্মচারীর বেতনসহ দৈনিক ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। দৈনন্দিন ব্যয়ও তোলা যাচ্ছে না। পর্যটক থাকলে দৈনিক ৬৫-৭০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা