অস্তিত্বের ভিত্তিই আত্মা। আর এটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভাবনার শেষ নেই। মৃত্যুর পর শরীরের বাইরে সত্যিই কি আলাদা করে কোন আত্মার অস্তিত্ব আছে? মৃত্যুর পরেও কি তা সচল থাকে?
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অবস্থায় আত্মা নাকি সচল থাকে! বিনিময় হয় পারস্পরিক অভিজ্ঞতা। আত্মা নিয়ে এমন নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে এবারই প্রথম সেই অভিজ্ঞতাকে বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে প্রশিক্ষিত নিউরো সার্জন ডা. এবেন আলেক্সান্ডার। শরীর থেকে আলাদা করে আত্মার অস্তিত্বকে এতদিন বিশ্বাস করতেন না তিনি। সংশয়বাদী অনেকের মতোই তিনি মনে করতেন আত্মার সচলতাকে মানুষের ভ্রম কিংবা কল্পনাজাত। সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃতিবাদী চিন্তাধারায়।
হঠাৎ করেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। মস্তিষ্কে ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহের কারণে হঠাৎ করেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবেন। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় তাঁর চিন্তাধারাও। সেইসময় সাতদিন হাসপাতালের কোমায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকতে হয় তাঁকে। এবেনের বিশ্বাস, কোমায় থাকা অবস্থায় এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াত তাঁর আত্মা। তিনি দাবি করেন, আত্মার এ চলাফেরায় কখনো মিলত স্বর্গীয় অনুভূতি আবার কখনো তার বিপরীত। অর্থাৎ ভালো কিংবা খারাপ সর্বত্রই ছিল আত্মার গতিবিধি।
সুস্থ হবার পর নিজের সে অভিজ্ঞতা নিয়ে এবেন লিখে ফেলেন ‘প্রুফ অব হ্যাভেন’ নামের বই। এতে তিনি দাবি করেন, মূলত আত্মাকে প্রসারিত আর বিকশিত করার পরীক্ষার নামই আমাদের জীবন। আর কেবল ভালোবাসা আর সমবেদনার মধ্য দিয়েই সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। তাঁর মতে, মানুষের শরীরের নিষ্ক্রিয়তা আর আত্মার সচলতাপূর্ণ অবস্থা এতটাই বাস্তব আর স্বতঃস্ফুর্ত যে সেসময় মানবজাতি হিসেবে পৃথিবীতে নিজেদের উপস্থিতিকে মিথ্যে স্বপ্ন বলে মনে হয়।
পারজাগতিক সময়ের যোগাযোগকে টেলিপ্যাথিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবেন। তিনি জানান, ওই সময় যোগাযোগের কোন ভাষা থাকে না, নিজের এবং পরিপার্শ্বের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকে না। সেসময় মনে কোন প্রশ্ন তৈরি হলে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে তার উত্তর মিলে যায়। তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এ সময়ে বিশুদ্ধ প্রেমের এতটাই বিস্তার ঘটে যে শয়তানরা তখন দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে জানার জন্য তাই প্রেমের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবেন। তিনি আরও বলেন, পারজাগতিক সে সময় মানুষের জন্য অনেক নিরাপদ। আর তার সবকিছুরই ভিত্তি নিঃশর্ত প্রেম। তবে ব্যাকটেরিয়ার প্রদাহজনিত কারণে এবেনের মস্তিষ্ক ওই সময় নিষ্ক্রিয় ছিল বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেসময়কার অনুভূতির কারণ সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা দেননি তারা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৩ মার্চ, ২০১৫/ রোকেয়া।